মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
প্রাবন্ধিক
মুসলমানদের কিবলা পবিত্র কাবাঘর। এ কাবা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের এক অপূর্ব নিদর্শন। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলার নির্দেশে ফিরিশতাগণ কাবাঘর নির্মাণ করেন। পবিত্র কুরআন মাজিদে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে- "নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর। যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়।" (সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং- ৯৬)।
এরপর হজরত আদম আ. আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আদেশে কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করেন। এরপর হজরত শিষ আ.কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করেন। এরপর হজরত ইবরাহিম আ. স্বীয় পুত্র হজরত ইসমাইল আ.-কে সাথে নিয়ে কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করেন।
পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে- "আর স্মরণ করো, যখন ইবরাহিম ও ইসমাইল কাবা গৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিলো। তখন তারা দোয়া করে বলেছিলো- হে আমাদের রব! আমাদের থেকে এ খিদমত কবুল করে নাও। নিশ্চয়ই তুমি সবকিছু শ্রবণকারী, সবকিছু জ্ঞাত।" (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত নং- ১২৭)। এরপরেও বিভিন্ন সময়ে মহিমান্বিত এ ঘরের সংস্কার কাজ সাধিত হয়েছে।
পবিত্র কাবা মুসলমানদের ইবাদত ও সামাজিক জীবনের প্রাণকেন্দ্র। মুসলমানগণ কাবামুখি হয়ে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। আর জিলহজ মাসে বিশ্বের নানা প্রান্তের লাখ লাখ মুসলমান কাবাকে ঘিরে গড়ে তোলেন ঐক্য ও ভালোবাসার মিলনমেলা।
কাবাঘর এমন এক স্থান, যার চারদিকে প্রদক্ষিণ করেছেন পৃথিবীতে আগমনকারী প্রায় সব নবি-রাসূল। এ পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নবি-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁদের সঠিক সংখ্যা কেউ জানেনা। এক লাখ চব্বিশ হাজার বা দুই লাখ চব্বিশ হাজারে নবি-রাসূলের সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়।
এ ব্যাপারে বিজ্ঞ আলিমগণের অভিমত হলো- আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রেরিত রাসূল এবং নবিগণের নির্দিষ্ট সংখ্যা সর্বসম্মতভাবে প্রমাণিত নয়।আল্লাহ তাআলা যতো নবি প্রেরণ করেছেন, অনির্দিষ্টভাবে তাঁদের সকলের উপর ইমান আনা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক।
এ সকল নবি ও রাসূল পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় আগমন করেছিলেন। তবুও মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কয়েকজন ব্যতিত সব নবি-রাসূলকে পবিত্র কাবাঘরে হজ পালন করার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। কয়েকজন নবি অন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকায় হজ করতে পারেননি।
এ প্রসঙ্গে সাহাবি হজরত উরওয়া ইবনে জুবায়ের রা.-এর বর্ণনাটি উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন- "সকল নবিই হজ পালন করেছিলেন। তবে হজরত হুদ আ. ও হজরত সালেহ আ.-এর বিষয়টি ব্যতিক্রম। স্বীয় উম্মতের ব্যস্ত থাকা অবস্থায় তাঁদের ইন্তিকাল হয়। হজরত নুহ (আ.) হজ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সময়কালের প্লাবনে পবিত্র কাবা আক্রান্ত হয়।
হজরত ইবরাহিম আ. পরবর্তীতে এ ঘরের পুনঃনির্মাণ করলে পরবর্তী সব নবি-রাসূল কাবাঘরের হজ করেছিলেন।" (বায়হাকি)। এছাড়াও সাহাবি হজরত আবু মুসা আল আশয়ারি রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসও প্রণিধানযোগ্য।
তিনি বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- "৭০ জন নবি 'রাওহা' (মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী একটি অঞ্চল) অতিক্রম করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে হজরত মুসা আ.ও ছিলেন। এ নবিগণ খালি পায়ে ও আবায়া পরে আল্লাহ তাআলার প্রাচীন ঘরের (পবিত্র কাবাঘর) দিকে গমন করেছিলেন।" (আত তারগিব ওয়াত তারহিব)।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক
আরও পড়ুন : জাপানে তৈরি হচ্ছে ব্যতিক্রমী ‘মোবাইল মসজিদ’