আওয়ার ইসলাম: দক্ষিণ-পশ্চিম সাগরে চীন ক্রমশ তাদের ক্ষমতা বিস্তার করছে। এ নিয়ে ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন জাপান। কিন্তু এ সময় জাপানের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। আর এই চীনা আগ্রাসনের আশঙ্কা রুখতে এবার ভারতকেও পাশে পেতে চায় আমেরিকা। বুধবার কলকাতার আমেরিকান সেন্টারের লিঙ্কন রুমে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদেশনীতি সম্পর্কে এমনটাই জানালেন জাপানের কোবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমেরিকা-জাপান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক তোশ মিনোহারা।
দক্ষিণ চিন সাগরের বুকে ইতিমধ্যে সাতটি কৃত্রিম দ্বীপ গড়ে ফেলেছে চীন। ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয় সেগুলির নির্মাণ কাজ। দ্বীপগুলিকে সামরিক ও পরিকাঠামোগত ভাবে সেনা ঘাঁটি বানানোর উদ্দেশেই প্রকল্পের পরিকল্পনা করে বেইজিং। প্রতিটি দ্বীপে রয়েছে যাতায়াতের সুবিধার জন্য খাঁড়ি, হেলিপ্যাড, রাডার সেবা, মিসাইল ও ভারি আগ্লেয়াস্ত্র বসানোর ব্যবস্থা, বন্দর, সেনা উপস্থিতি এবং আরও কিছু সুচিন্তিত বন্দোবস্ত। আসলে ভারত মহাসাগরের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে আমেরিকার আধিপাত্যে হানা দিতেই দক্ষিণ চীন সাগরে নিজের আধিপত্য বিস্তার করছে চীন বলে মনে করা হচ্ছে।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা নৌসেনাদের জোরালো উপস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই ভাবিয়ে তুলেছে প্রতিবেশী জাপানকে। ইতিহাস বলে ১৯৩১ সালে উত্তর-পূর্ব চিনের মাঞ্চুরিয়া দখল করতে একই রকম আগ্রাসনের ছক একেছিল জাপান সরকার। সেই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রেলপথের ওপর এক খুদে বিস্ফোরণকে হাতিয়ার করেই 'জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ' মেনে মাঞ্চুরিয়া দখল করে জাপানের সেনাবাহিনী।
বর্তমানে সাগরে চীনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় সে কারণেই যথেষ্ট উদ্বিগ্ন টোকিও। চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিপাইন, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও ব্রুনেইয়ের সঙ্গে এককাট্টা হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে জাপান। এর মধ্যে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে দক্ষিণ চীন সাগর অঞ্চলের জলসীমা নিয়ে চিন ও ফিলিপাইনের দীর্ঘ দ্বন্দ্বের জেরে চীনের বিপক্ষেই রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল।
সাগরে চীনা সেনাদের জোরদার মহড়া চিন্তা ফেলে দিয়েছে আমেরিকাকেও। বাণিজ্যিক আধিপাত্যে ভাগ বসানোই শুধু নয়, চীনের আগ্রাসী পরিকল্পনার জেরে নিরাপত্তার চিন্তাও ভাবাচ্ছে ওয়াশিংটনকে। এই অবস্থায় জাপান ও আমেরিকার বন্ধুত্ব স্বাভাবিক কারণেই মজবুত হয়েছে। চীনা নৌবাহিনীর গতিবিধি দক্ষিণ চিন সাগরের সীমা যাতে অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়, সেই ব্যবস্থাই নিতে চায় এখন তারা।
এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের প্রহর গুণতে হয়েছে আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে। তবে এ ব্যাপারে তিনি যথেষ্টই নরমপন্থী ছিলেন বলে অনেকেই দাবি করেন। কিন্তু চীনের আগ্রাসনের প্রতি সহিষ্ণুতা প্রশ্নে তার মতোই কি উদার হবেন কিনা আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এটাই এখন দেখার বিষয়।
অধ্যাপক মিনোহারার কিন্তু তা মনে হয় না। তার মতে, চিরাচরিত রীতির তোয়াক্কা না করে যে ভাবে রাজনীতিতে হাতেখড়ি করার পরেই নির্বাচনে পোড়খাওয়া হিলারি ক্লিন্টনকে উড়িয়ে দিয়ে ক্ষমতার আসনে বসতে সফল হয়েছেন ট্রাম্প, তাতে চীনের বিদেশনীতি প্রসঙ্গে তিনি কতটা ধৈর্য্যশীল হবেন, তা নিয়ে তর্কের অবকাশ থাকতেই পারে।
মিনোহারার আশঙ্কা, বেইজিংয়ের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসে মদতকারী পাকিস্তানের গলাগলিও ভালো নজরে দেখবেন না নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। চীন-পাকিস্তানের পরিকল্পনা বানচাল করতে এই কারণে ভারতের দিকে তাকিয়ে আমেরিকা ও জাপান দু' দেশই। তারা চায়, নিরপেক্ষতার অবস্থান ছেড়ে নিজ স্বার্থেই ভারত জোরালো পদক্ষেপ করুক।বাংলাদেশ প্রতিদিন
ডিএস