আওয়ার ইসলাম : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এবারও যদি কোনো দল নির্বাচনে না আসে, তাহলে আমাদের কী করার আছে? কোন দল নির্বাচন করবে, কোন দল নির্বাচন করবে না—সেটা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত। কেউ যদি বলে নির্বাচন করতে দেব না, তাহলে সেটা তাদের গায়ের জোরের কথা। সময়মতো, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে।’
আজ সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ইতালি সফর শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধানে যেভাবে আছে, যারা জনগণের ওপর বিশ্বাস করে, তারা নির্বাচন অংশগ্রহণ করবে। বিএনপি গায়ের জোরে বলতে পারে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। কারণ তাদের জন্মই হয়েছিল গায়ের জোরে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছিল দুদক। আর আদালত রায় দিয়েছেন। সেখানে সরকারের কিছু করার নেই।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষেত্রবিশেষে, ব্যক্তিবিশেষে দুর্নীতি করলে কোনো কথা হয় না। আদালত রায় দিয়েছেন। আদালতের রায়ের আগে বিএনপি নির্বাচন কমিশনে গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের জন্য গঠনতন্ত্র জমা দিয়েছে।
তারা যখন একেকজনকে নিয়োগ করে, তখন দেখবেন গঠনতন্ত্রের ধার ধারে না। যাকে যখন খুশি পদ দিয়ে যাচ্ছে। যিনি চেয়ারপারসন, তাঁর হাতে সব ক্ষমতা। যেটি আমার হাতে নেই। আওয়ামী লীগে প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং পরে কাউন্সিলে এ জাতীয় বিষয় পাস হয়। এ ছাড়া কোনো উপায় নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপিতে কি একটি নেতাও নেই যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা যেত? যিনি মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে গেলেন, তাঁকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা হলো। যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে এফবিআই তদন্ত করে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছিল।
তাকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা হলো। বিএনপিতে এখন খুব কর্মঠ নেতা দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে কাউকে ভারপ্রাপ্ত করা গেল না? বিএনপির চেয়ারপারসনের কি দলের কারও ওপর ভরসা নেই, যাঁকে দায়িত্ব দিয়ে যাওয়া যায়? যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা কি এই পদ পাওয়ার যোগ্য নন?
বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মামলার রায় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মামলা যখন শুরু হয়, তখন রফিকুল হক সাহেব তাঁর আইনজীবী ছিলেন। তখন রফিকুল হক বলেছিলেন, টাকা দিয়ে দেন, তাহলে আর মামলা থাকে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই টাকা এসেছিল এতিমদের জন্য। সেই টাকা এতিমেরা আর চোখে দেখেনি। কত হাত ঘুরে এই টাকা তাঁর কাছে চলে আসে। কোরআনেও শাস্তির কথা বলা আছে। এতিমের টাকা খেলে আদালত শাস্তি দেয়, আল্লাহও শাস্তি দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এতিমখানার টাকা ব্যক্তিগত তহবিলে। আদালতের রায় অনুযায়ী যা করার তা আমরা করব। এর বাইরে কিছু সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘অনেকে আছে ভাগ্যবতী, শুধু নিতেই পারে; অনেকে আছে দিতেই পারে। ব্যক্তিগত সহকারী রাখার বিষয়টি নতুন নয়। তখন তাঁর সঙ্গে এই গৃহপরিচারিকা ফাতেমাই ছিল।’
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের মামলার রায়ের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কেউ ফোনও করেনি, কেউ কোনো প্রশ্নও করেনি। কিছু জানতেও চাননি। সেদিক থেকে এটি একটি ভালো লক্ষণ। দুর্নীতিবাজদের পক্ষে কেউ কিছু বলে না।
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে, ৭০টি সরকারি অফিস তারা পুড়িয়েছে, বিজিবি-পুলিশ সদস্যদের হত্যা করেছে। গাড়িতে আগুন-পেট্রল দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে প্রায় ৫০০ মানুষকে তারা হত্যা করেছে। তিন হাজারের বেশি মানুষকে পুড়িয়েছে। মসজিদে আগুন দিয়ে শত শত কোরআন পোড়ানো হয়েছে, রেল-লঞ্চে তারা আগুন দিয়েছিল। প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছে। জনগণ যখন তাদের প্রতিরোধ করল, তখন তারা বিরত থাকল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় তো আমি দিইনি, রায় দিয়েছেন আদালত। তাদের নিজেদের লোকেরাই তো মামলা দিয়েছেন। সেখানে মামলা করেছে দুদক। দশ বছর এই মামলা চলেছে। যার কার্যদিবস প্রায় ২৬১ দিন। সেখানে ৮০ বারের বেশি হাই-আপিল বিভাগে রিট করে সময় নেওয়া হয়েছে। তিনবার আদালত পরিবর্তন করা হয়েছে। সময় চাওয়া হয়েছে ১০৯ বার।
প্রশ্নপত্র ফাঁস নতুন কিছু নয়
প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে এটা চলে আসছে। কখনো সামনে চলে আসে, কখনো আসে না। প্রযুক্তি যেমন সুযোগ তৈরি করে দেয়, আবার সমস্যাও তৈরি করে দেয়। তিনি বলেন, পরীক্ষার আগের দিন তো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় না। প্রশ্ন ফাঁস হয় পরীক্ষার ২০ মিনিট আগে। কার এমন ‘ফটোজেনিক মেমোরি’ আছে যে প্রশ্ন দেখে ২০ মিনিটে সবকিছু মুখস্থ করে লিখে ফেলে?
প্রশ্নপত্র ফাঁস বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রশ্নপত্র ফাঁস বলে একটি সুর তুলে দেওয়া হচ্ছে। তাই বলে মন্ত্রী, সচিবকে চলে যেতে হবে? তাঁরা তো এটা ফাঁস করে চলে আসেনি। গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁকারীদের ধরিয়ে দেন, তাদের শাস্তি দেব। পরীক্ষায় বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) বন্ধ করে দেব। আপনারা (গণমাধ্যমকর্মীরা) লেখেন, আমরা বন্ধ করে দেব। কিন্তু এটা নিয়ে সুর তুলে একবার মন্ত্রী, সচিব আবার সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে। দয়া করে একটু খুঁজে দিন, কে প্রশ্নফাঁস করল—তার শাস্তি দেব আমরা।’
অপকর্ম না করলে ৩২ নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই
৫৭ ধারা বাদ দিয়ে নতুন ডিজিটাল আইন হয়েছে, এই আইনটি গণমাধ্যমকর্মীদের ক্ষেত্রে অপপ্রয়োগ হবে না বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী । শেখ হাসিনা বলেন, সাইবার ক্রাইম একটি বিরাট সমস্যা। এ দেশসহ সারা বিশ্বে এ সমস্যা আছে। সিআরপিসিতে যেসব ধারা আছে, সেগুলো।
আপনাদের এত ভয় কেন? কেউ যদি এমন অপরাধ করেন, তাহলে তাঁর ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করা হবে। ফৌজদারি আইন (সিআরপিসি) অনুযায়ী কেউ অপকর্ম না করলে সেখানে অপপ্রয়োগ কেন হবে। প্রযুক্তি যেমন সুযোগ করে দেয়, মাঝেমধ্যে দুঃসহ যন্ত্রণাও দেয়।
রোহিঙ্গাদের জন্য ঘর বানানো হচ্ছে
শেখ হাসিনা বলেন, বালুখালী-কুতুপালং রোহিঙ্গারা আছে। তাদের জন্য একটি দ্বীপে ঘরবাড়ি করা হচ্ছে। সেখানে যেন জোয়ারের পানি না ঢোকে সে জন্য বাঁধ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বালুখালী-কুতুপালংয়ে গাছপালা সব কেটে শেষ। যত দ্রুত পারা যায়, তাদের স্থানান্তর করা হবে।
সমস্যা সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার, সমস্যার সমাধানও করবে তারা। রোহিঙ্গাদের নিতে মিয়ানমার টালবাহানা করছে, এটা তাদের চরিত্র। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবেও চাপ আসছে প্রচুর। একবার যদি যাওয়া শুরু করে তাহলে স্রোতের মতো করে চলে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের এক কোটি শরণার্থী ছিল। তারা কীভাবে চলে এসেছিল?’ প্রথম আলো।