রকিব মুহাম্মদ
আওয়ার ইসলাম
বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সেতুবন্ধনের উপায় হলো হজ পালন করা। যাদের আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্য রয়েছে, হজ তাদের জন্য ফরজ ইবাদত। হজের আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা করা, সফর, ভ্রমণ করা। ইসলামি পরিভাষায় হজ হলো নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত স্থানে বিশেষ কিছু কর্ম সম্পাদন করা। হজের নির্দিষ্ট সময় হলো আশহুরে হুরুম বা হারাম মাসগুলো তথা শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ; বিশেষত ৮ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত ৫ দিন।
হজের নির্ধারিত স্থান : মক্কা শরিফে কাবা, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা ইত্যাদি এবং মদিনা শরিফে রাসুল সা.-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা। হজের বিশেষ আমল বা কর্মকাণ্ড হলো: ইহরাম, তাওয়াফ ও সাই, অকুফে আরাফা, অকুফে মুজদালিফা, অকুফে মিনা, দম ও কোরবানি, হলক ও কছর এবং জিয়ারতে মদিনা-রওজাতুন রাসুল সা. ইত্যাদি। আফাকি তথা দূরবর্তী হাজিদের জন্য মদিনা মুনাওয়ারায় রাসুল সা.-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা ওয়াজিব। (আসান ফিকাহ, ইউসুফ ইসলাহি, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৫১)।
হজের প্রকারভেদ : হজ তিন প্রকার। যথা: ইফরাদ, কিরান ও তামাত্তু। শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পন্ন করলে একে ‘ইফরাদ হজ’ বা একক হজ বলা হয়। হজ ও ওমরাহর জন্য একত্রে ইহরামের নিয়ত করে একই ইহরামে তা সম্পন্ন করলে তাকে ‘কিরান হজ’ বা যৌথ হজ বলা হয়। একই সফরে প্রথমে ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে, তা সম্পন্নপূর্বক হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পাদন করাকে ‘তামাত্তু হজ’ বা সুবিধাজনক হজ বলা হয়।
ইহরাম: হজের ধর্মীয় আচার শুরু হয় ইহরামের মাধ্যমে। ইহরাম শব্দটি হারাম থেকে এসেছে; যার অর্থ কোনো কিছু নিষিদ্ধ করে নেয়া। হজ ও উমরাহ পালনকারী ব্যক্তি ইহরামের মাধ্যমে নিজের ওপর স্ত্রী সহবাস, মাথার চুল, হাতের নখ, গোঁফ, বগল ও নাভির নিচের ক্ষৌর কর্যাদি, সুগন্ধি ব্যবহার, সেলাই করা পোশাক পরিধান এবং শিকার করাসহ কিছু বিষয়কে হারাম করে নেয়।
মিনার উদ্দেশে যাত্রা : ইহরামের পর হজ পালনকারীরা মক্কা থেকে মিনার দিকে যাত্রা শুরু করেন। মক্কা থেকে মিনার দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। হজ পালনকারীদের জন্য মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। পরবর্তী দিন না আসা পর্যন্ত মিনাতে অবস্থান করতে হয়। মিনাতে হজ পালনকারীরা অধিকাংশ সময় নামাজ আদায় ও মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে স্মরণ করেন।
আরাফাতে অবস্থান : হজ পালনকারীদের জন্য আরাফাতে অবস্থান ফরজ কাজ। হজের আনুষ্ঠানিকতার জন্য মিনা থেকে ১৪.৪ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের উদ্দেশে যাত্রা করতে হয়। মূলত ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজ। এসময় আরাফাতের ময়দান হজ পালনকারীদের কণ্ঠে ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়াননিমাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাকা’ ধ্বনিতে মুখরিত থাকে।
মুযদালিফাহতে পাথর সংগ্রহ : ৯ জিলহজ সন্ধ্যায় আরাফাত থেকে মুযদালিফায় রওয়ানা করেন হজব্রত পালনকারীরা। সেখানে তারা রাত্রিযাপন করেন। মিনার শয়তানকে পাথর ছুড়ে মারার জন্য মুযদালিফাহ থেকে পাথর সংগ্রহ করতে হয়।
পাথর ছুড়ে মারা: শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারা হজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ১০ জিলহজে শুধু বড় জামরায় (শয়তান) পাথর নিক্ষেপ এবং ১১ ও ১২ জিলহজে ছোট, মধ্যম ও বড় এই তিন জামরাতেই (শয়তানকে) পাথর মারা ওয়াজিব। ১০ জিলহজে সারাবিশ্বে ঈদুল-আজহা পালিত হয়। শয়তানকে পাথর ছুড়ে মারার এ কাজ মূলত প্রতীকি।
মিনাতে শেষ দিন : মিনাতে শেষ দিনেও শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেন হজব্রত পালনকারীরা। এদিন তারা শয়তানের প্রতি সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করতে হয়। মিনাতে অবস্থান করতে হয় ২ থেকে ৩ দিন । মিনাতে অবস্থানের সময় শেষ হলে আবার মক্কার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করতে হয়। মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে হজ পালনকারীরা চূড়ান্ত তাওয়াফ করেন।
আরএম/