রশীদ আহমদ নিউইয়র্ক থেকে: জাতিসংঘে একাডেমি ফর কালচারাল ডিপ্লোম্যাসী আয়োজিত বার্ষিক সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, আমরা সবাই প্রত্যাশা করছি যুক্তরাস্ট্র, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশসমূহের নতুন নেতৃত্বে বিশ্বের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, কূটনৈতিক এবং মানবাধিকারের ক্ষেত্রে কোন বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।
তারা বলেন, ইতিপূর্বে যেসব দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, সেসব দেশে পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার দরকার।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ১১নম্বর হলরুমে এবং বিভিন্ন ভ্যানুতে ইন্সটিটিউট ফর কালচারাল ডিপ্লোম্যাসী(আইসিডি) আয়োজিত চারদিনব্যাপী এই সিম্পেজিয়াম এর প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হয়।
আইসিডির ডাইরেক্টর জেনারেল মিস্টার মার্ক ডনফ্রিড এর সঞ্চালনায় কীনোট স্পীকার ছিলেন সাইবেরিয়া সাবেক প্রেসিডেনট মি. বডিস্ট ট্যাডিক।অন্যান্যের মধ্যে বসনিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী জালাতক লাঘমোদজিয়া, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেনট পিটার স্টোয়নবো, রোমানিয়ার সাবেক প্রেসিডেনট মিঃ উল্টাজ্যাকও বক্তব্য রাখেন।
চার দিন ব্যাপী এই সিম্পেজিয়াম প্রথম দিন শুরু হয় সকাল আটটায় এবং শেষ হয় সন্ধ্যা সাতটায়। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রায় একশত ডেলিগেট এতে অংশগ্রহণ করেন। বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক সম্পদায়ের পারস্পরিক সম্পর্ক মানবাধিকার ও বহুমাত্রিক উন্নয়নের উপর জাতিসংঘ ও আমেরিকার নতুন নেতৃত্বের প্রভাব শীর্ষক এ কনফারেন্সে বিশেষ প্রতিনিধি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশে এর কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সভাপতি মাওলানা শোয়াইব আহমদ ছাড়াও, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বর্তমান ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান এবং বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত সরকারী আমলা, মানবাধিকার ও মিডিয়া কর্মীসহ ডজন খানেক বাংলাদেশীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
কীনোট স্পীকার বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্র শাসন চলছে, সব দেশে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চলছে এসব দেশের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিশ্বসম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বহু দেশে গণতন্ত্র নেই, এক দলীয় শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিশ্বের সকল গণতন্ত্রকামীদের দাঁড়ানো উচিত। বিরুধী দলের নেতা কর্মীদের ওপর অমানবিক অত্যাচার নির্যাতন বন্ধে সকল প্রবাসীদের জনমত গঠনে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, যে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, সেসব দেশে জাতিসংঘের মাধ্যমে মানবাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান।
বিশেষ করে বাংলাদেশ, মায়ানমার, সিরিয়া, কাশ্মীর সহ অনেক দেশ বাক স্বাধীনতা থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা পরাধীনতার শিখলে বন্দি জীবন যাপন করছে। সেক্ষেত্রে বিশ্ব মানবাধিকার নেতৃবৃন্দকে আরো সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান।
ইউকের প্রতিনিধি জমিয়ত নেতা মাওলানা শোয়াইব আহমদ বলেন, আইয়্যামে জাহিলিয়াতসহ অতীতের সকল জুলুমকে বর্তমান সময়ে মিয়ানমারে গণহত্যা ম্লান করে দিয়েছে। তাই সেই গণহত্যা ও নির্যাতন বন্ধের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নির্যাতিত-নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের সাহায্য-সহযোগিতায় বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সবার উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে এর প্রতিবাদ করা সাথে সাথে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের উচিত হলো মিয়ানমার সরকারকে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করা এবং আগত রোহিঙ্গাদের সার্বিক আশ্রয় প্রদান করা। একই সঙ্গে অসহায় রোহিঙ্গাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করা । শুধু মিয়ানমার নয়, তিনি অধিকার বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কে এগিয়ে আসার উদাত্ব আহবান জানান।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পিস ওয়েলফেয়ার এন্ড ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন অফ পাকিস্তান এর প্রেসিডেন্ট ড. সাবের ম্যাকাঈল, বাংলাদেশে সাউথ আফ্রিকার কনসাল মুহাম্মদ সোলাইমান আলম সেথ, ডেনমার্কের গাজী মুনীর আহমদ, ফিনল্যান্ডের কামরুল হাসান জনি, তুর্কীর অকতার বাবুনা, রোটারী ক্লাব অফ নিউইয়র্ক এর প্রেসিডেন্ট ড. জ্যাসমিন বে কুউন ও ইয়র্ক বাংলা'র সম্পাদক রশীদ আহমদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য যে জাতিসংঘের ইনষ্টিটিউট ফর কালচারাল ডিপ্লোম্যাসি আইসিডি বিভাগের এবারের বার্ষিক আন্তর্জাতিক সিম্পেজিয়াম ১৯শে সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার থেকে ২২শে সেপ্টেম্বর শুক্রবার পর্যন্ত চলবে।