গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যাওয়ার ৫৮ দিন পর গতকাল জেল থেকে বেরিয়ে মুক্ত বাতাসের গন্ধ পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া । নেত্রীর অসুস্থতার দাবি তুলে দলের নেতাকর্মীরা সরব হলে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পাঠানো হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। ২ ঘন্টার মধ্যে হাত-পা ও কোমরে এক্স-রে এবং রক্ত পরীক্ষা সেরে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের মধ্যেই তাকে কারাগারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
রবিবার খালেদা জিয়ার এ স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট আসবে বলে জানিয়েছেন বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ-আল-হারুন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য চিকিৎসক দল তার স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দেন। এ দলে বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরামর্শকও ছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে হাসপাতালে আনার খবর ছড়িয়ে পড়লে গতকাল ভোর ৫টা থেকেই বিএসএমএমই ’র আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।।
বেগম জিয়া হাসপাতালে পৌঁছার অনেক আগে থেকেই শাহবাগ এলাকায় দর্শনার্থীদের ভীড় জমে যায়। ভীড় ও বিশৃঙ্খলা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।
পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার এক পর্যায়ে ১৩ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।অবশ্য খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যায়।
খালেদা জিয়া এক ঘণ্টার বেশি সময় ৫১২ নম্বর কেবিনে অবস্থান করেন এবং তার পছন্দের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা শেষে বেলা ১২টা ৪৩ মিনিটে নিচে নেমে আসেন। এর পর তিনি হেঁটে পার্শ¦বর্তী ভবনের নিচতলায় রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে যান এবং মেডিক্যাল বোর্ডের দেওয়া এক্সরে সম্পন্ন করান।
রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার হাড়ের কয়েকটি এক্সরে করা হয়। দুপুর ১টা ৩৪ মিনিটে খালেদা জিয়াকে ডিএমপির একটি কালো জিপে তুলে ফের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়িতে ওঠার আগে সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। এ সময় খালেদা জিয়াকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়।
খালেদা জিয়াকে দেখতে বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে কেবিন ব্লকের সামনে হাজির হন মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। পুলিশ তাকে কেবিন ব্লকে প্রবেশ করতে না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে বের করে দেন। বেলা ১২টা ৫৫ মিনিটে বিএসএমএমইউতে আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিচতলায় ডা. মিল্টন হলে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ-আল-হারুন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার এক্সরে করতে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার একাধিক এক্সরে করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) রিপোর্ট পাওয়া যাবে। রিপোর্ট হাতে পেলে আমরা তা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেব।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে ৫১২ নম্বর কেবিনে নেওয়া হয়। তিনি এ সময় তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করেন। তার চিকিৎসকরা কথা বলেছেন। এক্সরে করার সময়ও তারা উপস্থিত ছিলেন।
আবদুল্লাহ-আল-হারুন বলেন, কেবিনে যাওয়ার পর তিনি কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। এর পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে নিয়ে তার হাড়ের বিভিন্ন অংশের একাধিক এক্সরে করা হয়। এক্সরে ছাড়া অন্য কোনো পরীক্ষা করা হয়নি।
হেলথ টেস্ট সেরেই কারাগারে খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়া পুরোপুরি সুস্থ আছেন কিনা এমন প্রশ্নে পরিচালক বলেন, তিনি সুস্থ নেই এটা বলা যাবে না। আমরা আপাতদৃষ্টিতে তাকে ভালোই দেখেছি। তিনি হেঁটে এক্সরে করতে গিয়েছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট আসার পর তার সুস্থতার বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে। এক্সরের রিপোর্ট আগামীকাল (আজ) কারা কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হবে। তারা সেই রিপোর্ট মেডিক্যাল টিমের কাছে পাঠাবেন। মেডিক্যাল টিম বলবেন তিনি সুস্থ না অসুস্থ।
খালেদা জিয়ার অন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা কোথায় হবে জানতে চাইলে কারা চিকিৎসক ডা. মাহমুদুল হাসান শুভ আমাদের সময়কে বলেন, তার শুধু এক্সরে বিএসএমএমইউতে নিয়ে করানো হয়েছে। মেডিক্যাল বোর্ডের দেওয়া অন্য টেস্টগুলোর নমুনা কারাগারে থাকা অবস্থায়ই নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. ফাওয়াজ হোসেন শুভ আমাদের সময়কে বলেন, ম্যাডামের ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের ডাকা হয়েছিল। কিন্তু ক্লিনিক্যালি তাদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি বা তাদের দিয়ে বোর্ডও গঠন করা হয়নি।
খালেদা জিয়া কেবিন ব্লকে প্রবেশের আগ থেকে হাসপাতালে ওঠানামার সব কয়টি লিফট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে কেবিন ব্লকে খালেদা জিয়ার প্রবেশের কিছুক্ষণ পর কেবিন ব্লকের আইসিইউ ও অস্ত্রোপচারসহ অন্য ফ্লোরে দু-চারজন রোগী বা স্বজনদের প্রবেশ করতে দেওয়া হলেও পাঁচতলায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
এমনকি খালেদা জিয়া যতক্ষণ পাঁচতলায় অবস্থান করেন ততক্ষণ সেখানে ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও আয়াসহ কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এ সময় রোগীরা বাগ্বিত-ায় জড়িয়ে পড়েন।
বিএসএমএমইউ ফিজিক্যাল মেডিসিনের ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন মামুন (৩২) নামে এক রোগী। তিনি বলেন, গত ২ এপ্রিল ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে শনিবার ১১টা ৩৫ মিনিটে দেখা করতে বলেছেন। আমি সকাল থেকে চারতলায় দাঁড়িয়ে আছি। পুলিশকে বলেছি আমি পাঁচতলায় গেলে কেবিনের দিকে যাব না। কিন্তু পুলিশ আমাকে ঢুকতে দিচ্ছে না।
খালেদা জিয়া যাওয়ার আগ পর্যন্ত নাকি প্রবেশ করতে দেবে না। শুধু মামুন নয়, তার মতো হাজার হাজার রোগী এমন ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি হাসপাতালের কর্মচারীকে সরকারি ওষুধ নিয়েও পাঁচতলায় যেতে দেওয়া হয়নি।
এসএস
আরো পড়ুন : আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি পরে অন্য আলোচনা: মির্জা ফখরুল