আবদুল্লাহ তামিম: কোটা বাতিল নয়, কোটা সংস্কারের ৫ দফা দাবিতে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।
রোববার থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে রাজপথ অবরোধের আন্দোলনে নেমেছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার আন্দোলন পরিষদের ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো-কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ না দেয়া, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ না দেয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাট মার্কস ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধায় নিয়োগ প্রদান করা।
পাঁচ দফা দাবিতে পূর্বঘোষিত কোনো কর্মসূচি না থাকলেও বাংলাদেশ সাধারন ছাত্র অধিকার আন্দোলন পরিষদের নেতারা রোববার রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড়সহ দেশের বিভিন্ন রাস্তা অবরোধ করে।
বিশেষ করে শাহবাগের মতো ব্যস্ততম এলাকায় রাস্তা অবরোধের প্রভাব শুধু শাহবাগ বা এর আশপাশেই নয়, গোটা রাজধানীতে পড়ে। বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যার পর পুলিশ টিয়ারসেল, কাঁদানি গ্যাস ছুঁড়ে ও লাঠিপেটা করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার আন্দোলন পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক আতাউল্ল্যাহ জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, আজ (রোববার) বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত তারা দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় বসে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও পুলিশ আন্দোলন ঠেকাতে টিয়ারসেল, কাঁদানি গ্যাস ছুঁড়ে ও লাঠিপেটা করে আন্দোলনকারীদের শাহবাগ ত্যাগ করতে বাধ্য করে। তারা ন্যায্য দাবি আদায়ে অনড় থাকবেন বলে জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে প্রচলিত বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে মোট জনসংখ্যার এক দশমিক ২ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য শতকরা ৫ ভাগ, এক দশমিক ৪০ শতাংশ প্রতিবন্ধীর জন্য এক ভাগ, দশমিক ১৩ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পোষ্যদের জন্য শতকরা ৩০ ভাগ অর্থাৎ মাত্র ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ নাগরিকের জন্য রয়েছে ৩৬ শতাংশ কোটা।
এছাড়া জেলা কোটা ১০ শতাংশ এবং নারী কোটা ১০ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট কোটা ৫৬ শতাংশ। দেশের লাখ লাখ সাধারণ চাকরি প্রত্যাশিদের জন্য রয়েছে মাত্র ৪৪ শতাংশ।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তৃতীয় ও তার নিচের পদবির পদগুলোতে কোটা বৈষম্য আরও ভয়াবহ। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে শতকরা ৭০ শতাংশ কোটা। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০ শতাংশ, নারী কোটায় ১৫ শতাংশ, উপজাতি ৫ শতাংশ, আনসার ও ভিডিপিতে ১০ শতাংশ ও প্রতিবন্ধী কোটায় ১০শতাংশ।
এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ৯৬ শতাংশ, রেলওয়েতে ৮২ শতাংশ কোটায় নিয়োগ দেয়া হয়। রেলওয়েতে ৪০ শতাংশ পোষ্য কোটার নজীরবিহীন বৈষম্য রয়েছে। অবশিষ্ট ৬০ শতাংশের মধ্যে নারী ১০ শতাংশ,মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১০ শতাংশ, উপজাতি ১০ শতাংশ এবং আনসার ভিডিপি ১০ শতাংশ কোটা নির্ধারিত।
এছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারী, ২০ শতাংশ পুরুষ এবং ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা।এই আনুপাতিক হারের ভিত্তিতে বাংলাদেশ কোটা বিধির অন্যান্য কোটা যেমন মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ, উপজাতি ৫ শতাংশ, আনসার ভিডিপি ১০ শতাংশ ও প্রতিবন্ধী ১০ শতাংশকে নারী ও পুরষভেদে বন্টন করা হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি নিয়োগে কোটায় সংরক্ষিত পদসমূহ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সে পদগুলো শূন্য থেকে যাচ্ছে। বর্তমানে চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের বয়সসীমা ৩০ বছর হলেও নির্দিষ্ট কিছু কোটাধারী প্রার্থীদের জন্য ৩২ বছর। যার ফলে সাধারণ চাকরি প্রত্যাশিরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছেন।
এছাড়া কোটা প্রার্থীরা কোটার সুবিধা ভোগ করে বার বার চাকরি বদল করে শূন্য পদের সৃষ্টি করছে। এর ফলে বৈষ্যমের শিকার হচ্ছেন সাধারণ প্রার্থীরা।