আওয়ার ইসলাম: জরুরি প্রয়োজনে 'লাখে দৈনিক সুদ এক হাজার টাকা' শর্তে টাকা নিয়ে দেনার জালে জড়িয়ে পড়েছে ধান্যহাটি গ্রামের অন্তত ২০টি পরিবার।
রবিবার (১৩ জানুয়ারি) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে গ্রামের বেশ কয়েকজন নারী পুরুষ ঋণগ্রহীতা 'মহাজনের চাপে বাড়িতে টিকতে না পারার অভিযোগ করেছেন।
ঋণগ্রহীতাদের মহাজন নাজমা বেগম ও তার স্বামী আব্দুর রশিদের দাপটের মুখে স্কুল-কলেজেও পাঠাতে পারছেন না ছেলে মেয়েদের।
স্বাক্ষরিত সাদা স্ট্যাম্পে তাদের জমি লিখে নিয়েছে নাজমা-রশিদ দম্পতি। টাকা আদায়ে মাছের ঘেরও লুট করে নিয়েছে তারা। এখন আইনি নোটিশ দিয়ে ঋণ গ্রহীতাদের পিছু নিয়েছে এই দম্পতি।
ঋণ গ্রহীতাদের একজন আশাশুনির লতিকা সরকার। মহাজনের দাবি তার কাছে এখনও পাওনা সাত লাখ ৪০ হাজার টাকা। একইভাবে শর্তে নিয়েছিলেন স্কুল শিক্ষক তাপস চক্রবর্তী। ঋণ শোধের পরও মহাজন তার উপর চাপিয়ে দিয়েছেন বাড়তি ২৪ লাখ টাকার দেনা।
ওই গ্রামের কুন্দুড়িয়া হাইস্কুলের শিক্ষক তাপস চক্রবর্তী জানান, 'নিজের কিডনি জটিলতা এবং মেয়ের অসুস্থতার কারণে টাকার প্রয়োজনে গ্রাম্য মহাজন নাজমা বেগমের কাছ থেকে শতকরা মাসিক ১০ টাকা সুদে সাড়ে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম ২০১০ সালে।
পর্যায়ক্রমে শোধ করেছি সাত লাখ ৬০ হাজার টাকা। প্রতি লাখে একটি করে খালি চেক এবং নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প স্বাক্ষর করে দিয়েছি মহাজনের কাছে। মহাজন নাজমা বেগম এখন এই খালি চেকে ২৪ লাখ টাকা বসিয়ে আমার উপর চাপ দিচ্ছেন। হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, 'কোথায় পাবো ২৪ লাখ টাকা'।
ওই গ্রামের আরেক মহিলা জানান, দ’টি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেছিলাম নাজমা বেগমের কাছ থেকে। দৈনিক এক হাজার টাকা শর্তে ৭৬ হাজার টাকা সুদ দিয়েছি ৭৬ দিনে। ঋণের বিপরীতে কয়েক বছরে তিনি সাড়ে ৬ লাখ টাকা পরিশোধও করেছি। এখন নাজমা বেগমের দাবি, আমাকে আরও সাত লাখ ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে'।
এই নিয়ে পারিবারিক অশান্তির জেরে ওই মহিলা বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তিনি জানান, 'আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন নাজমা।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের জানান, 'নিরীহ ও দরিদ্র এসব পরিবারের উপর নাজমা ও রশিদ দম্পতির মহাজনী নির্যাতন চরমে উঠেছে। মহাজনরা তাদের গরু ছাগল ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এমনকি তাদের ছেলেমেয়েদের ধরে নিয়ে টাকা উশুল করে নেবেন বলে হুমকি দিয়েছে'।
এ ব্যাপারে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, 'নাজমা বেগমের মহাজনী দাপট চরমে ওঠায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিয়ে আমি বৈঠক করেছি। উভয়পক্ষকে কিছুটা শর্ত দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার পরামর্শও দিয়েছি।
এ ঘটনার পর থেকে মহাজন নাজমা বেগম গা ঢাকা দিয়েছে। আমরা তাকে খুঁজে পাচ্ছি না'।
তিনি আরও বলেন, 'ঋণগ্রহীতা পরিবারের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে'।
আইএ