শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ ।। ২৮ চৈত্র ১৪৩১ ।। ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাড়িতে বাবার লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল নাহিদ মানবতার জন্য আপনিও আসুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে: শায়খ আহমাদুল্লাহ ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার: বিএনপি মাদরাসাছাত্রদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কাজ করছে এনসিপি : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর এখন সশস্ত্র ল’ড়াই ফরজ: মুফতি তাকি উসমানি ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান শায়খে চরমোনাই’র নড়াইলে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা মামলায় আ. লীগের ৪৮ নেতাকর্মী কারাগারে বিনা খরচে আরও কর্মী নেবে জাপান, সমঝোতা স্মারক সই সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সেই বিতর্কিত ব্যক্তি আটক জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল, নাম নির্ধারণ

সাহাবী কবিদের কবিতা


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
প্রতীকী ছবি

|| হাসান আল মাহমুদ ||

আরবদের আক্ষরিক জ্ঞান না থাকলেও প্রজ্ঞা ও প্রতিভায় ছিল তারা অনন্য। গদ্য-পদ্য দু’ধারার সাহিত্য চর্চায় ছিল তারা সিদ্ধহস্ত। তাদের সাহিত্যটা লেখ্যরুপ ছিল না; ছিল কথ্যরুপ। অবশ্য সাহিত্যের মধ্যে পদ্য বা কবিতা ছিল তাদের প্রধানতম। ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যম এ কবিতা দিয়েই তারা বড়াই করতে পারতো। কবি ছিল তাদের সবচে সম্মানী ব্যক্তি। যে গোত্রে একজন কবি থাকতো, তাকে বিবেচনা করা হত গোত্রের মর্যাদা-সম্মান রক্ষার নায়ক। কারণ কবিতার মজমা ছাড়াও তাদের প্রায় প্রত্যেকটা যুদ্ধের আগে কবিতা দিয়ে যুদ্ধ হত। কবিতার যুদ্ধে হারা ছিল বংশের মর্যাদা-সম্মান হারানো। সে যাই হোক, ইসলাম আসার পরে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অনেক কবিও ইসলামে অন্তর্ভুক্ত হন। যার ফলে সাহিত্য ও কবিতায় সূচিত হয় চিন্তাগত দুই ধারা। এ জন্য আরবি সাহিত্যকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি প্রাক ইসলামি যুগ। আরেকটি ইসলামি যুগ। ইসলাম সাহিত্যের কথ্যরূপকে লেখ্যরূপেও পরিবেশিত করে। আনে সাহিত্যে বৈপ্লবিকতা।

আল্লাহ এবং হজরত মোহাম্মদ সা. এর প্রতি যারা তাঁরই জীবদ্দশায় ঈমান এনেছে, তাঁকে স্বচক্ষে দেখেছে ও ঈমানি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদেরকে বলা হয় সাহাবা। হজরত মোহাম্মদ সা. এর সাথীবৃন্দ। ‘সাহাবা’ শব্দটাকে প্রিয় করে বলা হয় ‘সাহাবি’। আর এ সাহাবিদের মধ্যে যারা সাহিত্য ও কবিতায় সিদ্ধ ছিলেন তাঁদের সংখ্যা অনেক। ইবনে কুতায়বা (মৃ. ২৭৬ /৮৮৯ ) বলেছেন, ‘কবিরা- যারা কবিতার জন্যে তাদের সমাজে ও গোত্রে জাহিলি ও ইসলামি যুগে প্রসিদ্ধি অর্জন করেছেন তাদের সংখ্যা এত বেশি যে কেউ তা শুমার করতে পারবে না’। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আনাস ইবনে মালিক রা. বলেন ‘রাসুলুল্লাহ সা. যখন আমাদের এখানে (মাদিনা) আসেন তখন আনসারদের প্রতিটি গৃহে কবিতা চর্চা করা হতো’।

সুতরাং সাহাবি কবিদের সংখ্যা কতছিল তার হিসাব আপাতত বক্ষমান লেখায় নিরুপন অসম্ভব।

গাহাবি হজরত হাস্সান ইবনে সাবিত রা. কে বলা হয় শায়িরুর রাসুল বা রাসুল সা. এর কবি। তিনি ইসলামের শত্রু কবিদের কবিতার প্রতিউত্তর ও শত্রুদের বিরুদ্ধে কবিতার ফুলঝুড়ি ছাড়াও রাসুল সা. কে নিয়ে এমন চমৎকার কবিতা চয়ন করেছেন যে, তিনি ‘শায়িরুর রাসুল’ খ্যাতি পেলেন। রাসুল সা. যখন মদিনায় আসেন তখন তাঁর বয়স ষাট। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কাব্যসমালোচকদের দৃষ্টিতে তিনি আরবের শ্রেষ্টতম কবি। খ্যাতি ছিল তাঁর গোটা আরব জুড়ে। সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হতো তাঁর কবিতার পংক্তি। রাসুলকে সা. তিনি ভালোবাসতেন প্রাণ দিয়ে। রাসুল সা. কে ভালোবাসার নিদর্শন স্বরুপ তাঁর একটি বিখ্যাত, জনচ্চারিত কবিতার বাংলা নাম ‘তোমার তারিফ’।

এ কবিতার একটি পঙতি (অনুবাদ)
‘তোমার চেয়ে সুদর্শন আর দেখেনি আমার চোখ
তোমার মতো দেয়নি জন্ম পৃথিবীতে কোনো মা।
ত্রুটিমুক্ত হয়েই তুমি নিখুঁত সৃষ্টি হলে
সৃজিত তুমি হয়েছো যেন আপন আবেদনে।’

সাহাবি হজরত আলী রা. ছিলেন অনন্য কবি। তিনি ইসলামের খলিফাও ছিলেন। তাঁর প্রজ্ঞা চতুর্মুখী। আধুনিক অনুবাদে বলা যেতে পারে অলরাউন্ডার। সাহিত্যের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে সব্যসাচী। আরেকটু পরিচয় দিলে তিনিই সেই আবিষ্কারক, যিনি আরবি ব্যাকরণের জনক। তাঁর রয়েছে অজস্র কবিতা। পবিত্র হাদিস ও সাহিত্যের গ্রন্থাবলীতে তাঁর অনেক কবিতা পাওয়া যায়। তাঁর কবিতার বিভিন্ন সংকলনও হয়েছে। ‘দীওয়ান-ই আলী’ তাঁর বিশ্ববিখ্যাত কাব্য সংকলন। (আধুনিক তরজমায়) গদ্যে রয়েছে তাঁর ‘নাহজুল বালাগা’ গ্রন্থ। মুসলিম বিশ্বের বাইরেও তাঁর রয়েছে ব্যাপক সমাদর। অমুসলিম অধ্যাপক পি কে হিট্রি হজরত আলী রা. কে মুসলিম সাহিত্য ও শৌর্যবীর্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করেন। ঐতিহাসিক গিবন বলেনÑ ‘তাঁর বাগ্মিতা ও সাহসিকতার কাছে সকল প্রতিদ্বন্দীই হার মানে’।

তার একটি কবিতা
‘জাব্বারের বন্টনে থাকি সন্তুষ্ট আমরা
আমাদের জন্য তো জ্ঞান আর মূর্খদের জন্য ধন
কেননা ধনের ক্ষয় হয় তাড়াতাড়ি
জ্ঞানের স্থায়িত্ব থাকে অনাদিকাল।’

কেএল/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ