মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ : অর্থোপার্জন, খরচ ও সঞ্চয়ের ব্যাপারেও মধ্যম পন্থার নির্দেশ ইসলামের। মনে রাখতে হবে, সঞ্চয় করতে গিয়ে যেন কৃপণের তালিকায় নাম না উঠে যায়। অনেকে মনে করেন, জন্মদিন, মৃত্যু দিবস, বিয়েবার্ষিকী দিবসের মতো বিভিন্ন দিবস-বার্ষিকীতে প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে নির্বিচারে ধারদেনা করে হলেও টাকা ওড়াতে পারাই ‘উদারতা’।
ক্রমবর্ধমান এসব খরচের জোগান দিতে আনুষ্ঠানিকতায় তাল মেলাতে কালো টাকার পেছনে দৌড়ানো, চোরাপথ আবিষ্কার করাও যেন দোষের নয়! পক্ষান্তরে যিনি হালাল-হারাম, পাপ-পুণ্য, প্রয়োজন-অপ্রয়োজন বিবেচনা করে খরচ করেন এবং অপব্যয় ও অপচয় থেকে বিরত থাকেন, তাকে মনে করা হয় ‘কৃপণ’। আসলে স্ত্রী, সন্তানসন্ততির ভরণপোষণ, বাবা-মার সব চাহিদা পূরণের মতো আল্লাহ নির্দেশিত খাতে খরচ করতে অবহেলা করাই কৃপণতা।
তাই হালাল-হারামের বিধিনিষেধ মেনে খরচকে সীমাবদ্ধ করে দিতে হবে। প্রাচুর্যের সময় খরচের উৎসবে মেতে না উঠে হারাম খরচ সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করে উদ্বৃত্ত অর্থ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা উচিত। যেন পরবর্তী সময়ে নিজের প্রয়োজনে অন্যের কাছে হাত পাতার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়।
পবিত্র কোরআনুল কারিমে এরশাদ হয়েছে, ‘তুমি (কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সঙ্গে বেঁধে রেখে একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না। আবার (অপব্যয়ী হয়ে) একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৯)।
সন্তানদের জন্য কিছু সঞ্চয় করাও ইসলামের শিক্ষা। সন্তানদের কারো মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়া নবীজি সা. কখনো পছন্দ করেননি। রাসুল সা. বলেন, ‘তোমার উত্তরাধিকারীদের মানুষের করুণার মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়ার চেয়ে তাদের সচ্ছল রেখে যাওয়াই উত্তম।’ (বোখারি : ১/৪৩৫)। ইসলাম সঞ্চয়কে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছে, তা আরও স্পষ্ট হয় রাসুলে করিম সা. এর এক হাদিস থেকে।
রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘উত্তম দান তা-ই, যা নিজ অভাবমুক্ততা রক্ষার সঙ্গে হয়।’ (বোখারি : ২/১১২)। কারণ যদি সমুদয় সম্পত্তি দান করে দেওয়া হয়, তাহলে কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে তা মেটাবে কোত্থেকে? কৃপণ না হয়ে মিতব্যয়ী হয়ে সঞ্চয় করলে হাজার কোটি টাকার মালিক হতেও ইসলাম বাধা দেবে না।
ইমাম আবু হানিফা রহ. ধনী ছিলেন।ইরাক, সিরিয়া ও হেজাজজুড়ে বিস্তৃত এলাকায় রেশমি কাপড়ের বিশাল ব্যবসা ছিল তাঁর। তাই তো তিনি রাষ্ট্রীয় হাদিয়া-তোহফার পরোয়া না করে নিজ উপার্জনে জীবিকা নির্বাহ, জ্ঞানের সেবা এবং গরিব শিক্ষার্থীদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করতেন। সঞ্চিত অর্থ থাকলেই তো অর্থনির্ভর সওয়াবের কাজগুলো করা যাবে।
রোজাদারকে ইফতার করানো যাবে। হাদিয়া আদান-প্রদান করা যাবে। শরিক হওয়া যাবে জনকল্যাণমূলক কাজে। অর্থ ব্যয় করে সদকায়ে জারিয়ার অফুরন্ত সাওয়াব হাসিল করা যাবে। আবার উদ্বৃত্ত অর্থ যখন নিসাব পরিমাণ হবে এবং তা বর্ষপূর্তি হবে, তখন জাকাতের মাধ্যমে সে সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ গরিবদের মধ্যে দান করে লাভ করবে।