আওয়ার ইসলাম: শনিবার (১০ আগস্ট) পবিত্র কাবায় নতুন গিলাফ পরানো হয়েছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এবার ফজরের নামাজের আগে কাবার গিলাফ পরানো হলো। এর আগে আরাফাতের দিন সকালে কাবা শরিফে নতুন গিলাফ পরানো হতো। এবার এর ব্যতিক্রম হলো।
হজ মৌসুম এলে কাবার গিলাফকে নীচ থেকে ভাঁজ করে অনেকটা ওপরে তোলে গুটিয়ে রাখা হয় এবং ভাঁজকৃত গিলাফকে সাদা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়। ফলে সারা বছর কালো গিলাফে আচ্ছাদিত গিলাফ দেখা গেলেও হজের সময় দেখা যায়, কাবা ঘরের খালি কিছু অংশ এবং কিছু অংশ সাদা কাপড়ে ঢাকা। আজ থেকে সেটাও আর দেখা যাবে না। বদলে ফেলা হলো কাবার গিলাফ।
পবিত্র মক্কা-মদিনার গভর্নর শাইখ আব্দুর রহমান আস সুদাইসির উপস্থিতিতে প্রায় ১৬ হাজার কর্মকর্তা কাবার গিলাফ পরিবর্তনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শাইখ আব্দুর রহমান আস সুদাইসি আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে বলেন, আল্লাহ আমাদের দেশকে হাজিদের সেবা করার সুযোগ প্রদান করেছেন। আমরা তার শুকরিয়া আদায় করছি।
হজের দিন হাজিরা সব আরাফাতের ময়দানে থাকেন এবং মসজিদে হারামে মুসল্লিদের ভিড়ও থাকে কম। হজপালনকারীরা মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাত থেকে ফিরে এসে কাবা শরিফের গায়ে নতুন গিলাফ দেখতে পাবেন।
পুরাতন গিলাফ কেটে প্রতিটি দেশের সরকার প্রধানকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। মূলত কাবা শরিফের গিলাফ তৈরি হয় মক্কার উম্মুদ জুদ নামক এলাকায় বিশেষ কারখানায়। গিলাফ পরিবর্তনের কাজে মসজিদুল হেরামের দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক নেতৃত্ব দেন। এ দিন সৌদি বাদশার প্রতিনিধিসহ দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
কাবা শরিফের দরজা ও বাইরের গিলাফ দুটোই মজবুত রেশমি কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। গিলাফের মোট পাঁচটি টুকরো বানানো হয়। চারটি টুকরো চারদিকে এবং পঞ্চম টুকরোটি দরজায় লাগানো হয়। টুকরোগুলো পরস্পর সেলাই যুক্ত। কাবা শরিফের গিলাফের জন্য প্রয়োজন হয় ৬৭০ কেজি রেশমি কাপড়, ১২০ কেজি স্বর্ণ ও ১০০ কেজি রুপা।
৪৭ থান রেশমের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় এই গিলাফ। এর মোট আয়তন ৬৫৮ বর্গমিটার। প্রতিটি থান এক মিটার লম্বা ও ৯৫ সেন্টিমিটার চওড়া। এগুলো পরস্পরের সঙ্গে সেলাই করা। প্রতি বছর দুটি করে (একটি সতর্কতামূলক) গিলাফ তৈরি করা হয়। একটি হাতে বানাতে সময় লাগে ৯ মাস। অন্যটি মেশিনে মাত্র এক মাসে তৈরি করা হয়।
কাবা ঘরের গিলাফ তৈরির কারখানা বাদশাহ আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স মক্কা নগরীর উম্মুদ জুদ এলাকায় অবস্থিত। কিসওয়া তৈরির কারখানাটি ছয়টি অংশে বিভক্ত। এগুলো বেল্ট, হস্তশিল্প, যান্ত্রিক, ছাপা, রং ও অভ্যন্তরীণ পর্দা বিভাগ। কাবা কিসওয়া তৈরিতে বর্তমানে দুই কোটি ২০ লাখ সৌদি রিয়াল বা ৫৮ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় হয়। প্রতি বছর দীর্ঘ নয় মাস ধরে গিলাফ তৈরির কাজে ২৪০ জনের বেশি ক্যালিওগ্রাফার নিয়োজিত আছেন।
পবিত্র কাবা সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন
আরিএম/