আওয়ার ইসলাম: সীমান্তে ফেলানী হত্যার ৯ বছর পূর্ণ হলো আজ। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কুড়িগ্রামের অনন্তপুর-দিনহাটা সীমান্তের খিতাবেরকুঠি এলাকায় ০৭ জানুয়ারি ২০১১ সালের এই দিনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর সদস্যরা ফেলানী খাতুন নামের এক কিশোরীকে গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখে।
বিএসএফ ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের জওয়ানদের এই ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়। ফেলানীর লাশ পাঁচ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে ছিল। ৯ বছর ক্ষুব্ধ ও হতাশ হলেও বিচারের আশা ছাড়েননি ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম। কোনো একদিন মেয়ের হত্যার কাঙ্ক্ষিত বিচার মিলবে এ অপেক্ষায় দিন গুনছেন তারা।
ফেলানী হত্যার ৯ম মৃত্যুবার্ষিকীর হতাশা প্রকাশ করে তার বাবা ও মায়ের বলেন, নয় বছর খুব কম সময় নয়। এই দীর্ঘ সময়ে ফেলানী হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ বহুজনের কাছে গেছি, ভারতের আদালতে স্বাক্ষী দিছি। চোখের সামনে কাঁটাতারের বেড়ায় পাখির মতো গুলি করে মারা হয় ফেলানীকে। কিন্তু সেই হত্যার ৯ বছর গেলেও বিচার পাওয়া গেলো না। এটা যে কতো বড় কষ্টের, কতো বড় বেদনার! মেয়ের হত্যার বিচারের আশায় এখনও অপেক্ষায় আছি।
ফেলানী হত্যা মামলার বাদী বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবি সমিতির নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সালমা আলী সাংবাদিকদের জানান, ফেলানীর পরিবার ক্ষতিপূরণসহ স্বচ্ছ বিচার না পাওয়ায় ওই মামলার একজন বাদী হিসেবে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আশা করছি আমরা কাঙ্ক্ষিত বিচার পাবো।
নাগরিক পরিষদ পক্ষ থেকে গুলশান-২ এ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পার্ক রোড অথবা কূটনৈতিক এলাকায় ১টি রাস্তার নাম ফেলানী সরণি করার জন্য তারা সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্বব্যাপী ফেলানী দিবস পালনের দাবিতে নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীনের সভাপতিত্বে তোপখানা রোডের নির্মলসেন মিলনায়তনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
তাদের দাবি, বিশ্বব্যাপী সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও ৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস পালনের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর ২০১৫ সালে একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। ফেলানী হত্যাকারী বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ফাঁসি, ফেলানীর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান, কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তের নাম ফেলানী সীমান্ত নামকরণ ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহার জেলার বিএসএফ’র ১৮১ সদর দফতরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। ৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। রায় প্রত্যাখ্যান করে ১১ সেপ্টেম্বর ফেলানীর বাবা ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে সে দেশের সরকারকে ন্যায়বিচারের আশায় চিঠি দেন।
২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনরায় বিচার শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে তা একাধিকবার স্থগিত হয়। ২০১৫ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ আরও একটি ক্ষতিপূরণ মামলা করে। ৩১ আগস্ট ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সেদেশের সরকারকে ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লাখ রুপি দেয়ার অনুরোধ করেন।
এর জবাবে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামকে দায়ী করে বক্তব্য দেন। পরে ২০১৬ এবং ১৭ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য থাকলেও শুনানি হয়নি আজও।
-ওএএফ