শনিবার, ২৪ মে ২০২৫ ।। ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২৬ জিলকদ ১৪৪৬


‘কসম খেয়ে বলছি, আমাদের কাছে কোনো খাবার আসেনি’


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

গাজার দক্ষিণাঞ্চলের এক বাসিন্দা, যিনি নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ করতে চাননি তিনি হোয়াটসঅ্যাপে বিবিসির সংবাদদাতাকে বলেছেন, গত কদিন ধরে কিছু ত্রাণ ঢুকলেও তিনি কিছুই পাননি। তিনি লেখেন, ‘আমি আপনাকে কসম খেয়ে বলছি, এখনো আমাদের কাছে এক ফোঁটা পানীয় আসেনি।, না খাবার, না আশ্রয়ের জন্য তাঁবু।’

অন্যদিকে গাজার উত্তরাঞ্চলে ২৩ বছর বয়সী এসরাহ শাহিন হোয়াটসঅ্যাপে পরিস্থিতি বর্ণনা করে বলেন, ‘অবস্থা খুবই কঠিন। অনেক বিপদ, লাগাতার বোমাবর্ষণ হচ্ছে।’

এর আগে এসরাহ বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতির সময় তিনি গাজা শহরে ফিরে আসেন এবং এখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কখনো ছেড়ে যাবেন না। কিন্তু এখন, তিনি বলছেন যে আর থাকা সম্ভব নয়। ‘সম্ভবত আমরা আর বেশিদিন থাকতে পারব না। আমাদের সরে যেতেই হবে,’ তিনি লেখেন।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজার ভেতরে কী ঘটছে, তা জানার অন্যতম মাধ্যম হলো হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা। ২০২৩ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না — কেবল খুব কমসংখ্যক সাংবাদিক সেনাবাহিনীর সঙ্গে থেকে নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সফরের অনুমতি পাচ্ছেন।

এদিকে গাজায় অ্যাকশন ফর হিউম্যানিটি-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর হানিয়া আলজামাল, বিবিসিকে জানিয়েছেন, প্রায় ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করলেও বাস্তবে তাদের প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাকের প্রয়োজন।

৮০ দিন ধরে অবরোধ চলার পর, যে অল্প কয়েকটি ট্রাক ঢুকছে, তা “মূলত কিছুই না,” তিনি বলেন। তার নিজের এলাকায়, দেইর আল-বালাহ-তে এখনো “আসলে কিছুই পৌঁছায়নি।”

ময়দা বেকারিতে যাওয়ার কথা যাতে তারা রুটি বানিয়ে বিতরণ করতে পারে —কিন্তু আলজামাল বলছেন, এই বিতরণ কেন্দ্রগুলোয় একেবারে গাদাগাদি অবস্থা।

মানুষ এখন ‘বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে করতে বিশাল লাইন ধরছে।’
তিনি আরও বলেন, তার পরিবারসহ গাজার বেশিরভাগ পরিবার এখন দিনে মাত্র একবার খাবার খাচ্ছে, তাও পুষ্টির ঘাটতি আছে তাতে, ‘মানুষকে ৮০ দিন ধরে ক্ষুধার্ত রাখা হয়েছে।’

এদিকে টানা ১১ সপ্তাহ অবরোধের পর অবশেষে গাজায় প্রবেশ করেছে মানবিক সহায়তা। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাঠানো ১০৭টি ত্রাণবাহী ট্রাক গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ-পূর্ব কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে গাজা উপত্যকায় ঢুকেছে বলে জানিয়েছে গাজার প্রবেশপথ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ইসরায়েলি সংস্থা 'কোগাট'।

তবে এই ত্রাণ গাজার মানুষদের কাছে পৌঁছেছে কি না তা এখনো নিশ্চিত করেনি জাতিসংঘ।

কোগাট বলেছে, ‘আমরা গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছাতে সহায়তা করে যাব, তবে চেষ্টা করব যেন এই ত্রাণ হামাসের হাতে না পড়ে।’
ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে ত্রাণ চুরির অভিযোগ আনলেও হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কর্মকর্তা অঁতওয়ান রেনার্ড বিবিসিকে বলেন, প্রতিদিন ১০০টি ট্রাক শুধু গাজার খাবারের ন্যূনতম চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজন।

বিবিসির সংবাদদাতা জেরেমি বোয়েনের মতে, ২০ লাখের বেশি গাজাবাসীর জন্য এই ত্রাণ মোট চাহিদার তুলনায় একফোঁটা পানির সমান।

যুদ্ধ শুরুর আগে প্রতিদিন প্রায় ৫০০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করত, যেখানে খাবার, ওষুধ, শিশু খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী থাকত। যুদ্ধ শুরু হলে এই সংখ্যা অনেক কমে যায়।এখন জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার মতে, গাজার মানবিক সংকট মোকাবিলায় প্রতিদিন অন্তত ৬০০টি ট্রাক প্রয়োজন।

মার্চের শুরু থেকে সব ত্রাণ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল, ফলে দুর্ভিক্ষের দোরগোড়ায় রয়েছে গাজাবাসী। মানবিক সংস্থাগুলো সতর্ক করছে-গাজার ২১ লাখ মানুষ মারাত্মক খাদ্য সংকটের মুখে রয়েছে। সূত্র: বিবিসি

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ