মুহাম্মাদ শোয়াইব : ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) বর্তমান সভাপতি ও তুরুস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তায়্যিব এরদোগানের উদ্যোগে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য তুরস্ক থেকে পাঠানো মানবিক সহায়তার প্রথম দফা রাখাইন রাজ্যে পৌঁছেছে বলে ঘোষণা করেছে তুর্কি সহযোগিতা ও সমন্বয় সংস্থা (টিআইকা)।
রাখাইনে উগ্র বৌদ্ধ সেনাবাহিনীর হাতে নিপীড়িত রোহিঙ্গা মুসলিমদের এক হাজার টন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করার জন্য টিআইকাকে গত মঙ্গলবার অনুমতি দিয়েছে মায়ানমার সরকার।
গতকাল বুধবারই (৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭) তুরুস্কের মানবিক সহযোগিতার প্রথম দফা রাখাইন রাজ্যের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদেরকে হ্স্তান্তর করা হয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, এই মানবিক সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে, খাদ্যদ্রব্য ও পোশাক। এগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে মিয়ানমার সরকারের সামাজিক সেবা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকের কাছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ টিআইকার প্রতিনিধিদলকে এই মানবিক সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ জানান এগুলো দরিদ্র পরিবারের মাঝে বিতরণ করার ওয়াদা করেন।
দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী হাকান কাভাসুগলো এক টুইট বার্তায় বলেন, সাহায্য তার প্রথম স্টেশনে পৌঁছে গেছে। আগামী কাল বৃহস্পতিবার (অর্থাৎ আজ) হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আক্রান্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
কাভাসুগলো জানান, ওই অঞ্চলে অনিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ অব্যাহত থাকায় রাখাইন রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে সামরিক হেলিকপ্টার মাধ্যমে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘হেলিকপ্টার ভূমিতে ল্যান্ড করার পর সেখান থেকেই তা বিতরণ করা হবে।’
তিনি বলেন, ওই অঞ্চলে আমাদের দুটি সমন্বয় কার্যালয় রয়েছে এবং বণ্টন প্রক্রিয়া মনিটর করার জন্য এই দুই কার্যালয়ের কর্মকর্তারা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে সেখানে ভ্রমণ করবেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ১০ হাজার পরিবারের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ করব।’
কাভাসুগলো বলেন, ‘আমরা এখন জরুরি প্রয়োজনগুলো প্রদান করছি। এটা ছাড়াও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের আলোচনা অব্যাহত আছে। ঔষধসহ গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা সরবরাহ করতে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’
গত মঙ্গলবার এরদোগান মিয়ানমারের সবচেয়ে ক্ষমতাবান রাজনৈতিক নেত্রী অং সান সূচিকে ফোন করেছিলেন। তার সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ফোনালাপে এরদোগান অতিরিক্তি বাহিনী ব্যবহার না করার এবং বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি না করার প্রতি জোর দিয়েছেন। ফোনালাপে মি এরদোগান মিস সুচির কাছে রোহিঙ্গা মুসলিমদের 'মানবাধিকার লঙ্ঘন' নিয়ে উদ্বেগ এবং নিন্দা জানিয়েছেন।তিনি মিস সুচিকে বলেন- রোহিঙ্গা সঙ্কট পুরো মুসলিম বিশ্বের জন্য গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, "নিরপরাধ মানুষের ওপর সন্ত্রাসীর তৎপরতার নিন্দা করছে তুরস্ক। মিয়ানমারে যে মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে সেটি উদ্বেগ এবং ক্ষোভের বিষয়।"
তুরস্কের সরকারি বার্তা সংস্থা আনাদলু জানিয়েছে, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে এবং কথা বলতে প্রেসিডেন্ট এরদোগান তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলুকে বাংলাদেশের পাঠাচ্ছেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের অবস্থা স্বচোক্ষে দেখার জন্য একটি প্রাইভেট বিমানে করে আজ ঢাকা আসছেন এরদোগানের স্ত্রী ও তুর্কি ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোগান।
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে তুরস্ক বিশেষ তৎপর হয়ে উঠেছে। ইদের ছুটির সময় প্রেসিডেন্ট এরদোগান এই সঙ্কট নিয়ে বিভিন্ন মুসলিম দেশের নেতাদের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এমনকি জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। এরদোগান বলেছেন এ মাসের শেষে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুটি তুলবেন।
ওদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের মাঝেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ঘর পালানো রোহিঙ্গাদের ঢল অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘ বলছে গত ১১ দিনে ১২৩,০০০ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছে।
সূত্র : আনাদুল
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ৬ ইসলামি দলের বৈঠক; আজ মানববন্ধন কাল বিক্ষোভ
উবায়দুল্লাহ সাআদ: ঢাকার জামেয়া মাদানিয়া বারিধারায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমীর আহ্বানে সমমনা ইসলামি দলসমূহের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর বর্বরোচিত হামলা, হত্যা, ধর্ষণ, উচ্ছেদ, লুটতরাজ ও বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বৈঠকে ৬ টি ইসলামি দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দলগুলো হলো, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, মুসলিম লীগ ও ইসলামী ঐক্যজোট (রকীব)।
বৈঠকে বলা হয়, শত বছর যাবত দফায় দফায় রোহিঙ্গা নিধন মিয়ানমারের সরকার ও জনগণের একটা রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব সংস্থা ও দেশগুলো শুধু প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। মিয়ানমার সরকারের কাছে বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমারেখারও কোন মর্যাদা নেই। তাদের হেলিকপ্টার, গানশিপ বারবার আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে এবং তাদের বন্দুকের গুলি আমাদের দেশের অভ্যন্তরে পতিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের জনগণ চুপ থাকতে পারে না। অসহায় রোহিঙ্গাদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং মিয়ানমার সরকারের জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। পাশাপাশি আমাদের সিমান্তরেখা অবমাননা করার সমুচিত জবাব দিতে হবে।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ শিগগির মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চ, মহাসমাবেশ ও মিয়ানমারের দূতাবাস ঘেরাওসহ নানাবিধ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রাথমিকভাবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও শুক্রবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং ঘোষিত কর্মসূচি সফল করার জন্যে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গা মুসলমানদের আর্থিক সাহায্যে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ সভাপতি মাওলানা জহিরুল হক ভূঁইয়া, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, অর্থ-সম্পাদক মাওলানা মনীর হুসাইন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফূজুল হক, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান এডভোকেট মাওলানা এম এ রকীব, মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করীম, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা তাফাজ্জুল হোসেন ও খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত মাওলানা শাহ আতাউল্লাহর ছেলে মাওলানা শাহ সানাউল্লাহ।
নেতৃবৃন্দ শিগগির আরও বড় কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে।