মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ।। ২৮ মাঘ ১৪৩১ ।। ১২ শাবান ১৪৪৬

শিরোনাম :
১৯ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ির কেন্দ্রীয় ইসলামী মহা সম্মেলন সফল করতে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত ১৪ ফেব্রুয়ারির অশ্লীলতা রোধে কচুয়ায় স্কুলে স্কুলে ক্যাম্পেইন বইমেলায় 'জয় বাংলা' স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধর এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের উসকানিমূলক বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে : সাধারণ আলেম সমাজ মৌলভীবাজারে ইমাদদুদীন অ্যাকাডেমির টেলেন্ট সার্চ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত শাহপরানে ইনসান এইড’র বয়স্ক, বিধবা ওঅসহায়দের মধ্যে নগদ অর্থ বিতরণ রাষ্ট্র কাঠামোর ধ্বংসপ্রাপ্ত অঙ্গগুলো পুনর্গঠন করা হবে : আসিফ মাহমুদ ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন ছাড়া  শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় : মাওলানা ছিদ্দিকুর রহমান শতাব্দি ভবকে গ্রেপ্তার ও উপদেষ্টা মাহফুজের বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে- বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস  নোয়াখালীতে ট্রাক চাপায় প্রতিবন্ধী নারীর মৃত্যু খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় মাদ্রাসা আগুনে পুড়ে ছাই

‘ডেভিল’ যেন পালাতে না পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সারা দেশে চলমান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে যেন কোনো ‘ডেভিল’ (অপরাধী) পালাতে না পারে।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগবিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই অবহিত আছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর, দুষ্কৃতকারী, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে। কিন্তু তাদের দোসররা দেশে-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র করছে।’


ফ্যাসিবাদীরা, তাদের দোসররা এ দেশের জনগণের সম্পদ অন্যায়ভাবে লুটপাট করে অঢেল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ইতিপূর্বে যারাই ফ্যাসিবাদীদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, তাদের দেশদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হয়েছে। দলীয় বাহিনী, অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যায়ভাবে মামলা-হামলা দিয়ে হেনস্তা করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ফ্যাসিবাদীরা গণমাধ্যমগুলো দখল ও নিয়ন্ত্রণ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে শায়েস্তা করেছে। অনুগত পুঁজিবাদী শ্রেণি তৈরি করে সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। সিভিল সার্ভিস ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে। আদালতের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। এককথায় ফ্যাসিস্ট সরকার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে। এখন ফ্যাসিবাদীরা বিগত ১৬ বছরের অর্জিত অবৈধ সম্পদ ব্যবহার করে অপশক্তির সম্পৃক্ততায় নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। 
এছাড়াও তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সন্ত্রাসী, নরহত্যায় জড়িত বিশেষ হেলমেট বাহিনী, ফৌজদারি অপরাধে সম্পৃক্ত ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসররা, অর্থ পাচারকারী, লুণ্ঠনকারী, ষড়যন্ত্রকারী, দুষ্কৃতকারী, রাষ্ট্রদ্রোহী, দুদকের মামলায় আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ, র‍্যাব, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আইনি প্রক্রিয়ায় এসব অপরাধীদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যককে গ্রেপ্তার করেছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপতৎপরতাকারী ও তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযান শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সারা দেশের অভিযান-সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক কার্যক্রম তদারকি করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন পুলিশ সদর দপ্তরে স্থাপিত ‘জয়েন্ট অপারেশন সেন্টারের’ মাধ্যমে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করা হবে।

মহানগর এলাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলা পর্যায়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এই অভিযান পরিচালনায় সমন্বয় করবেন বলে উল্লেখ করেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, সিএমএম আদালত, এমএম আদালত, সিজেএম আদালত, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকেরা, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা, স্পেশাল আদালতের বিচারকেরা, আদালতে সরকার পক্ষের আইনজীবীরা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এই অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য নিয়োজিত রয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৮ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদায়ন করেছে, অপরাধীদের বিরুদ্ধে সামারি ট্রায়ালের (সংক্ষিপ্ত বিচার) জন্য। আপনারা (পুলিশ) দক্ষ ও প্রশিক্ষিত সচেতন নাগরিক। আপনাদের দেশের জনগণ, সরকার ও নিজ নিজ দায়িত্বের প্রতি জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা ও কমিটমেন্ট রয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আপনাদের অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় ভূমিকা পালন করা দরকার। কোনো অপরাধীকে রাস্তায়, বাজারে, মাঠে, ময়দানে, রাজপথে দেখতে চাই না। প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।  তাদের বিচার নিশ্চিত করতে চাই।’

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আইনজীবীদের বলব, আপনারা আদালতে দায়েরকৃত প্রতিটি মামলার ধার্য তারিখে উপস্থিত থাকুন। প্রসিকিউটিং এজেন্সির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে পর্যাপ্ত তথ্য দিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ রাখুন। কোনোভাবেই যেন কোনো সন্ত্রাসী জামিন না পায়, সর্বোচ্চ সতর্ক থাকুন। প্রয়োজনে আইজিপির (পুলিশ মহাপরিদর্শক) টিম মামলাভিত্তিক অগ্রগতি নিয়ে পাবলিক প্রসিকিউটরদের সঙ্গে ১৫ দিন পরপর বসতে পারেন।’

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পরের বিষয়গুলো অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। পতিত ফ্যাসিস্টরা লাখ লাখ কোটি টাকা খরচ করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। হুটহাট কাউকে জামিন দেওয়া যাবে না। আবার যিনি জামিনের যোগ্য, তাঁকে জামিন থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। কেউ যেন জামিন নিয়ে বের হয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

আসিফ নজরুল আরও বলেন, ১৫ বছর অরাজকতা হয়েছে। ১৫ বছরের প্রতিটা হত্যার বিচার করা হবে। হত্যার বিচার করা ছাড়া এই পদে থাকার মানে হয় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সঠিকভাবে কাজ করলে মবতন্ত্র কমে যাবে। সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।

অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে ব্যবহার করা হয়েছে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য। দেশের মানুষকে মুক্তি দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সব সেক্টরে সংস্কার দরকার। কারণ সব সেক্টরকে ধ্বংস করা হয়েছে। ন্যায়ভিত্তিক কাজ করতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত গুমের ঘটনা যেন আর না ঘটে। বিচারবহির্ভূত হত্যা যেন আর না ঘটে। অপরাধীকে যেন আইনের আওতায় এনে বিচার করা যায়। মানবাধিকার করে পুলিশিং সম্ভব। যে আদালত ভিন্নমত দমনে জেলখানাকে ব্যবহার করবে না, তেমন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ