শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

ইজতেমার বয়ান ২০১৮; ২য় পর্ব শুক্রবার বাদ জুমা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিশ্ব ইজতেমার ২য় পর্বের ১ম দিন শুক্রবার বাদ জুমা বয়ান করেন ওমানের তাবলিগের মুরব্বি শাইখ আহমদ মাসউদ। অনুলিপি করেছেন আবদুল কাইয়ূম সালমান। 

হামদ ও সালাতের পর। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! আপনি বলুন, এটা আমার পথ। আমি জেনে বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও। আর আল্লাহ পবিত্র, মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ সূরা ইউসুফ- ১০৮

তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিৎ। তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন।’ সূরা হজ্ব- ৭৮

‘আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়,তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব।’ সূরা আনকাবুত- ৬৯

রাসূল সা. বলেন, ‘তোমরা আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছে দাও।’ সহীহ বুখারী। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ব্যাপারে মিথ্যা বলল সে যেন নিজের ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নিল।’ সহীহ বুখারী ও মুসলিম।

মোহতারাম ভাই দোস্ত ও বুযুর্গ!
আল্লাহ তায়ালার অনেক বড় মেহেরবানী যে, তিনি আমাদেরকে মুসলমান বানিয়েছেন। ইসলাম নামক বড় নিয়ামত দান করেছেন। আখেরি নবির উম্মত বানিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন।

নবুওয়াতি জিম্মাদারি আমাদেরকে দান করেছেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘তোমরাই হলে শ্রেষ্ঠ জাতি; তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে, তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।’

আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সা. সর্বশেষ রাসূল। তিনি সকল নবির সরদার। সকল নবী- রাসুলের জিম্মাদারী ছিল- মানুষকে সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা। আমাদের নবীরও এ জিম্মাদারী। আমাদের নবী যেহেতু খাতামুন্নাবীয়্যিন তার পরে কোন নবী দুনিয়াতে আসবেন না সেহেতু এ কাজের জিম্মাদারী এ উম্মতের উপর। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বানিয়েছেন এটা অনেক বড় নিয়ামত।

মোহতারাম দোস্ত ও বুযুর্গ!
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন তার ইবাদত করার জন্য। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষ ও জিন জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি’।

আমাদের জিম্মাদারি  হলো, আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করা ও মানুষকে তার ইবাদতের দিকে আহবান করা। যখন কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করত তখন থেকেই সে মানুষের ফিকির করত। রাসূল সা. সাহাবাগণকে এ জিম্মাদারীর উপর উঠিয়েছেন, কীভাবে মানুষ আল্লাহ তায়ালাকে চিনতে পারে, কীভাবে হেদায়াতের পথে চলতে পারে, কীভাবে মানুষ আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করতে পারে, কীভাবে জাহান্নাম থেকে বেঁচে জান্নাতে যেতে পারে।

আমাদের নবী মুহাম্মদ সা. নিজেও এ মেহনত করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে এ মেহনত শিক্ষা দিয়েছেন। শুরুতে নামায, রোজা, হজ ও যাকাত ইত্যাদির হুকুম নাযিল হয়নি তখন থেকেই তিনি সাহাবায়ে কেরামকে এ মেহনত শিক্ষা দিয়েছেন।

খতমে নবুওয়াতের উসিলায় এ জিম্মাদারি আমাদের উপর । রাসূল সা. মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে নবী ! আপনি মানুষকে জাহান্নামের ভয় দেখান। অতপর মেরাজের রজনীতে আল্লাহ তায়ালা নামাজের হুকুম অবতীর্ণ করেন। সাহাবায়ে কেরামও মানুষকে দাওয়াত দিতেন প্রথমে ঈমানের তারপর নামাজের।

মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালাকে চিনবে, তার পরিচয় লাভ করতে পারবে তখন তার ইবাদত পুরা করা সহজ হবে। তার হুকুম আহকাম মানতে সহজ হবে। উম্মতের উপর এটা বড় জিম্মাদারী যে, মানুষকে আল্লাহ তায়ালার দিকে ডাকবে ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাবে এবং মানুষকে এ মেহনতের উপর উঠাবে। মানুষ যখন এ মেহনত করবে তখন দ্বীনের উপর চলা তার জন্য সহজ হবে।

মোহতারাম দোস্ত ও বুযুর্গ!
যখন উম্মত এ মেহনত নিয়ে দাঁড়িয়েছে তখন থেকেই মানুুষের মধ্যে দ্বীন জিন্দা হতে শুরু করেছে। এটাই নিয়ম যে, যখনই উম্মত এ কাজকে জিন্দেগীর কাজ বানাবে তখনই দুনিয়াতে দ্বীন প্রতিষ্ঠা হবে। আর যখন উম্মত থেকে এ কাজ ছুটে যাবে তখনই দ্বীনের মধ্যে কমি আসবে। ত্রুটি বিচ্ছুতি দেখা দিবে।

আস্তে আস্তে দুনিয়া থেকে দ্বীন মিটে যাবে। এজন্য আমাদের সকলের জিম্মাদারী হলো, নিজেও এ মেহনত করা ও অপর ভাইকে এ মেহনতের দাওয়াত দেয়া। আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা করেছেন যারা এ কাজ করবে তাদের তিনি সাহায্য করবেন। সাহাবায়ে কেরাম এ মেহনত করেছেন আল্লাহ তায়ালাও তাদেরকে কদমে কদমে সাহায্য করেছেন। আমরা যদি এ কাজ করি তাহলে আমাদেরকেও সাহায্য করবেন। ইনশাআল্লাহ

সাহাবায়ে কেরাম এ মেহনত করেছেন তাদের জিন্দেগীকে আল্লাহ তায়ালা সুন্দর করে দিয়েছেন। তাদের জীবনকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। ইসলাম গ্রহণের পুর্বে তাদের করুণ অবস্থা ছিল। ইসলাম গ্রহণের বদৌলতে আল্লাহ তায়ালা তাদের জিন্দেগীকে সুন্দর করে দিয়েছেন।

তারা মানুষকে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের দিকে আহবান করত। অসৎ কাজ থেকে বাধা দিতো। এ জন্যেই তাদের জিন্দেগীতে দ্বীন এসেছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সাহাবায়ে কেরামের প্রশংসা করেছেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রাসূল। তার সাথে যারা আছে অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম কাফেরদের প্রতি ছিলেন কঠোর তবে তারা পরস্পরে ছিলেন দয়ালু। একে অপরকে সাহায্য করতেন’ ।

সাহাবায়ে কেরাম রাসূলের এ মাকসাদকে নিজের মাকসাদ বানিয়ে নিয়েছেন। যার বদৌলতে তাদের প্রতিটি কাজে ইবাদাত, আখলাক, মোয়ামালাত ও মোয়াশারাত ইত্যাদিতে পরিবর্তন এসেছে।

সাহাবায়ে কেরাম নিজের জিন্দেগীকে এমনভাবে গঠন করেছেন যে, তাদেরকে দেখেই মানুষ ইসলাম গ্রহণ করত। এ কথা বলার প্রয়োজন হতো না, তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। তারা বলত, তোমরা আমাদের মত হয়ে যাও। তারা সকল ক্ষেত্রে একাজকে নিজের কাজ বানিয়েছেন। তারা যেখানেই যেতেন এ কাজ করতেন।

উম্মদের মধ্যে যখনই এ কাজে দুর্বলতা এসেছে তখনই তাদের মধ্যে অপদস্থতা আসতে শুরু করেছে। আমাদেরকে শুধু ইবাদত করলে হবে না । মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে হবে। আমাদের মধ্যে দাওয়াতের কমতি হলে দ্বীন আস্তে আস্তে নিচে নামতে থাকবে।

হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. সর্বপ্রথম এ মেহনত শুরু করেন। তারপর আস্তে আস্তে সমস্ত পৃথিবীতে এ মেহনত ছড়িয়ে পড়ে। এ মেহনতের বদৌলতে অনেক মানুষ হেদায়াত পেয়েছে। অনেক মানুষ ইসলামের ছায়াতলে এসেছে। অনেক মসজিদ আবাদ হয়েছে।

পুরা পৃথিবীতে এ মেহনতের উসিলায় পরিবর্তন এসেছে। সাহাবায়ে কেরাম যখন এ কাজ করেছেন তখনই আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সাহায্য করেছেন। তাদের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা হেদায়াতের আলো দান করেছেন। তাদের থেকে নাফরমানী দূর করেছেন।

আমরা যখন এ কাজ করব আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেও হেদায়াত দিবেন এবং আমাদের থেকে নাফরমানী দূর করবেন। আমরা যখন আল্লাহর রাস্তায় বের হব, এ মেহনত করব তখন আমাদের মধ্যে ইয়াকীন পয়দা হবে। আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের ইয়াকীন দিলে পয়দা হবে। আল্লাহ তায়ালার সিফাতের ইয়াকীন পয়দা হবে।

রাসূল সা. নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে ২৩ বছর যাবত দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। আমরা বছরে চার মাস আল্লাহর রাস্তায় সময় লাগাবো। বাকী আট মাস নিজের মহল্লায় মেহনত করবো। মহল্লায় দ্বীনের পরিবেশ কায়েম করবো। আমরা মসজিদকে কেন্দ্র করে এ মেহনত করবো। মসজিদের পাঁচ কাজ চালু রাখবো। সাপ্তাহিক গাশত ও মাশওয়ারা করবো।

আমরা যখন এ কাজ করতে থাকবো আমাদের মধ্যে মজবুতি পয়দা হবে। কোন কিছু আমাদেরকে আল্লাহর রাস্তায় বের হতে বাধা দিতে পারবে না। আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া সহজ হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দাওয়াতের কাজ করার তাওফীক দান করুন। আমিন।

বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে প্রকাশি দৈনিক বিশ্ব ইজতেমার সৌজন্যে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ