আরব উপদ্বীপের আস-সারাত অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন উম্মু রুমান বিনতে আমির। তাঁর বিয়ে হয় আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনে সাখবারার সঙ্গে। এই বিয়েতে তুফাইল ইবনে আবদিল্লাহ নামের এক পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করেন উন্মু রুমানের ঘরে। (তাবাকাতে ইবনে সাদ, ৮/১৯৩)
আবদুল্লাহ ইবনুল হারিসের স্বপ্ন ছিল কাবার প্রতিবেশী হওয়া। স্ত্রী সন্তান নিয়ে তিনি বসতি স্থাপন করেন কাবায়। সেই যুগের নিয়ম ছিল, বাইরের কেউ যদি মক্কায় এসে থাকতে চায়, তাহলে স্থানীয় কারও সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি করতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস মৈত্রী চুক্তি করেন আবু বকরের (রা.) সঙ্গে। (তাবাকাতে ইবনে সাদ: ৮/১৯৩)
কিছুদিন যেতে না যেতে আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইন্তেকাল করেন। উম্মু রূমানের কাছে মক্কা ছিল ‘বিদেশ’। এখানে তাঁর আত্মীয় নেই, পরিচিত কেউ নেই। স্বামী হারিয়ে ছোট সন্তান নিয়ে একেবারে অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। ঠিক সেই সময় তাঁর দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন আবু বকর (রা.)। বিধবা উম্মু রুমানকে বিয়ে করে তিনি তাঁর সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন। (তাবাকাতে ইবনে সাদ, ৮/১৯৩)
রাসুল (সা.) ইসলাম প্রচার করলে পুরুষের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন আবু বকর (রা.)। স্বামীর ইসলাম গ্রহণের পর স্ত্রী উম্মু রুমানও ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু বকর-উম্মু রুমানের ঘরে দুজন সন্তান জন্মগ্রহণ করে। একজন আবদুর রহমান, আরেকজন আয়িশা (রা.)। নবীজি আয়িশাকে (রা.) বিয়ে করলে উম্মু রুমান রাসুলের শাশুড়ি হওয়ার মর্যাদালাভ করেন।রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর তাঁর ও আবু বকরের (রা.) পরিবার মক্কায় থেকে যায়। তাঁদের মদিনায় নিয়ে যেতে তিনি যায়িদ ইবনে হারিসা ও আবু রাফির (রা.) মাকে প্রেরণ করেন। তাঁরা দুজন উভয় পরিবার নিয়ে মদিনায় হিজরত করেন। (বালাজুরি, আনসাব আল-আশরাফ: ১/২৬৯-২৭০)
উম্মু রুমান (রা.) ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মদিনায় বনু হারিস গোত্রে অবস্থান করেন। (সহিহ বুখারি: ৩৮৯৪) সেখানে প্রায় ৭-৮ মাস অবস্থান করেন। তিনি নিজেই সংসারের দায়-দায়িত্ব কাঁধে নেন। পরিবারের জন্য, মেহমানের জন্য রান্না করতেন। আবু বকর (রা.) আহসুল সুফফার কয়েকজন সদস্যকে তাঁর বাড়িতে খেতে পাঠাতেন। বাড়িতে তখন উম্মু রূমান ও তাঁর ছেলে আবদুর রহমান (রা.)। মেহমানদের নিয়ে খাবার খেতে গিয়ে দেখা যায় আল্লাহ অভাবনীয় বরকত দান করেছেন। খাবার পূর্বের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। প্রায় তিনগুণ বেশি। আবু বকর (রা.) অবশিষ্ট খাবার রাসুলের কাছে নিয়ে যান। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০২)
৬ হিজরিতে উম্মু রুমান (রা.) ইন্তেকাল করেন। রাসুল (সা.) মাত্র পাঁচজন ব্যক্তির কবরে নেমে তাঁদের লাশ শায়িত করেন। উম্মু রুমান(রা.), যিনি রাসুলের শাশুড়ি, তিনি ছিলেন সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের একজন। তাঁকে কবরে নামানোর সময় নবীজি এই বলে দোয়া করেন, ‘আল্লাহ, উম্মু রুমান আপনার এবং আপনার রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য যা কিছু সহ্য করেছেন তা তো আপনার কাছে গোপন নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি জান্নাতের হুর দেখে খুশি হতে চায়, সে যেন উম্মু রুমানকে দেখে।’
এনএইচ/