বেলায়েত হুসাইন ♦
মদিনা মুনাওয়ারায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে রয়েছে আটটি স্তম্ভ। যেগুলো দেখতে খুবই চমৎকার এবং সুন্দর।
প্রতিটি স্তম্ভের গায়ে সবুজ প্লেটে সোনালি অক্ষরে তার নাম লেখা আছে। শাসক, সময় ও প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন হলেও স্তম্ভগুলোর নাম পরিবর্তন হয়নি। মূলত রাসুলুল্লাহ সা.-এর সময়কাল থেকে পরবর্তী নানা ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এসব স্তম্ভ।
রাসুলুল্লাহ সা. যখন মসজিদে নববি নির্মাণ করেন, তখন এই আটটি স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছিল খেজুর গাছের গুঁড়ি দিয়ে। পরবর্তীতে এগুলো নির্মাণে পাথর ব্যবহার করা হয়। আর এখন সেগুলোর শোভা বর্ধনে ব্যবহৃত হয়েছে মূল্যবান মার্বেল পাথর। আওয়ার ইসলাম পাঠকদের জন্য নিম্নে আটটি স্তম্ভের পরিচয় ও অবস্থান তুলে ধরা হলো।
১. আয়েশা রা. স্তম্ভ
আয়েশা স্তম্ভ একই সঙ্গে একটি খুঁটি এবং মিম্বর। রওজায়ে আতহার এবং কিবলার দিক থেকে এটি তৃতীয় স্তম্ভ। মুহাজির সাহাবারা এখানে জমায়েত হতেন। সিরাতবিষয়ক গ্রন্থগুলো থেকে জানা যায়, কিবলা পরিবর্তনের পর মহানবী সা. এখানে নামাজ পড়তেন। আবু বকর, ওমর এবং ইবনে জোবায়ের রা. এখানে নফল আদায় করতেন।
২. মুখাল্লাকা স্তম্ভ
রাসুল সা. যেসব স্থানে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তেন মুখাল্লাকাও তার একটি। সাহাবায়েকেরাম রা. নামাজে দাঁড়ালে তাঁদের কাতার এখানে এসে মিলে যেত। সালামা ইবনে আকওয়ার বর্ণনা মতে, মুখাল্লাকা মহানবী সা.-এর মেহরাবের অন্তর্ভুক্ত। বর্ণনানুযায়ী রাসুল সা. এখানে নফল নামাজ আদায় করতেন।
৩. সিয়ার স্তম্ভ
সিয়ার মসজিদে নববির পঞ্চম স্তম্ভ। রওজায়ে আতহারের জানালার পাশে অবস্থিত। এর পূর্ব দিকেই আত তাওবা স্তম্ভ। এখানে রাসুল সা.-এর বিছানা মোবারক রাখা হতো।
৪. আত তাওবা স্তম্ভ
আত তাওবা মিম্বরের দিক থেকে চতুর্থ, রওজায়ে আতহারের দিক থেকে দ্বিতীয় ও কিবলার দিক থেকে তৃতীয় স্তম্ভ। এটিকে আবু লুবাবা স্তম্ভও বলা হয়।
বনু কুরাইজার যুদ্ধে আবু লুবাবা রা. রাসুল সা. এর কথার বিপরীত কাজ করার পর যখন অনুতপ্ত হন, তখন তিনি নিজেকে এই স্তম্ভের সঙ্গে বেঁধে রেখেছিলেন। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, এটি তাবুক যুদ্ধের ঘটনা।
হাদিস বর্ণনাকারীরা বলেন, আবু লুবাবা রা. নিজের ব্যাপারে এই শপথ করেছিলেন যে যতক্ষণ রাসুল সা. নিজ হাতে তাঁর হাতের বাঁধন খুলে না দেবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি নিজেকে মুক্ত করবেন না। অতঃপর পবিত্র কোরআনে আবু লুবাবা রা.-এর তওবা কবুল হওয়ার ঘোষণা আসে এবং তাঁর হাতের গিঁট খুলে দেওয়া হয়।
৫. আল-হিরস স্তম্ভ
মসজিদে নববির উত্তর দিকে অবস্থিত। আত তাওবা স্তম্ভের পেছন দিকটায়। স্তম্ভটি আলী ইবনে আবি তালিব রা.-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বাবুর রাসুল সা.-এর সন্নিকটে আল-হিরসের অবস্থান। এখানে দাঁড়িয়ে আলী রা. মসজিদে নববি ও মহানবী সা.-এর ঘর পাহারা দিতেন। হিরস অর্থ পাহারা দেওয়া।
৬ আল-উফুদ স্তম্ভ
স্তম্ভটিও মসজিদে নববির উত্তর দিকে অবস্থিত। আল-হিরস স্তম্ভের পেছনে এর অবস্থান। উফুদ অর্থ প্রতিনিধিদলগুলো। বিভিন্ন আরব প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মহানবী সা. এখানে সাক্ষাৎ করতেন। পরবর্তীকালে সাহাবারাও মহানবী সা.-এর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য এখানে সমবেত হতেন।
৭. তাহাজ্জুদ স্তম্ভ
এই স্তম্ভ মসজিদের উত্তর দিকের হুজরায়ে ফাতেমার বিপরীতে অবস্থিত। এর ভেতরেই মিহরাবের অবস্থান। স্তম্ভটির বামে রয়েছে বাবে উসমান; এটি বাবে জিবরিল নামেও পরিচিত। মহানবী সা. এখান থেকে ছোট একটি চাটাই নিয়ে বাইতে আলীর পেছনে বিছাতেন এবং নামাজ আদায় করতেন।
এখানে মাঝে মাঝে তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। একজন সাহাবি নবী সা.-কে এখানে তাহাজ্জুদরত দেখে তিনিও সেখানে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন এবং সাহাবায়েকেরামদের জড়ো করেন। মুসল্লির সংখ্যা যখন অনেক বৃদ্ধি পায়, তখন আরো চাটাই নিয়ে আসতে বলা হলো। অতঃপর মসজিদের ভেতর পর্যন্ত চাটাই বিছানো হয় এবং পরবর্তীকালে জায়গাটি মসজিদের অন্তর্ভুক্ত হয়।
৮. মাকামে জিবরিল স্তম্ভ
মসজিদে নববির উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত স্তম্ভটির নাম মাকামে জিবরিল। এটি দিয়ারে হুজরায় বানানো হয়েছে। বাবে ফাতেমা এবং মাকামে জিবরিলের অবস্থান পাশাপাশি।
সূত্র : আল আরাবিয়া
-এটি