বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

পুলিশের ছেলের দেহে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য শিশু অপহরণ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা থেকে সাত বছরের শিশু আরজিনাকে অপহরণ করা হয়েছিল তার কিডনি কেটে পুলিশ কর্মকর্তার সন্তানের দেহে প্রতিস্থাপনের জন্য? গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার এসআই আবু বক্কর, তাঁর স্ত্রী নাজমা বেগম ও বোন আয়েশা বেগমের বিরুদ্ধে দায়ের করা অপহরণ মামলায় এমন সন্দেহই ব্যক্ত করা হয়েছে। অপহৃত হওয়ার ১৭ দিন পর শিশুটিকে এসআইয়ের রংপুরের বাসা থেকে উদ্ধার করে আনেন উলিপুরের এক ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, শিশুটিকে রংপুরে যে ক্লিনিকে নেওয়া হয়েছিল পরীক্ষার জন্য, সেটির একজন ডাক্তারের সূত্রে শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

অভিযুক্ত এসআই বলেছেন, তাঁর ছেলে অসুস্থ, এ খবর সত্য। তবে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য শিশু অপহরণের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, গৃহকর্মী হিসেবে মেয়েটিকে তাঁর স্ত্রী বাসায় রেখেছিলেন। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'আমি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানায় চাকরি করি। রংপুরে আমার স্ত্রী কী করেছে তা আমি জানি না।'

অপহরণের ঘটনায় মঙ্গলবার উলিপুর থানায় মামলা করা হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে উলিপুর থানার ওসি জানান, মামলার পর শিশুটিকে সকালে কুড়িগ্রামে পাঠানো হয়েছিল। বিকেল ৪টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত কুড়িগ্রাম সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান শিশুটির জবানবন্দি গ্রহণ করেন। উদ্ধারের পর মামলা নিতে গড়িমসি করার অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি বলেন, একজন এসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাই আগে খোঁজখবর নিতে হয়েছে।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিশুটির বাবা নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার হাজিপাড়া গ্রামের দরিদ্র আক্কাছ আলী এবং মা কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের রুপার খামার গ্রামের মফিজ উদ্দিনের মেয়ে মরিয়ম বেগম। আরজিনাকে তাঁর নানার কাছে রেখে দরিদ্র এই দম্পতি ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করেন। শিশুটি পড়ে রুপার খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে। গত ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় শিশুটিকে তার নানি পাশের বাড়ির বৃদ্ধা বিবিজানের কাছে এক দরকারে পাঠান। তারপর সারা রাত খুঁজে না পেয়ে পরের দিন শিশুটির নানা উলিপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। তবে এর পরও খোঁজ মেলেনি শিশুটির।

জানা যায়, গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে খবর পেয়ে উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম ফুলু শিশুটির পরিবারের কাউকে না জানিয়ে মাইক্রোবাসে করে রংপুরে যান এবং শিশুটিকে উদ্ধার করে শনিবার ভোরের দিকে এলাকায় পৌঁছান। চেয়ারম্যান কালের কণ্ঠকে বলেছেন, রংপুর শহরের মুন্সীপাড়ায় অভিযুক্ত পুলিশের ভাড়া বাসা 'ক্ষণিকালয়' থেকেই উদ্ধার করে শিশুটিকে পরিবারকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। কাউকে না জানিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্লিনিক থেকে যে ডাক্তার তাঁকে ফোন দেন তিনি শিশুটির পরিচয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন না। তাই চেয়ারম্যান পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই রংপুরে যান।

আরজিনার স্বজনদের অভিযোগ, আয়শা বেগম নামের একজন নারী শিশুটিকে কৌশলে নিয়ে যান রংপুরে এবং ভাই এসআই আবু বক্করের ভাড়া বাসায় ওঠেন। স্বজনদের আরো দাবি, এসআইয়ের ছেলের দুটি কিডনি নষ্ট এবং আরজিনার কিডনি তাকে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এর প্রস্তুতি হিসেবেই ক্লিনিকে আরজিনাকে নেওয়া হয় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করার জন্য। তার মাথার চুলও কামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসকের সন্দেহ হলে তিনি আরজিনার সঙ্গে কথা বলেন এবং বুঝতে পারন তাকে অপহরণ করা হয়েছে।

সূত্র মতে, শিশুটি কোন এলাকার তা জানতে পেরে ওই চিকিৎসকই উলিপুরের ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে খবর দেন। পরে রাতে চেয়ারম্যান পুলিশের এসআইয়ের বাসায় গিয়ে শিশুটিকে নিয়ে আসেন। তবে তিনি সঙ্গে সঙ্গে বুঝিয়ে দেননি। এর পেছনে কী রহস্য ছিল জানতে চাইলে চেয়ারম্যান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রাতে আমি রংপুরে যাই এবং ফিরতেও অনেক দেরি হয়ে যায়।'

জানা যায়, চেয়ারম্যানের মাধ্যমে নানার বাড়ি ফিরে আরজিনা সবাইকে বলে, তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। শিশুটি আরো বলে, তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে কিছু পরীক্ষা করার চেষ্টা হয়েছিল। এরপর স্বজনদের সন্দেহ হয়, তার শরীরের কোনো অঙ্গ অন্য কাউকে দেওয়ার হীন উদ্দেশ্যেই হয়তো অপহরণ করা হয়েছিল। তবে এর পরও দরিদ্র পরিবারটি দুই দিন থানা-পুলিশকে জানায়নি ইউপি চেয়ারম্যানের আশ্বাসে বিশ্বাস করে। চেয়ারম্যান তাদের বলেছিলেন, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জরিমানা আদায় করে দেওয়া হবে। দুই দিনেও চেয়ারম্যান কোনো ব্যবস্থা না নিলে পরিবারটি মঙ্গলবার দুপুরে উলিপুর প্রেস ক্লাবে এসে বিষয়টি জানায়। এরপর সাংবাদিকরাই তাদের বলে পুলিশকে জানাতে।

সূত্র মতে, মা-বাবা, নানাসহ আরো অনেকে শিশুটিকে নিয়ে গত মঙ্গলবার উলিপুর থানায় যান। কিন্তু পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে। পরে রাতে তিনজনের নাম ও অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে পুলিশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৩০ ধারায় মামলা রেকর্ড করে। মামলা নম্বর ৩১।

শিশুটির বাবা আক্কাছ আলী বলেছেন, আমরা গরিব মানুষ। ঢাকায় থাইক্যা শ্রম বিক্রি করে খাই। মেয়েকে লেখাপড়া করাব বলে তার নানার বাড়িতে রাখি। শয়তানরা আমার নিষ্পাপ বাচ্চাকে মাইরা ফালানোর চেষ্টা করছিল।' শিশুটির নানা বলেছেন, 'ডাক্তার বিষয়টি না জানালে তো আমরা কিছুই জানতাম না।

উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ এস কে আব্দুল্লা আল সাইদ অপহরণ মামলা দায়ের হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, এসআই আবু বক্কর মামলা তুলে নেওয়ার জন্য শিশুটির পরিবারকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন। সূত্র: কালেরকণ্ঠ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ