হাওলাদার জহিরুল ইলসাম
দেওবন্দ থেকে
উম্মুল মাদারিস দারুল উলুম দেওবন্দের প্রয়াত শায়খুল হাদিস আল্লামা আবদুল হক আজমি রহ. এর রুহের মাগফিরাত কামনায় দেওবন্দে ইসালে সওয়াব দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ স্থনীয় সময় বিকেল ৩টায় কদিম দারুল হাদিসের নিচতলায় প্রথমে কুরআন ও কালেমায়ে তাইয়্যেবার খতম পড়া হয়৷
পরে সিনিয়র মুহাদ্দিসদের মধ্যে আল্লামা কমরুদ্দিন প্রয়াত আল্লামা আজমি সম্পর্কে স্মৃতিচারণমূলক সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন৷
আল্লামা আজমির দীর্ঘ দিনের সাথী সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা হাবিবুর রহমান আজমি স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি হজরত আবদুল হক সাহেবকে অত্যন্ত কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি৷ তার মতো গভীর জ্ঞানের অধিকারী হাদিস বিশারদ কমই দেখেছি৷ তিনি যৌবনে ইলমে হাদিস, ইলমে ফিকহের জন্য যে পরিমাণ পরিশ্রম করতেন তার তুলনা খুঁজে পাওয়া মুশকিল৷ তিনি কতো বড় মাপের আলেম ও মুহাদ্দিস ছিলেন তা এখনকার কেউ বুঝতে পারবে না৷ শেষ বয়সে হজরত অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার ইলমি রওনক আপনারা দেকতে পারেন নি৷’
তিনি আরো বলেন, ‘মাওলানা আবদুল হক আজমি অত্যন্ত অমায়িক ব্যক্তি ছিলেন৷ তিনি কারো প্রতি রাগ করে থাকতে পারতেন না৷ কোনো কারণে অসন্তুষ্ট হলে পাঁচ মিনিট পরেই স্বাভাবিক হয়ে যেতেন৷’ এসময় তিনি বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন৷ ছাত্রদের চোখও অশ্রুতে ভিজে ওঠে তখন৷
নিজেকে সামলে নিয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘নবীদের ব্যতীত দুনিয়ার কেউই মাসুম(ভুলের উর্ধ্বে) নন৷ তাই জনাবের থেকে হুকুুকুল ইবাদের ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি হলে সবাই তাকে মাফ করে দিয়ে তার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবেন৷ আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না৷ কথা বের হচ্ছে না ভেতর থেকে৷ হজরতের ইন্তেকালে আমি কী পরিমাণ শোকাহত তা কাউকে বলে বুঝাতে পারবো না৷’ এ বলে তিনি কথা শেষ করেন৷
শেষে হজরত মুহতামমি আল্লামা আবুল কাসেম নোমানি দোয়ার পূর্বে বলেন, ‘যিনি চলে যান তার জায়গা খলি করেই যান৷ কেউ তার জায়গা পূরণ করতে পারে না৷ যিনি পরবর্তীতে আসেন তিনি নিজের অবস্থান নিয়েই আসেন৷’
আরো বলেন, ‘মাওলানা আবদুল হক সাহেব যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকেন তাহলে তাকে ক্ষমা করে দিবেন৷ তার জন্য দোয়া করবেন৷ আর তাকে যদি কেউ কষ্ট দিয়ে থাকেন তাহলে তার জন্য বেশি বেশি ইসালে সওয়াব করে তার থেকে ক্ষমা পাওয়ার ব্যবস্থা করে নিতে পারেন৷ যেহেতু মুত্যুর পর তার থেকে সরাসরি ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ নেই তাই তার আমল নামায় সওয়াব পৌঁছালে কিয়ামত দিবসে তিনি খুশি হয়ে মাফ করে দিবেন বলে হাদিসে এর প্রমাণ রয়েছে৷’
মোনাজাত পরিচালানা করেন হজরত মুহতামিম সাহেবই৷ এসময় পুরো দারুল হাদিস কক্ষ আমিন আমিন রবে মুখরিত হয়ে ওঠে৷ অশ্রুভেজা নয়নে উপস্থিত উলামা-তলাবা আল্লামা আজমি রহ.এর মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন৷
এর আগে আজ সকালে হজরত মুহতামিম সাহেবের দফতর থেকে এক জরুরি নোটিশ জারি করে দারুল উলুম দেওবন্দের সকল ছাত্রকে বিকেল তিনটায় কদিম দারুল হাদিসে উপস্থিত থাকার জন্য আদেশ করা হয়৷ এ উপলক্ষে আজকের ৬ষ্ঠ ঘণ্টার দরস মওকুফ রাখা হয়৷
ইসালে সওয়াব দোয়া অনুষ্ঠানে দারুল উলুমের মুহতামিম আল্লামা আবুল কাসেম নোমানি, নায়েবে মুহতামিম, মাওলানা আবদুল খালেক সাম্ভলী, মাওলানা আবদুল খালেক মাদরাসি, আল্লামা কমরুদ্দিন সাহেব, আল্লামা নেয়ামাতুল্লাহ আজমিসহ প্রায় সব উস্তাদ উপস্থিত ছিলেন৷ এছাড়া অন্যান্য মাদরাসার মুহতামিম ও উস্তাদবৃন্দ এবং দেওবন্দের সাধারণ মুসল্লিগণও অংশ গ্রহণ করেন৷ বিকেল চারটার দিকে দোয়া অনুষ্ঠান শেষ হয়৷
উল্লখ্য গত ৩০ ডিসেম্বর দারুল উলুম দেওবন্দের দীর্ঘ ৩৫ বছরের শায়খে সানী হজরত আল্লামা আবদুল হক আজমি (রহিমাহুল্লাহু) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ইহজগতের মায়া ত্যাগ করে রব্বে কারিমের ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমান৷
আরআর