আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের যে সীমান্তরেখা রয়েছে, সেখানে ৪২ হাজার সীমান্ত পিলার রয়েছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যেসব পিলার রয়েছে, সেগুলোর অন্তত ৬ হাজার পিলারের এক পাশে ইংরেজিতে খোদাই করে লেখা রয়েছে ‘ইন্ডিয়া’; আরেক পাশে লেখা রয়েছে ‘পাক’, অর্থাৎ পাকিস্তান।
বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন, সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের পথচলা শুরু হয়েছে ৪৫ বছরেরও বেশি সময় আগে। কিন্তু এতদিন পরও এই বিপুলসংখ্যক সীমান্ত পিলার থেকে ‘পাক’ লেখা অপসারণ করা হয়নি। এ ঘটনা দেশের জন্য লজ্জাজনক হিসেবে অভিহিত করেছেন একাধিক মুক্তিযোদ্ধা।
সর্বশেষ সীমান্ত পিলার থেকে ‘পাক’ লেখা অপসারণ করতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাব অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সীমান্তে যে কোনো জিনিস পরিবর্তন করতে সময় লাগে। কারণ এক্ষেত্রে উভয় দেশের সম্মতি প্রয়োজন। যেসব পিলারে পাক লেখা রয়েছে, সমন্বয়ের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সেসব পিলার থেকে শব্দটি অপসারণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি পরিদর্শনকালে দেখেছি, অনেক জায়গায় সীমান্ত পিলারই নেই। আমরা সেখানে পিলার স্থাপন করেছি।
জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় ৪২ হাজার সীমান্ত পিলার স্থাপনের মাধ্যমে ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানের সীমানা ভাগ করা হয়। প্রতিটি পিলারে ইংরেজিতে খোদাই করে ইন্দ-পাক (ওঘউ-চঅক) লেখা। পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। এর পর ক্ষমতায় এসেছে অনেক সরকার। কিন্তু সীমান্ত পিলারে ‘পাক’ লেখা রয়েই গেছে। এসব পিলার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে আঘাত করে।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (জরিপ) আনোয়ার হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, যেসব সীমান্ত পিলারে এখনো ‘পাক’ লেখা রয়েছে তা পর্যায়ক্রমে অপসারণের কাজ চলমান রয়েছে। অপসারণ করতে দুপক্ষের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকা লাগে। এ নিয়ে প্রতিবছরই ভারতের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হচ্ছে। আর পর্যায়ক্রমে অপসারণ চলছে। আমরা একা চাইলেই কোনো সীমান্ত পিলার থেকে ‘পাক’ লেখা অপসারণ করতে পারি না।
বিজিবির হিসাব অনুযায়ী, মোট ৬ হাজার ২৪টি সীমান্ত পিলারে এখনো ‘পাক’ লেখা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ৫ হাজার ৫০২টি টি পিলার, ৫টি আর পিলার, ৪৫৫টি সাব-পিলার এবং ৬২টি মেইন পিলার। সবচেয়ে বেশি রয়েছে যশোর, সাতক্ষীরা ও চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে। এই তিন জেলার সীমান্তের ২ হাজার ৩৮১ পিলারে পাক লেখা রয়েছে। এর পর নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও জামালপুর সীমান্তে সর্বাধিক ১ হাজার ২৭৯টি সীমান্ত পিলারে পাক লেখা রয়েছে; রয়েছে কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, নওগাঁ, রংপুর, লালমনিরহাট, সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্তে স্থাপিত সীমান্ত পিলারেও।
বিজিবি সূত্র বলছে, যশোরের শার্শা উপজেলার শালকোনায় পশ্চিম পাশের মাঠে স্থাপিত দুটি সাব-পিলার বাংলাদেশ-ভারতের সীমানা ভাগ করেছে। এখানে ৩৫ নম্বর মেইন পিলারের আওতাধীন ৩ ও ৪ নম্বর সাব-পিলারের এক পাশে ইংরেজিতে ‘ইন্ডিয়া’ লেখা অন্য পাশে ‘বাংলা’। এই দুই সাব-পিলারের সংযোগকারী লোহার টি পিলারে এক পাশে ইন্ডিয়া লেখা থাকলেও অন্য পাশে পাক লেখা রয়েছে। যশোরের চৌগাছা, শার্শা, ঝিকরগাছাসহ এই অঞ্চলের বেশিরভাগ সীমান্ত ভাগকারী পিলারে পাক লেখা রয়েছে।
ডিএস