বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

'বন্দে মাতরম' নিয়ে নতুন বিতর্ক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম : ভারতের রাষ্ট্রগীত বা ন্যাশনাল সং 'বন্দে মাতরম' সে দেশের মুসলিমদেরও গাওয়া উচিত কি না - আজ মাদ্রাজ হাইকোর্টের একটি রায়ের পর সেই বিতর্ক নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে।

হাইকোর্ট আজ নির্দেশ দিয়েছে, তামিলনাডুর সব স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তাহে অন্তত একবার করে বন্দে মাতরম গাইতেই হবে - আর তার পরই এই রায়ের প্রতিবাদে সরব হয়েছে দেশের বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন, যারা মনে করছে এই গানটি ইসলামবিরোধী।

দেশের শাসক দল বিজেপি অবশ্য বলছে, এটি একটি জাতীয়তাবাদী চেতনার গান - এখানে ধর্মকে টেনে আনাটা দুর্ভাগ্যজনক।

প্রায় ১৪০ বছর আগে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'বন্দে মাতরম' গানটি নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিতর্কের বয়সও প্রায় সমান পুরনো।

সমালোচকরা অনেকে বলে থাকেন, আনন্দমঠ উপন্যাসে ব্যবহৃত এই গানটি আসলে হিন্দু ধর্মীয় চেতনায় লেখা রণসঙ্গীত - ভারতের মুসলিম সমাজ এটিকে কখনওই আপন করে নিতে পারেন নি।

তবে তা সত্ত্বেও ১৯৫০ সালে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রগীতের স্বীকৃতি পায় এই বন্দে মাতরম - যদিও তাতে বিতর্ক থামেনি।

এই গানটি বাংলা ভাষায় লেখা না সংস্কৃতে, তা নিয়ে হওয়া এক মামলায় আজ মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায় সেই বিতর্কে নতুন করে ইন্ধন জুগিয়েছে।

তামিলনাডুর সব স্কুল-কলেজে সোমবার বা শুক্রবার এই গানটি গাইতেই হবে, আদালতের এই রায় সামনে আসার পরই প্রতিবাদে ফেটে পড়েন অল ইন্ডিয়া ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান মৌলানা সাজিদ রশিদি।

তিনি বলেন, "বন্দে মাতরমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে - কারণ প্রশ্নটা এখানে হিন্দুস্তানকে ভালবাসার নয়। বিষয়টা হল এই দ্বীন-দুনিয়ার যিনি পালনকর্তা খোদা - তাকে ছাড়া আমরা কাউকে কখনও বন্দনা করতে পারি না, পারব না।"

বিরোধী কংগ্রেসের এমপি রঞ্জিতা রঞ্জনও বলেন, আদালত কাউকে দিয়ে জোর করে বন্দে মাতরম গাওয়াতে গেলে তাতে হিতে বিপরীত হবে।

আদালতের এই রায় জুডিশিয়াল ওভার-অ্যাক্টিভিজম বা বিচার বিভাগীয় বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পড়ে বলেও মন্তব্য করেন কোনও কোনও পর্যবেক্ষক।

সন্ধ্যার মধ্যেই ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ে বিতর্কিত ধর্মপ্রচারক জাকির নাইকের পুরনো একটি ভিডিও ক্লিপ, যেখানে তিনি বলছেন শুধু মুসলিমরা নন - হিন্দুদেরও আসলে বন্দে মাতরম বয়কট করা উচিত।

জাকির নাইককে সেখানে বলতে শোনা যায়, "বন্দে মাতরমে অন্তত তিনবার মাতৃভূমির কাছে মাথা নোয়ানোর কথা বলা আছে। এমন কী হিন্দুধর্মও কিন্তু সর্বশক্তিমান ঈশ্বর ছাড়া অন্য কারও কাছে মাথা নোয়ানোর অনুমতি দেয় না। আর মুসলিমদের তো এই গান গাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না - কারণ এটি কোরান-বিরোধী।"

তবে ঘটনা হল, এই ধরনের বিতর্ক সত্ত্বেও বন্দে মাতরম গানটি আধুনিক ভারতে নতুন করে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে - যার পেছনে আসে বছর কুড়ি আগে এ আর রহমানের তৈরি করা একটি ভার্সন। এ আর রহমান নিজেই একজন তামিল মুসলিম।

এছাড়া গত প্রায় পঁচিশ বছর ধরে ভারতে পার্লামেন্টের প্রতিটি অধিবেশনও শুরু হয় বন্দে মাতরম দিয়ে।এই সব যুক্তি তুলে ধরেই বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলছেন, রাষ্ট্রগীতের বিরোধিতায় ইসলামকে টেনে আনাটা একেবারেই অনুচিত।

তার বক্তব্য, "একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্দে মাতরম হিন্দুস্তানের মর্মসঙ্গীত, হৃদয়ের গান। ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ যখন বঙ্গভঙ্গের চেষ্টা করেছিল, তখন হিন্দু-মুসলিম একসাথে এই গান গেয়েই তার বিরোধিতা করেছিল। ভাবতেও খারাপ লাগে, রাষ্ট্রবাদিতার মন্ত্র এই গান নিয়েও ধর্মীয় বিতর্ক হচ্ছে?"

বিজেপি আরও বলছে, তিন তালাকের মতো সামাজিক বিষয়, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মতো সাংবিধানিক বিষয় কিংবা ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির মতো জাতীয় নিরাপত্তার মতো বিষয়কে যারা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে দেখেন - তারাই আজ বন্দে মাতরমের বিরোধিতা করছেন।

ভারতের মুসলিম ধর্মগুরুরা অবশ্যই এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন, কারণ এই মাতৃবন্দনা তাদের মতে ঘোর ইসলাম-বিরোধী।

-এজেড


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ