রকিব মুহাম্মদ
আওয়ার ইসলাম
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোসহ দেশটির অন্তত ছয়টি স্থানে তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৯০ জনে দাঁড়িয়েছে। হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৪৫০ জন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশটির স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৮ টা ৪৫ নাগাদ খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে উদযাপনকালে কোচকিকাদে, কাতুয়াপিটিয়া ও বাট্টিকালোয়া নামক স্থানের তিনটি গির্জায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। প্রায় একই সময়ে দেশটির রাজধানীর অভিজাত তিনটি হোটেল সাংগ্রি লা, দ্য কিন্নামোন এবং কিংসবারিতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
সাতজন আত্মঘাতী বোমারু শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির ফরেনসিক বিভাগের একজন কর্মকর্তা।
একটি বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, “শ্রীলঙ্কায় ছয়টি গির্জা ও হোটেলে যে ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা পরিচালনা করেছে ৭ জন আত্মঘাতী বোমারু।”
বোমা হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে কারা হামলা চালিয়েছে তা এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি দেশটির সরকার।
কোনো সংগঠনের তরফ থেকেই এখনও পর্যন্ত হামলার দায় স্বীকার করা হয়নি। দেশটির দুই নিষিদ্ধ সংগঠন আইএসআইএস ও এলটিটিইকে প্রাইম সাসপেক্ট মনে করে, ঘটনাপ্রবাহ পরপর সাজিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
ডেইলি মিররের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিক তদন্ত থেকে জানা গেছে, ২০ এপ্রিল ওই হোটেলের ৬১৬ নাম্বার কক্ষে যে দুজন ছিলেন তারা চরমপন্থার সঙ্গে যুক্ত।
হোটেলের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে ৬১৬ নাম্বার কক্ষে থাকা সন্দেহভাজন ওই দুই ব্যক্তি হোটেলের ক্যাফেটেরিয়া ও করিডরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটনা। এরপর আর তাদের হোটেলে দেখা যায়নি।
সূত্রের বরাত দিয়ে ডেইলি মিরর বলছে, অভিযুক্ত দুই হামলাকারী হোটেলেরে যে কক্ষটিতে ছিলেন সেটি ভাঙার পর তদন্তকর্মকর্তারা সেখানে চরমপন্থীদের ব্যবহৃত কিছু উপাদান খুঁজে পেয়েছেন।
তবে শ্রীলঙ্কার পুলিশ প্রধান হামলার ১০ দিন আগে যে সতর্কবার্তা পাঠান তাতে দেশটির একটি জঙ্গি সংগঠনের নাম উল্লেখ করা হয়।
শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল তওহীদ জামায়াত নামের একটি দলের ওপর 'ফোকাস' করে এ তদন্ত চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তওহীদ জামাত দেশটির এমন একটি ছোট্ট দল যাদের সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তারা ইসলামের নামে সন্ত্রাসী মতাদর্শ প্রচার করে থাকে।
২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ মূর্তি ভাঙ্গার সঙ্গে ন্যাশনাল তওহীদ জামায়াতের নাম জড়িয়ে ছিল। দলটির সেক্রেটারি আবদুল রাজিককে বর্ণবাদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তাতা করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, সাম্প্রতিক কালে বিশ্বের তাবড় তাবড় নাশকতায় নাম জড়িয়ে যাওয়া জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট বা আইএসআইএস-কেও, কলম্বোর ধারাবাহিক বিস্ফোরণে সন্দেহের বাইরে রাখছেন না গোয়েন্দারা।
তবে হামলায় জড়িত সন্দেহে আটক আটজনের সবাই শ্রীলঙ্কার নাগরিক বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহ। তবে তাদের সঙ্গে বিদেশের কারও যোগাযোগ আছে কি-না এখন সেটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সূত্র: ডেইলি মিরর, বিবিসি।
আরএম/