রকিব মুহাম্মদ: রাজধানীতে শুক্রবার অনলাইন নিউজপোর্টাল আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের উদ্যোগে রাজধানীর অনুষ্ঠিত হলো অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সম্মেলন।
তোপখানা রোডের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি মিলনায়তনে বিকেলে তরুণদের এ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব।
প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিন্তাশীল আলেম, রাজনীতিক ও সংগঠক খতিব তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ার ইসলামের প্রধান সম্পাদক মুফতি আমিমুল ইহসান।
সভায় ‘মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া সঙ্কট ও সমাধান’ শীর্ষক বিষয়ের ওপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন দেশের আলোচিত তরুণ, লেখক, সাংবাদিক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টগণ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির আলোচনা করেন ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ, IF Academy & Consultancy এর কো-ফাউন্ডার এবং শারিয়াহ-টেক কনসাল্টেন্ট, ইথিস ভেঞ্চারস, মালয়েশিয়ার মুফতি ইউসুফ সুলতান।
তিনি বলেন, আমাদের মাঝে কলাবরেশনের অনেক অভাব। আমরা সব সময় নিজেদের নিয়ে চিন্তা করি। নিজস্বতার যে চিন্তা বা নিজেদের সংকীর্ণ করে ফেলার এই প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এই চিন্তাটা আমাদের সমাজের রন্ধে রন্ধে লেগে আছে।
তিনি উদাহারণ দিয়ে বলেন, কোন বাড়িতে যখন বউ আসে, তখন দুইটা দল হয়ে যায়। পরবর্তীতে দলের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। আমাদের সমাজের চরিত্র ও আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি অনেকটাই এরকম।
তিনি বলেন, আমরা মাদরাসার শিক্ষার্থীরা মাদরাসায় থাকাকালীন অন্যদের সাথে সমাজের সাথে চলার সুযোগ খুব কমই হয়ে ওঠে। আমাদের নিজেদের অঙ্গনের অন্যদের সাথেই আমরা কম মিশি অর্থাৎ নিজেদের অঙ্গনের অন্যদের সাথেই আমরা মিশি না। কাজেই বাইরের মানুষদের সাথে মেশার তো প্রশ্নই ওঠে না।
আমরা নিজেদের মধ্যে সহযোগিতামূলক কাজ করতে শিখিনি। আর এই কলাবরেশন পৃথিবীর প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র সব জায়গাতেই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।
নিজে করতে পারা খুব বড় বিষয় না। যদিও এটা বড় যোগ্যতা একজন মেধাবী সে অনেককিছু করতে পারে। কিন্তু চার-পাঁচজন মিলে একটা কাজ করা আমাদের হয়ে ওঠে না। আমাদের কয়টা বই এমন পাই যে চার-পাঁচজন উস্তাদ মিলে একটা বই লিখেছেন। অথচ, আন্তর্জাতিক পাবলিকেশনগুলোর দিকে লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাই, তারা একটা বই দুই তিনজন বা ততোধিক লেখক দিয়ে লেখান আবার একটা অধ্যায় কয়েকজন মিলে লেখেন। এই কলাবরেশন বা সহযোগিতামূলক কাজের প্রবণতা আমাদের মধ্যে নেই বললেই চলে।
এই যে বিষয়টা ওটা আমাদের ওখান থেকে গড়ে ওঠা চায়। মাদরাসা থেকেই আমাদের সন্তানদের উদারতা শেখাতে হবে ।
জীবন সাজানোর অনন্য অ্যাপ ইসলামী যিন্দেগী
মালিবাগ জামিয়ার সাবেক মুহাদ্দিস মাওলানা আবুল ফাতাহ ইয়াহইয়াহ রহ. বলতেন, তোমরা যে জামায়াতের বিরোধিতা করো, তারা তো তোমাদের জেহাদের কথা মনে করিয়ে দেয়, তোমরা বেদাতিদের বিরোধিতা করো তারা তো তোমাদের রাসুলের মুহাব্বাতের কথা মনে করিয়ে দেয়, এমনিভাবে সালাফিরা তোমাদের সহিহ হাদিসের ওপর আমল করার কথা মনে করিয়ে দেয়।
তার এই কথাগুলো এখনও আমার কানে বাজে। আমাদের ছাত্রদের পাঠদান করার সময় ছোট ছোট এই বিষয়গুলো নিয়ে বললে তাদের চিন্তা শক্তির প্রসারতা বাড়বে। আমরা সবাই একসাথে মিলেমিশে চলতে পারব।
আমাদের মধ্যে নেতৃত্বদানকারী মানুষের অভাব। নেতা অনেক আছে, সেলুনের নেতা, সমিতির নেতা, দলের নেতা, বাংলাদেশে অসংখ্য দল আছে, কমিউনিটি আছে এবং সব দলের কমিটি আছে নেতা আছে। সেই নেতার স্বাভাবিকভাবেই অনেকগুলো কর্মী থাকে, ফেসবুকে ফলোয়ার থাকে। কিন্তু প্রকৃত নেতা কে?
যেই নেতার অনেকগুলো ফলোয়ার আছে সেই ব্যক্তি প্রকৃত নেতা নয়। প্রকৃত নেতা ওই ব্যক্তি যার কাজের অনেক প্রভাব রয়েছে। আমরা কে কতটুকু কাজ করতে পারছি এবং আমাদের কাজ সমাজ ও সমাজের মানুষের ওপর প্রভাব ফেলতে পারছে সেটা নেতার পরিচয় বহন করে।
আওয়ার ইসলম টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুবকে আমরা মূল্যায়ণ করব তার পোর্টালে প্রকাশিত নিউজ মানুষের চিন্তা এবং সমাজে কতটা প্রভাব ফেলছে। কয়টা সংবাদ মানুষের কাছে রিচ করেছে সেটা অনেক বড় বিষয় না বরং ইমপ্যাক্ট বা প্রভাবটা আমাদের চোখে পড়বে ।
একটা ব্যাংকের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনটা হলো ইমপ্যাক্ট, কতগুলো ফাইনাইন্স দিল সেটা কিন্তু এখানে মূখ্য নয়। যেমন, গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল অনেক উন্নত, তাদের ফাইনাইন্সও বেশি কিন্তু তাদের ইতিবাচক প্রভাবটা কম। তাদের কাছ থেকে যারা ফাইনাইন্স পেয়েছে তারা উল্টো আরও অভাবগ্রস্থ হয়ে পড়েছে অর্থাৎ তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক নয় বরং নেতিবাচক প্রভাবটাই বেশি পাচ্ছি আমরা।
লিডারশিপ সেটাই যে কাজের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমি নিজে কতটুকু কাজ করতে পারলাম সেটা না দেখি বরং কয়েকজনকে কাজ করাতে পারলাম তা দেখি।
আমরা যার যার স্থান থেকে অন্যদের কাজ করিয়ে নেওয়ার দিকটা গুরুত্বের সাথে দেখব। ঠিক এই নেতৃত্বটাই যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় আনতে পারি, তাহলে দেখব কেউ একজন সিরাত নিয়ে গবেষণার জন্য কোন একটা ভলেন্টেয়ার টিমকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সালাফি ভাইয়েরা তো হাদিস বিডি ডটকম ভলেন্টেয়ার দিয়ে বের করেছেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে নেতৃত্ব দানকারী কাউকে পাই না। যে শুধুমাাত্র একটি উদ্যোগ নিবেন এবং আমাদের ডাক দেবেন। আমরা সবাই হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার মতো তার পেছনে ছুটতে থাকব।
এবার বলব, আমাদের বেশকিছু ইন্সটিউশন দরকার। আওয়ার ইসলাম যেমন কাজ করেছ আমরা তাদের এগিয়ে দেই। এই লাইনে তারা মজবুতির জায়গায় আরও ভালো অবস্থথানে চলে আসুক। এভাবে অন্যরাও কাজ করছে অন্য কোন বিষয় নিয়ে।
আমরা সবাইকে একত্রে নিয়ে একসাথে নিজেদের মানুষ ভেবে কাজ করতে হবে এবং আমরা সবাইকে ম্যাক্রোলেভেল থেকে দেখব। আমাদের প্রফেসররা বলতেন, একটা হেলিকপ্টার থেকে নিচে যেমন সবকিছুকে একসাথে দেখা হয় একটা অঞ্চরের সাথে আরেকটা অঞ্চলের দেয়াল আছে সেগুলো কিছুই দেখা যাাবে না।
একজন লিডারও আমাদের হেলিকপ্টার ভিউ থেকে দেখবেন। তার অনুসারীরা ভিন্ন চিন্তাটা করছেন তিনি সেটা করবেন না। এই আচরণটাই যদি আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় আনতে পারি আমরা অনেক উপকৃত হবো।
সামান্য কিছু নিয়ে অমত-দিমত হলে আমরা সেটাকে ইগনোর করব এড়িয়ে যাব। আমরা আরও নতুন এবং সৃজনশীল কাজ কিভাবে সমাজকে উপহার দিতে পারি সেইসব নিয়ে চিন্তা করব।
একটি প্রস্তাবনা দিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করব, আমরা মাদরাসাগুলোতে কিভাবে বাইরের কলেজ-ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সাথে কলাবেরেটিভ কাজ করতে পারি তা নিয়ে বলব। জামিয়াতুর রাশিদে এবং করাচি ইউনিভার্সিটির যৌথ আয়োজন আছে। দারুল উলুম করাচি থেকে প্রফেসররা এসে জামিয়াতুর রশিদে ফাইনাইন্স ইত্যাদি বিষয়ে ক্লাস নেন এবং পরবর্তীতে যৌথভাবে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
এটা একটা চমৎকার কলেবরেশন। এতে করে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কি হচ্ছে সেটাও জানতে পারে এবং সেই কমিউনিটির সাথে মেশাও যায়। আমরা স্কুল কলেজগুলোর সাথে বা দাওয়াতি কাজেও তাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে পারি। আমরা দাওয়াতি কোন মিশন নিয়ে নামছি সেখানে আমরা স্কুল কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে পারি।
ছোটবেলা থেকেই যদি আমরা ছাত্রদের যৌথ এবং সহযোগিতামূলক এমন কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করি, ইনশাল্লাহ তাদের মেধার প্রসারতা ঘটবে এবং উদার হবে। মুক্তমনা হবে যা তাদের নাস্তিক করবে না বরং সবাইকে নিয়ে একসাথে চলার প্রেরণা দেবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাওফিক দান করুন।
আওয়ার ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক রোকন রাইয়ানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সভাপতি জহির উদ্দিন বাবর, শীলনবাংলা সম্পাদক মাসউদুল কাদির, নূর বিডি ডটকম সম্পাদক সৈয়দ শামসুল হুদা, যুবকণ্ঠের সম্পাদক ও মাদরাসা বাইতুল মুমিনের প্রিন্সিপাল মুফতি নেয়ামতুল্লাহ আমিন, ইসলামী লেখক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুনীরুল ইসলাম, আলোকিত বাংলাদেশের সাব এডিটর আলী হাসান তৈয়ব, লেখক ও অনুবাদক আবদুস সাত্তার আল আইনী, লেখক ও গবেষক মাওলানা মহিউদ্দীন ফারুকী, আলেম ও লেখক মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেমী, পির ইয়েমেনী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা ইমরানুল বারী সিরাজী, কলামিস্ট মাওলানা মাহমুদুল হাসান সিরাজী, কিশোরস্বপ্ন নির্বাহী সম্পাদক জিয়াউল আশরাফ, রাহমানী পয়গামের সহকারী সম্পাদক এহসানুল হক, মাসিক নতুন ডাক সম্পাদক শাকিল আদনান, এক্টিভিস্ট মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আরমান, রকমারি ডটকমের এহসানুল হক, সবার খবর সম্পাদক আবদুল গাফফার, সৃজন সম্পাদক আমিন ইকবাল, ইসলামী লেখক ফোরাম অর্থ সম্পাদক মুহাম্মদ তাসনিম, কারেন্ট বাংলা সম্পাদক আহসান শরিফ, লেখক ফারুক ফেরদৌস, কবি ইফতেখার জামিল, আল জামিয়া’র সহ সম্পাদক সুলাইমান সাদী, এ এস এম মাহমুদ হাসান, আদুল্লাহ তামিম, উবায়দুল্লাহ সাআদ, আমিন হানিফ, আমিন মুনশি, উবায়দুল হক খানসহ অারো অনেক তরুণ লেখক ও এক্টিভিস্ট।
ভিডিও
বলয়ে আবদ্ধ আমরা অন্য সবখানে নাস্তিকদের বসাচ্ছি: খতিব তাজুল ইসলাম