আওয়ার ইসলাম: প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রাবেয়া এবং তার পরিবারের সদস্যদকে কুপিয়েছেন পাষণ্ড শিক্ষক রাকিবুল ইসলাম মিঠু বিশ্বাস।
গত ১৫ মার্চ নড়াইলের সদর থানার সিঙ্গিয়া গ্রামে রাবেয়ার বাড়িতে গিয়ে তাদের তিনজনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন রাবেয়ার শিক্ষক।
৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী রাবেয়া খাতুন ( ১৩) এখন হাসপাতালে বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তার ডান হাত ও ডান পায়ের রগ কেটে ফেলেছে শিক্ষক। পাশেই বিছানায় যন্ত্রণায় ছটফট করছেন রাবেয়ার দাদি। তাকেও একইভাবে কুপিয়েছেন ওই শিক্ষক। তারপাশেই গলা ও হাতের কাটা অংশ নিয়ে যন্ত্রণায় চিৎকার করছে সাত বছরের শিশু। শিক্ষকের নির্মমতা থেকে বাদ পড়েনি সেও।
রাবেয়া খাতুন, তার দাদি জাহানারা বেগম ও পাশের বাড়ির শিশু হেনা এখন ভর্তি রয়েছে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল)। তাদের তিনজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জামিল।
জানা যায়, হামলার দিন পাষণ্ড শিক্ষক মিঠু বিশ্বাস হাতে চাপাতি নিয়ে সন্ধ্যা সময় হাজির হন রাবেয়া খাতুনের বাড়িতে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রাবেয়ার ডান পা ও ডান হাতের রগ কেটে দেন। এই শিক্ষকের কাছ থেকে রক্ষা পাননি রাবেয়ার ঘরে থাকা সাত বছরের শিশু হেনা, তার হাতে ও গলায় চাপাতি দিয়ে কোপায় মিঠু।
তাদের বাঁচাতে গেলে রাবেয়ার দাদি জাহানারা বেগমের হাতেও চাপাতির কোপ দেন ওই শিক্ষক। চাপাতির কোপে রাবেয়ার দাদির ডান হাতের কঞ্জি শরীর থেকে আলাদা হয়ে যায়। আর বাম হাতের কঞ্জিও চাপাতির কোপে ছিঁড়ে অনেকাংশে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ভয়ানক এই ঘটনা সম্পর্কে রাবেয়ার বাবা রবিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, মিঠু বিশ্বাস নামের ওই কোচিং সেন্টারের শিক্ষকের বাড়ি তাদের একই গ্রামে। তাই ছোট বেলা থেকেই দুই পরিবারের লোকজনের মধ্যে জানাশোনা ছিল।
মিঠু বিশ্বাস স্থানীয় নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের স্নাতকের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’ কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করতেন। এলাকায় প্রাইভেট শিক্ষক হিসেবেও তার বেশ সুনাম আছে।
তিনি আরও জানান, রাবেয়াকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করানোর পর মিঠু বিশ্বাসের কাছে প্রাইভেট পড়তে পাঠায় তার পরিবার। গত জানুয়ারিতে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন মিঠু বিশ্বাস। ওই ব্যাচে রাবেয়ার সঙ্গে আরও অনেকই মিঠু বিশ্বাসের কাছে প্রাইভেট পড়ত।
কিন্তু প্রাইভেট পড়া শুরু করার এক মাসের মধ্যেই রাবেয়াকে নানাভাবে কৌশলে প্রেমের প্রস্তাব দিতে শুরু করেন মিঠু। রাবেয়া বিষয়টি তার পরিবারের সদস্যদের জানায়। এমন ঘটনা জানার পর মিঠু বিশ্বাসের কাছে প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করে দেয় রাবেয়ার পরিবারের সদস্যরা।
তবে এতে থেমে থাকেননি মিঠু বিশ্বাস। তিনি নানাভাবে রাবেয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা অব্যহত রাখেন। রাবেয়ার সঙ্গে নানা কৌশলে প্রমের সম্পর্ক গড়তে গিয়ে ব্যর্থ হন মিঠু বিশ্বাস। পরে তার পরিবারের সদস্যদের গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাবেয়াকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান মিঠু। ওই প্রস্তাব সরাসরি নাকোচ করেনি রাবেয়ার পরিবার।
এর প্রতিশোধ নিতে এমনটি করেছে শিক্ষক মিঠু বিশ্বাস। নারকীয় এই ঘটনার পর মিঠু বিশ্বাস এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ওই দিন রাতেই নড়াইল সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে রাবেয়ার দাদা আলেক বিশ্বাস। মামলায় মিঠু বিশ্বাসসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নড়াইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসু আলম জানান, ‘মামলার পরে আমরা মিঠু বিশ্বাসের বড় ভাই, যিনি মামলার দুই নাম্বার আসামি-তাকে গ্রেপ্তার করি।
এর পরে আজ মিঠু বিশ্বাসসহ বাকি তিন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে চারজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’
আরএম/