আওয়ার ইসলাম: প্রাচুর্যতার লোভে কিংবা উন্নত জীবন-যাপনের আশায় সমকামী পরিচয়ে ব্রিটেনে স্থায়ী বসবাসের আবেদন দিন দিন আকাশচুম্বি হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের নগরিকদের সাথে পাল্লা দিয়ে এই তালিকায় লম্বা হচ্ছে বাংলাদেশিদের সংখ্যাও।
২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল প্রায় দুই বছরের এই সময় পর্যন্ত ৪৫৪ জন বাংলাদেশি সমকামী দাবি করে ব্রিটেনে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করেন।
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার ছেলে, নামের প্রথম বর্ণ ‘আ’। ব্রিটেনে এসেছিল ছাত্র হিসেবে। হোম অফিসের কড়াকড়ির কারণে বাধ্য হয়ে সমকামী হিসেবে দাবি করে ব্রিটেনে থাকার আবেদন করেছেন। ‘আ’ জানান, ব্রিটেনে থাকতে হলে এই মিথ্যের আশ্রয় ছাড়া অন্য কোনো রাস্তা ছিল না।
শুধু ‘আ’ই নন, ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য নিজেদের সমকামী হিসেবে দাবি করা বাংলাদেশিদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। সম্প্রতি ব্রিটিশ হোম অফিসের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১ জুলাই ২০১৫ থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ে সমকামী দাবি করে আশ্রয়প্রার্থীদের তালিকায় বাংলাদেশিদের অবস্থান দ্বিতীয়। যা অন্যান্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি।
এই তালিকায় প্রথম অবস্থানে পাকিস্তানি নাগরিকরা। তবে, যেভাবে সমকামী হিসেবে আবেদনের সংখ্যা হঠাৎ বেড়েছে সেভাবেই আবেদন প্রত্যাখ্যানের সংখ্যাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। হোম অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ ধরনের আবেদনের ৭০ শতাংশ প্রত্যাখ্যান করছে সরকার। মূলত সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, শাস্তির বিধান রয়েছে কিংবা সামাজিকভাবে ঘৃণার চোখে দেখা হয় এমন দেশ থেকে আসা অভিবাসীরাই আশ্রয় লাভের এই কৌশল বেছে নেয়।
ব্রিটেনে আশ্রয়ের জন্য যারা আবেদন করেন তাদের ছয় শতাংশই করেন ‘সমকামী’ হিসেবে। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৩৫ জন সমকামী হিসেবে আবেদন করেছেন। এরমধ্যে ২ হাজার ৩৭৯ জনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার পাকিস্তানি নাগরিক সমকামী হিসেবে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ২৩৩টি আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। বাকি ৭৬৬টি আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
একই সময়ে ৪৫৪ জন বাংলাদেশি সমকামী দাবি করে আবেদন করেন। তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নাইজেরিয়ার নাগরিকরা। বিপুল আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা মানবাধিকার কর্মী পল ডিনান। তিনি বলেন, এ ধরনের প্রতিটি আবেদনের সঙ্গে প্রত্যেকটা মানুষের জীবন-মরণের সম্পর্ক রয়েছে। কারও আবেদন প্রত্যাখ্যান করে তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো মানে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া।
পল ডিনান হোম অফিসকে অনুরোধ করেন আরও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আবেদনগুলো পর্যবেক্ষণ করার জন্য। এদিকে হোম অফিস বলছে, প্রতিটি আবেদন সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।
এসএস/