মুফতি এনায়েতুল্লাহ
আলেম লেখক ও সাংবাদিক
সভ্যতা মানব চরিত্রের একটি শ্রেষ্ঠ গুণ। মানবজীবনে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। অতএব মানুষকে সদা সর্বদা কথা ও কাজে সততা ও স্বচ্ছতা রক্ষা করতে হবে এবং মিথ্যার অভিশাপ ও গ্লানি থেকে বাঁচতে হবে।
যার মধ্যে এ গুণের সমাহার থাকবে সমাজের সব ধরনের মানুষ তাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করবে। সম্মানের চোখে দেখবে, পরম মায়ায় জড়িয়ে রাখবে। সর্বোপরি আখেরাতে আল্লাহতায়ালার কাছে এর বিনিময় লাভ করবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সততার গুণে গুণান্বিত হওয়া।
এরই লক্ষ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘সততার আলো’ ছড়িয়ে দিতে ঢাকায় প্রথমবারের মতো একটি স্কুলে দুর্নীতি দমন কমিশনের ‘সততা স্টোর’ চালু করা হয়েছে।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজে ইউএনডিপির সহযোগিতায় দুদকের এ স্টোরের কার্যক্রম শুরু হয়। ‘সততা স্টোর’ উদ্বোধন করেন দুদকের কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম।
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছয়শ’র বেশি ‘সততা স্টোর’ খোলা হয়েছে। এসব স্টোরে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য রাখা আছে। সেখানে পণ্য কেনা ও মূল্য পরিশোধের নিয়মাবলী নিয়ে দু’টি তালিকা রয়েছে, কিন্তু কোনো বিক্রেতা নেই। কোনো কিছু কিনতে হলে স্টোরে থাকা সংশ্লিষ্ট খাতায় পণ্যের বিবরণ লিখতে হবে শিক্ষার্থীকে। এরপর পাশেই রয়েছে টাকা জমা দেওয়ার বক্স। যেকোনো শিক্ষার্থী তার পছন্দমতো পণ্যটি কিনে বক্সে টাকা জমা রাখবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত এসব ‘সততা স্টোর’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরস্পরে সৎ হওয়ার প্রতিযোগীতা করছে। এটা একটা শুভ ও ইতিবাচক দিক পরিবর্তন, সততার চর্চা। এভাবেই শিক্ষার্থীদের মানসিকতায় গুণগত পরিবর্তন আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। যার প্রমাণ আমরা কিছু কিছু দেখতেও শুরু করেছি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সততার খবর প্রকাশিত হয়েছে।
আমরা মনে করি, ‘সততা স্টোর’ থেকে যেসব শিক্ষার্থী পণ্য কিনছে, তারা পণ্য কেনার পাশাপাশি তাদের দিতে হচ্ছে সততা এবং বিবেকের পরীক্ষা। যে কেউ চাইলে এখান মূল্য পরিশোধ না করে চুপিচুপি করে পণ্য নিয়ে চলে যেতে পারবে। কিন্তু তারা সেটা করছে না। কারণ, এটি একটি সততা চর্চাকেন্দ্র। সততার পরীক্ষায় আমাদের দৃষ্টিতে ‘ছোটরা’ হারতে চায় না, জিততে চায়।
বস্তুত ‘সততা স্টোর’ সততা চর্চার একটি প্লাটফর্ম। এটি একটি প্রতীক। নতুন প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং অল্প বয়স থেকেই দুর্নীতি বিরোধী নৈতিকতায় উদ্বুদ্ধ করার মহান উদ্যোগ। সৎ মানুষ তৈরির মিশন।
‘সততা স্টোর’-এর সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো- বিবেক জাগ্রত করার শিক্ষা। সৎভাবে চলার অনুশীলন কেন্দ্র। দৃশ্যতঃ এখানে বিক্রেতা নেই। এই দোকানের প্রকৃত বিক্রেতা হলো- বিবেক, নৈতিকতা, সততা, চরিত্র, মনুষ্যত্ব ও সর্বোপরি সত্যিকারের মানুষ হওয়ার সিঁড়িতে আরোহণ। একইভাবে সততা স্টোরের সবচেয়ে বেশি মূল্যবান পণ্যটিও কিন্তু বিবেক, নৈতিকতা, সততা, চরিত্র, মনুষ্যত্ব ও সত্যিকারের মানুষ হওয়ার সিঁড়িতে আরোহণ।
বিশ্বের নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর একটি প্রিয় বাংলাদেশ। কিন্তু দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান তালিকার ওপরের দিকে। আমাদের বিশ্বাস দেশের কোনো বিবেকবান নাগরিকই দেশকে এ অবস্থানে দেখতে চাই না। এ অবস্থার পরিবর্তন কাম্য। আর কাঙ্ক্ষিত এই পরিবর্তনের জন্য সম্মিলিতভাবে সবাইকে চেষ্টা করতে হবে।
দুর্নীতি দমনে আইনের পাশাপাশি শুদ্ধাচার কৌশল চর্চাও হচ্ছে। কোরআন-হাদিসে বাণী দিয়ে, শাস্তির ভয় দেখিয়ে দুর্নীতিতে জড়িতদের আমরা নানাভাবে দুর্নীতি থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছি। এর সুফল কিছু না কিছু পাওয়া যাচ্ছে। তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যাতে আমাদের আগামী প্রজন্ম সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত হয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার একটি সহজ ও সুন্দর উপায় হতে পারে ‘সততা স্টোর’। এই ‘সততা স্টোর’ থেকে সততার আলো ধীরে ছড়াবে সমাজের সবখানে। আর এভাবে দুর্নীতিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই তো বলি- ছোটদের ‘সততা স্টোর’ থেকে বড়রা শিখুক!
সিনিয়র বিভাগীয় সম্পাদক, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
এসএস/