সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠন করলে দেশের সকল রাজননৈতিক দল নিষিদ্ধ করলেও আলেমদের রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে নিষিদ্ধ করেন নি। কী কারণে? কোন রহস্য ছিল এর পেছনে? এই ইতিহাস খুঁজতে গেলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর কিছু ঘটনা প্রবাহ। দেশপ্রেমে উজ্জেবিত আলেম সমাজ সব সময় সংখ্যাগরিষ্ঠ সেন্টিমেন্টের পক্ষে কথা বলেছেন। অন্যায়ের পতিবাদ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের রাজনৈতিক এই দলটির অসামান্য সাহসী ভুমিকার কারনে আলেম উলামাও জমিয়তের প্রতি ছিলেন গভীর শ্রদ্ধাশীল।
৭০-এর নির্বাচনে পিপলস পার্টি পরাজয় এবং আওয়ামীলীগের বিজয় হলে পিপলস পার্টি নেতা জুলফিকার আলী ভূট্টো বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে অসম্মতি প্রকাশ করে বলেছিলেন-‘যারা জাতীয় পরিষদের বৈঠকে ঢাকায় যাবে তাদের পা ভেঙে দেওয়া হবে’। তখন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতারা জোর প্রতিবাদ করে বলেছিলেন- ‘বর্তমান সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় জাতীয় পরিষদের বৈঠক আহ্বান এবং সংবিধান ও আইন বিষয়ক সকল বিষয়ই জাতীয় পরিষদে মীমাংসা করা’-(ক্বাইদে জমিয়ত মুফতি মাহমুদ, আশফাক হাশেমী)।
৭০- এর নির্বাচনের মাস-দিন পর অর্থাৎ ১৩ জানুয়ারি ১৯৭১-এ জেনারেল ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার পর যখন নিশ্চয়তা পেলেন যে, শেখ মুজিবুর রহমানকর্তৃক সরকার গঠিত হলেও তিনি নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকবেন, তখন ঘোষণা করেছিলেন- ‘শেখ মুজিবুর রহমান দেশের নির্বাচিত দলের প্রধান হিসেবে আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী। এতএব, রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে তার সিদ্ধন্তটাই চূড়ান্ত।’ কিন্তু ঢাকা থেকে ফেরার পথে দু’জন উর্ধ্বতন সেনা অফিসারসহ জেনারেল ইয়াহিয়া খান ভূট্টোর সাথে ‘লারকানা’ এলাকাতে গিয়ে গোপন বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ঘোষণা দিলেন-‘শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর ও সংবিধান রচনার জন্য পূর্ব ও পশ্চিম-পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ উভয় দলের সমঝোতা পূর্বশর্ত।’ এই ফর্মূলা মূলত ছিলো পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভূট্টোর, পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য যা ছিলো যথেষ্ট। এক দেশে দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয় কীভাবে? এই প্রশ্ন উঠিয়ে তখন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মুফতি মাহমুদ, ন্যাপ নেতা ওয়ালী খান এবং শেখ মুজিবুর রহমান কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে বলেছিলেন-‘এমন উক্তি দেশকে দু-ভাগে বিভক্ত করার সমতুল্য।
এফএফ