সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সৌদির সেবা কোম্পানির সঙ্গে হজ এজেন্সির চুক্তির নির্দেশনা মহেশখালী থানার বিশেষ অভিযানে পরোয়ানাভুক্ত ১১ জন আসামি গ্রেফতার বৃষ্টির সময় কাবা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় ওমরা পালনকারীদের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট গ্রাহকদের মূলধন ফেরত পাওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন মাওলানা আতহার আলীকে বাদ দিয়ে জাতীয় ইতিহাস রচিত হতে পারে না: ধর্ম উপদেষ্টা জরুরি সভা ডাকল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কক্সবাজারে উৎসবমুখর পরিবেশে রোপা আমন ধান কাটা শুরু চাঁদপুর হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহর সাফল্য বগুড়ায় আন্দোলনে নিহত রিপনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত

পীর মুরিদির সুলুক সন্ধান : কাকে বানাবেন আপনার পীর?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নজমুল ইসলাম কাসিমী: পীর। ফার্সি শব্দ। আরবিতে এটাকে বলা হয় মুরশিদ। অর্থ হল-পথপ্রদর্শক। অর্থাৎ যিনি আল্লাহর আদেশ নিষেধ এবং আল্লাহর পছন্দনীয় পন্থায় চলার পথ নির্দেশ করেন। এমনিভাবে মুরিদ শব্দটিও আরবি। অর্থ হল- ইচ্ছাপোষণকারী। অর্থাৎ যে ব্যক্তি  আল্লাহর আদেশ নিষেধ এবং আল্লাহ তাআলা যেভাবে চান সেভাবে তার আদেশ-নিষেধ পালন করার ইচ্ছা পোষণ করে কোনো হক্কানি বুজুর্গ ব্যক্তির হাত ধরে শপথ করেন।

উপর্যুক্ত ব্যাখ্যা থেকে একথা স্পষ্ট হলো, পীর হবেন শরীয়তের আদেশ নিষেধ পালন করার প্রশিক্ষণদাতা। আর যিনি সে প্রশিক্ষণ নিতে চান তার নাম 'মুরিদ'।যে ব্যক্তি নিজেই শরীয়তের বিধান অমান্য করে, নামাজ পড়ে না, পর্দা করে না, সতর ঢেকে রাখে না বা শরিয়তের আবশ্যকীয় কোনো বিধি-বিধানই পালন করে না, সে ব্যক্তি কিছুতেই পীর বা মুরশিদ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।

কারণ স্পষ্ট, যার নিজের মাঝেই শরিয়ত নেই, সে কিভাবে অন্যকে শরিয়তের উপর আমল করার প্রশিক্ষণ দেবে বা দেয়ার অধিকার রাখবে। মূলত সে নিজেই প্রশিক্ষিত নয়।

লক্ষণীয়, পীর মুরিদির এ পদ্ধতি রাসুল সা. থেকেই চলে আসছে। রাসুল সা. সাহাবাদের আল্লাহমুখী হওয়ার প্রশিক্ষণ দিতেন। সাহাবারা রাসুল সা.-এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতেন। বলা যায়, রাসুল সা. হলেন সবচেয়ে প্রথম ও বড় পীর আর সাহাবায়ে কিরাম হলেন প্রথম মুরিদ।

বর্ণিত হয়েছে, হে মুমিনরা! আল্লাহকে ভয় করো, আর সৎকর্মপরায়নশীলদের সাথে থাকো। (সুরা তাওবা-১১৯)

উপর্যুক্ত আয়াতে সুষ্পষ্টভাবে বজুুর্গদের সাহচর্যে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপর আয়াতে এসেছে, যাদের উপর আল্লাহ তাআলা নিয়ামত দিয়েছেন, তারা হলো নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহিদগণ, ও নেককার বান্দাগণ। (সূরা নিসা-৬৯)

এসব আয়াত একথাই প্রমাণ করছে যে, নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দা হলেন নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, আর নেককারগণ, আর তাদের পথই সরল সঠিক তথা সিরাতে মুস্তাকিম। অর্থাৎ তাদের অনুসরণ করলেই সিরাতে মুস্তাকিমের উপর চলা হবে।

হাদিসে পাকে এসেছে, রাসুল সা. বলেন, সৎসঙ্গ আর অসৎ সঙ্গের উদাহরণ হচ্ছে মেশক বহনকারী আর আগুনের পাত্রে ফুঁকদানকারীর মতো। মেশক বহনকারী হয় তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তুমি নিজে কিছু কিনবে। আর যে ব্যক্তি আগুনের পাত্রে ফুঁক দেয় সে হয়তো তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দিবে, অথবা ধোঁয়ার গন্ধ ছাড়া তুমি আর কিছুই পাবে না। (বুখারী, হাদীস নং-৫২১৪, সহিহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৮৬০, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩১৯০, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৮৩১, সহীহ ইবনে হিব্বান)

কিন্তু দু:খজনক হলো, আজ সেই পীর মুরিদির ক্ষেত্রেও বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ির শেষ নেই। এ ব্যাপারে ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দের শায়খুল হাদিস মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী দা.বা. আমাদের দাওরায়ে হাদিস জামাতে বুখারি শরিফ পাঠদানের সময় এক আলোচনার সূত্র ধরে এক পর্যায়ে বলেন, আজকের পীর মুরিদির অবস্থা খুবই নাজেহাল। এক বাক্যে বলা যেতে পারে, সামপ্রতিক পীর মুরিদি মানেই হলো দোকানদারি।

আজকাল পীর মুরিদির নামে চলছে সর্বত্র রমরমা  বিজনেস। সত্যিকারার্থে পীর বা বুজুর্গ পাওয়া আজকাল খুবই দুষ্কর বিষয়। জান্নাতে যাওয়ার কখনো কারো জন্য কারো মুরিদ হওয়া শর্ত নয়। তবে হ্যা,  জান্নাতের উঁচু মর্যাদার অধিকারী হতে হলে অবশ্যই কোনো না কোনো খাঁটি আল্লাহর ওলির কাছে মুরিদ হওয়া যেতে পারে।

কিন্তু এখনকার কথিত সুন্নি,  বেরলভি  এবং বেদাতিদের মতে 'যেকোনো পীরের কাছে মুরিদ হওয়া ফরজ। যার পীর নেই তার পীর হলো শয়তান'। তাদের এরকম ভ্রান্ত মতবাদের কোনো ভিত্তি নেই। এসব কথা মনগড়া বৈ কিছুই না। কারণ, কয়েকজন সাহাবায়ে কেরাম ছাড়া সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম রা. রাসূল সা.-এর কাছে বাই'আতে সুলুক হননি।

আবার কথিত আহলে হাদিস লা-মাযহাবিদের মতে  'ইসলামে পীর- মুরিদির কোনো অস্তিত্ব নেই'। এটাও সম্পুর্ণরূপে সঠিক নয়। কারণ, কিছু সংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম রা. রাসূল সা.- এর হাতে বায়আত হয়েছেন। সেটা কুরআন- হাদিস দ্বারা অবশ্যই প্রমাণিত।

তাই এক্ষেত্রে  আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এবং ওলামায়ে দেওবন্দের অভিমত হলো, মুরিদ হওয়া ওয়াজিব (অত্যাবশ্যক)  নয় বরং বড়জোর সুন্নতে মুস্তাহাব্বাহ্। যেমন ওলামায়ে দেওবন্দের আরো কিছু উক্তি বলছি, হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি রহ. বলেন, কারো কাছে বায়'আত হওয়া সুন্নাত, (মুস্তাহাব) ওয়াজিব নয়। (কিফায়াতুল মুফতি: খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৮০)

মাওলানা মুফতি রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি রহ. বলেন, মুরিদ হওয়া ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব। (ফাতাওয়া রশিদিয়া-পৃষ্ঠা ২০২)

মুফতিয়ে আযম মাওলানা কিফায়তুল্লাহ রহ. বলেন, প্রচলিত ধারায় কোনো শায়খদের কাছে বায়'আত হওয়া আবশ্যক নয়, বড়জোর মুস্তাহাব। (কিফায়াতুল মুফতি: খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৮৫)

লেখক
মুফতি ও মুদাররিস,
মারকাযুত তাকওয়া ইসকামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ