আওয়ার ইসলাম ঃ রমযান অতিবাহিত হয়ে গেলেও মুমিনদের জন্য মৃত্যু অবধি আমলের ধারাবাহিকতা ছিন্ন হবে না। প্রথমত: রমযানের রোযা শেষ হলেও অবশিষ্ট মাসগুলিতে বহু নফল রোযা রয়েছে, যার ফযিলত অনেক। আজ আমরা এমন ৬টি উপায় জানব, যার মাধ্যমে রমযানের পরও আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা সম্ভব হবে—
১. রোযা দিয়ে আমল ধরে রাখা:
ক. শাওয়াল মাসের ছয় রোযা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من صام رمضان ثم أتبعه بست من شوال كان كصيام الدهر
‘যে ব্যক্তি রমযান মাসের রোযা রাখার পর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা মিলিয়ে নিল তার পুরা বছরের রোযা রাখার সমতুল্য হলো।’ (মুসলিম)
কেন না সাওবান (রা.) হতে মারফু হিসেবে বর্ণিত হয়েছে, রমযান মাসের রোযা ১০ মাসের তুল্য আর শাওয়ালের ছয় দিনের রোযা দুই মাসের সমান। এভাবেই পূর্ণ হয় বছরের রোযা। (ইবনে খুজাইমা ও ইবনে হিব্বান আর ইবনে জারুল্লাহর রিসালাহ রমাযান হতে গৃহীত)
আর প্রত্যেক আমলের নেকি ১০ গুণ বৃদ্ধি পায়, অতএব রমাযান মাসের রোযা তিনশ’ দিনের সমান এবং শাওয়ালের ছয়টি রোযা ৬০ দিনের সমান। অতএব সর্বমোট ৩৬০ দিন আর হিজরি বছর হয় ৩৬০ দিনে।
খ. প্রতি চন্দ্র মাসের তিন রোযা: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতি মাসের তিন দিন এবং এক রমযান হতে অন্য রমযানের রোযা পূর্ণ বছর রোযা রাখার সমতুল্য।’ (মুসলিম)
আর এ রোযা প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রাখা উত্তম, যা অন্য হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত।
গ. সপ্তাহের বৃহস্পতি ও সোমবারের রোযা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সোম ও বৃহস্পতিবার আমলনামা আল্লাহর নিকট পেশ হয়।
সুতরাং আমি পছন্দ করি আমার আমল পেশ হচ্ছে এমতাবস্থায় যে আমি রোযাদার।’ (তিরমিযী)
ঘ. আরাফা দিনের রোযা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরাফা দিনের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘এই রোযা বিগত বছর ও আগামী বছরের (ছোট গুণাহের) কাফফারা হয়।’ (মুসলিম)
ঙ. আশুরার রোযা: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আশুরার রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘বিগত বছরের (ছোট) গুণাহের কাফফারা।’ (মুসলিম)
চ. শাবান মাসের রোযা: শাবান মাসও একটি ফযিলতপূর্ণ মাস। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযানের পর এ মাসেই সবচেয়ে বেশি রোযা রাখতেন। তাই আমাদেরও উচিত এ মাসে বেশি বেশি রোযা রাখা।
২. রমাযানের তারাবির নামায শেষ। তবে এই নামায তথা কিয়ামুল লাইল তাহাজ্জুদ হিসেবে সারা বছর পড়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ফরয ব্যতীত সর্বোত্তম নামায হলো রাতের তাহাজ্জুদ নামায।’ (মুসলিম)
৩: যোহরের পূর্বে চার রাকাত পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পর দুই রাকাত, এশার পর দুই রাকাত এবং ফজরের পূর্বের দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আদায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফরয ছাড়াও ১২ রাকাত দিবা-রাত্রিতে সুন্নাত আদায় করল, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন।’ (মুসলিম)
৪. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এরশাদকৃত নামাযের পরে ও সকাল-সন্ধ্যার মাসনুন দু’আ ও যিকির।
৫. সাদাকাতুল ফিতর শেষ হলেও সারা বছর সাধারণ দান-সদকা করা যায়।
৬. কুরআন তেলাওয়াতের ফযিলত সব সময়ের জন্য; শুধু রমযানের জন্য নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যারা কুরআন হতে একটি অক্ষর পড়ল তার জন্য একটি নেকি, আর একটি নেকি ১০ গুণে বর্ধিত হয়। আমি বলি না যে, ‘আলিফ লাম মিম’ মাত্র একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর ও মিম একটি অক্ষর।’ (তিরমিযী)
তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমরা কুরআন পাঠ কর, কেন না তা কিয়ামতের দিন পাঠকারীর জন্য শাফায়াতকারী হিসেবে আসবে।’ (মুসলিম)
প্রিয় পাঠক, এভাবে সব সময়ের জন্য সারা বছর নেকআমলের দ্বার উন্মুক্ত রয়েছে। অতএব আপনি যথাযথ প্রচেষ্টা চালু রাখুন। অলসতা বর্জন করুন। যদি সুন্নত নফলে আপনার দুর্বলতা থাকেও তথাপি কোনোক্রমেই যেন ফরয আদায়ে ত্রুটি না হয়ে যায়। যেমন: পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সঙ্গে আদায় করা ইত্যাদি।
পরিশেষে, মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের সঠিক বিশ্বাস ও নেকআমলের ওপর সুদৃঢ় রাখেন এবং এমন অবস্থায় মৃত্যু দান করেন যখন তিনি আমাদের উপর সন্তুষ্ট। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।