বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

শিক্ষককে ফাঁসাতে মাদরাসা ছাত্রকে বলাৎকার ও গলাকেটে হত্যা করে সহপাঠীরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: শিক্ষকদের ফাঁসাতে চুয়াডাঙ্গায় মাদরাসাছাত্র আবির হুসাইনকে বলাৎকার ও মাথা কেটে হত্যার করে তার সহপাঠীরা। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আনিসুজ্জামান (১৮), ছালিমির হোসেন (১৭) ও আবু হানিফ রাতুল (১৬) সোমবার রাতে চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

জবানবন্দিতে তারা উল্লেখ করেছে, ক্রমাগত নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে মাদ্রাসার শিক্ষকদের ফাঁসাতে আবিরকে তারা বলাৎকারের পর গলা কেটে হত্যা করে।

প্রসঙ্গত, ২৪ জুলাই চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের নুরানি হাফিজিয়া মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আবির হুসাইনের মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করা হয়। মাদরাসার অদূরে একটি আমবাগান থেকে তার লাশপড়ে থাকতে দেখা যায়।

ঘটনার দুদিন পর মাদরাসার কাছে একটি পুকুর থেকে নিহত ছাত্রের মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ মাদরাসার পাঁচ শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।

পুলিশের অনুসন্ধানে উঠে এল আসল রহস্য

আবির হত্যার ঘটনায় মাদরাসার মুহতামিম আবু হানিফ ও শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফকে আলোচিত এ মামলায় গ্রেফতার দেখায়। আবু হানিফকে ‘জামায়াত কর্মী’ উল্লেখ করে পুলিশ। গত ৩০ জুলাই তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এতে হত্যার নতুন ক্লু পায় বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল খালেক জানান, রোববার রাতে মাদরাসার ছাত্র সদর উপজেলার হানুড়বাড়াদী গ্রামের আনিসুজ্জামান, টেইপুর গ্রামের ছালিমির হোসেন, আকুন্দবাড়িয়া গ্রামের আবু হানিফ রাতুল, আব্দুর নুর ও বলদিয়া গ্রামের মুনায়েম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তিনজন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে আবির হুসাইনকে হত্যার কথা স্বীকার করে বলে জানান তিনি।

পুলিশ সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গ্রেফাতারকৃতদ পাঁচ মাদরাসার ছাত্রকে চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করেন। এ সময় আনিসুজ্জামান, ছালিমির হোসেন ও আবু হানিফ রাতুল আদালতের বিচারক সাজেদুর রহমানের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

যেভাবে হত্যাকান্ড ঘটায় আসামীরা 

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামীরা উল্লেখ করেন, দীর্ঘদিন ধরে মাদরাসার শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফ ছাত্রদের ওপর নির্যাতন চালাতো। মারধরসহ ছাত্রদের দিয়ে শরীর ম্যাসেজসহ বলাৎকার করতো। ঠিকমতো খেতে দিতো না।

তারা বলে, এসব বিষয়ে আমরা (মাদরাসার ছাত্ররা) প্রতিবাদ করলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়ানো হতো। বিষয়টি নিয়ে আমরা পাঁচজন শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফকে হত্যার পরিকল্পনা করি। পরে সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আমরা মাদরাসার ছাত্র আবির হুসাইনকে হত্যার পরিকল্পনা করি। কারণ আবিরকে গ্রাম থেকে তামিম বিন ইউসুফ স্যারই মাদরাসায় নিয়ে আসে।

তারা জবানবন্দিতে আরো বলে, ২৩ জুলাই রাত ৮টার দিকে আমরা পাঁচজন মিলে আবিরকে গল্প করতে করতে মাদরাসার পাশে আমবাগানে নিয়ে যাই। এরপর আনিসুজ্জামানসহ আমরা তিনজন তাকে বলাৎকার করি।

পরে তাকে শ্বাসরোধে করে হত্যা করি। হত্যার পর গুজব ছড়াতে আবিরের মাথা শরীর থেকে কেটে বিচ্ছিন্ন করে ছালিমির হোসেন। পরে মাথাটি পাশের পুকুরে ফেলে দিই। এরপর আমরা মাদরাসায় ফিরে যাই।

আদালতের বিচারক হত্যার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ শেষে তাদের জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ