বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

দেওবন্দের মহাসড়কে ভয়াবহ দুর্ঘটনা; নিহত ৮

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তাওহীদ মাদানী
দেওবন্দ থেকে

সাহরানপুর টু মুজাফফরনগর মহাসড়কে দেওবন্দস্থ রোডে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ৮জনের মৃত্যু এবং শিশু ও মহিলাসহ ৩০ জন আহত হয়েছে৷ আহতদের প্রথমিক চিকিৎসার জন্য মুজাফফরনগর হাসপাতালে নেয়া হয়৷ সেখানে অধিকাংশের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানানো হয়৷

ঘটস্থলে তৎখনাত পুলিশ এসে বিপর্যস্থ লোকদেরকে উদ্ধার করে আহতদের হাসপাতালে প্রেরণ করে৷ দুর্ঘটনাটা ছিলো খুবই ভয়াবহ৷ রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় ঘটনার পরপর৷ প্রায় এক ঘন্টা গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে ঐ রোডে৷ জানা যায় গাড়িটি সাহরানপুর থেকে মুজাফফরনগরের দিকে যাচ্ছিল৷ দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছিল বাসটি৷ অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দ্রুতগামী একটি ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হয়৷

এই খবর লেখার সময় পর্যন্ত আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ দুর্ঘটনায় দারুল উলুম দেওবন্দের নাযেমে মাতবাখ তথা বর্ডিং ম্যানেজার সুরুর আহমদের ছেলে মুহাম্মাদ ওয়াসীম আখতারেরও (৩৩) মৃত্যু হয়৷ ওয়াসীম আখতার দেওবন্দের মুসলিম ফান্ডের ক্যাশিয়ার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে খেদমতরত ছিলেন৷

আশঙ্কা আছে আহতদের মাঝ থেকে আরো কয়েকজনের প্রাণ নাশের৷ বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষটা এতই মারাত্মক ছিলো যে বাসের ডান পার্শ পুরোপুরি মুচড়ে ভেঙ্গে যায়৷ জানা যায় উক্ত দুর্ঘটনায় বাসযাত্রী ছাড়াও কিছু পথচারী আহত হয়৷ দুর্ঘটনার পরে পুলিশ চৌকি ছাড়া এলাকার লোকজনও বিপর্যস্তদের সেবায় এগিয়ে আসে৷

দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুরো দেওবন্দে শোকের বন্যা বয়ে যায়৷ যেহেতু মুসলিম ফান্ড একটি সেবামুলক সংস্থা তাই এর ক্যাশিয়ারের ছিল যথেষ্ট নাম যশ৷ ছিলেন তিনি সকলের প্রিয় পাত্র ও আস্থাভাজন৷ তাই এলাকা জুড়েই বয়ে যায় শোকের বন্যা৷ বহু সংখক লোকে দেওবন্দস্থ মহল্লায়ে বরজিয়াউল হকে জনাব সুরুর আহমদের বাসায় উপস্থিত হয়ে তাকে সান্ত্বনা বাণী শুনান৷

উল্লেখ্য, মুসলিম ফান্ড ১৯৬১ সনে গঠিত একটি সেবা মুলক সংগঠন৷ প্রতিষ্ঠাতা জনাব হাসিব সিদ্দিকী৷ উদ্দোক্তা মাওলানা সাইয়েদ আসাদ মাদানী রহ.৷ ১৯৬১ সনের শুরুর দিকে আওলাদে রাসূল সাইয়েদ আসাদ মাদানী রহ. চিন্তা করেন সমিতির মতো এমন একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা দরকার যেখানে ধনী ব্যক্তিরা তাদের টাকা-পয়সা, আসবাব পত্র ইত্যাদি আমানত স্বরূপ জমা রাখবে এবং এই প্রতিষ্ঠান জমাকৃত সামান ও টাকা পয়সা হেফাজত করবে৷

প্রতিষ্ঠানটি গঠন করা হয়েছে যেনো স্বচ্ছল ব্যাক্তিরা তাদের খরচের অতিরিক্ত টাকাগুলো ঘরে না রেখে না অন্য কোথাও জমা রাখতে পারে৷ জমাকৃত টাকা পয়সা যখন যার দরকার হবে উঠিয়ে নিবে কোনো মুনাফা ব্যতীত৷ পাশাপাশি অন্য গরীবদেরও ফায়দা হবে৷ গরীব ব্যাক্তিগণ এই প্রতিষ্ঠান থেকে চাইলে করয নিতে পারবে৷ প্রয়োজন পূরা করে আবার ফেরত দিবে৷ করয নেয়া ও জমা দেয়ায় কোনো অতিরিক্ত চার্জও ধরা হবে না এখানে৷

পার্লামেন্ট সিকিউরিটি নিয়েই এখানে টাকা জমা রাখা হয়৷ এটা কোনো ব্যাংকিং কার্যক্রম নয়৷ এটা সুদবিহীন একটি প্রতিষ্ঠান৷ সম্পূর্ণভাবে মুসলমানদের সেবার জন্যই গঠিত৷ বলতে গেলে এক ভাইয়ের উপকারে অন্য ভাই এগিয়ে আসার একটি মাধ্যম৷ বর্তমানে এখানে ৫০কোটি টাকা জমা আছে৷ আর একাউন্ট আছে প্রায় ৮০ হাজার৷

এই কাজে হিন্দু মুসলিম অনেকেই এগিয়ে আসছে৷ ফলে বহু হিন্দুদেরও টাকা আছে এখানে৷ হিন্দু মুসলিম দল মত নির্বিশেষে সবার প্রতিই সেবার হাত বাড়ানেো হয় এই প্রতিষ্ঠান থেকে৷ মুসলিম ফান্ড নাম হলেও এটা মুসলমানদের জন্য খাস নয়৷ এখানে দলমত নির্বিশেষে সেবা দেয়া হয়৷

৫৭ বছর চলছে এই প্রতিষ্ঠানের৷ সোনা রুপাসহ সব কিছুই জমা রাখা হয় এই প্রতিষ্ঠানে৷ এই প্রতিষ্ঠান শুধু দেওবন্দ ও তার আশ পাশের লোকদের জন্যই গঠিত৷ দূরের লোকদের জন্য নয়৷ যারা জমা রাখে তারাও কোনো মুনাফা পাবে না৷ যারা করয নিবে তাদেরও কোনো অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে না৷ যে কেনো ধরনের আসবাব পত্রও করয দেয়া হয় এখান থেকে৷

-এজেড


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ