মুফতি সাদেকুর রহমান।।
রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও মুক্তির সওগাত নিয়ে পবিত্র মাহে রমজান মুমিনের দ্বারপ্রান্তে। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার এ মাস। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনায় একজন মুমিন তাকওয়ার গুনে গুনাণ্বিত হতে পারে। হতে পারে রাসুল সা. এর শ্রেষ্ঠ একজন উম্মত। লাভ করতে পারে ইহকালীন ও পরকালীন প্রভূত কল্যাণ। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাতলানো পন্থা ও সাহাবায়ে কেরামের নমুনায় রমজান পালনেই তা সম্ভব।
আমাদের অবশ্যই রমজানের সব শর্ত-শারায়েত আদব ও মুস্তাহাবসমূহের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। একজন মুমিন যেন যথাযথ নিয়মে সিয়াম পালন করতে পারে তার জন্যেই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। রাব্বে কারিম প্রত্যেক ঈমানদার পুরুষ ও নারীকে পবিত্র রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফিরাত হাসিল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
রোজা কাকে বলে?
রোজা রাখার নিয়তে সুবহে সাদিক (পূর্ব আকাশে শুভ্র আভা প্রকাশ) হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার এবং স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাকাকে রোজা বলে। ফাতাওয়া আলমগীরী- ১/১৯৪; রদ্দুল মুহতার-৩/৩৩০।
রোজা কার উপর ফরজ?
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী মুসলমান নারী এবং পুরুষের উপর রমজানেররোজা রাখা ফরয, যখন সে সুস্থ এবং মুকীম অবস্থায় থাকবে। সুতরাং নাবালেগ, পাগল এবং কাফেরের উপর রোজা ফরযই নয়। আর অসুস্থ কিংবা মুসাফিরের উপর রমজানেররোজা ফরয বটে, তবে তা ঐ অবস্থায় আদায় করা ওয়াজিব নয়।সূরা বাকারা : ১৮৩-১৮৫ সহীহ মুসলিম ১/৩৪৯ ৪.ফাতাওয়া আলমগীরী-১/১৯৫
রোজা সহিহ হওয়ার শর্ত:
রোজা সহীহ হওয়ার শর্ত দু’টি। এক. রোজার নিয়ত করা। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, সকল আমলই নিয়তের উপর নির্ভরশীল। : সহীহ বুখারী ১/২
সুতরাং কেউ নিয়ত না করে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাকলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তা রোজা হিসেবে গণ্য হবে না।
দুই. নারী হায়েয এবং নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া। অতএব মাসিক পিরিয়ড বা নেফাস চলাকালীন কোন মহিলা রোজা রাখলে তার রোজা শুদ্ধ হবে না। ফাতাওয়া আলমগীরী-১/১৯৫
নিয়ত সম্পর্কিত কিছু মাসায়েল
১.রোজার নিয়ত কিভাবে করবে?
নিয়ত এটি আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হল মনে মনে ইচ্ছা করা। এতএব কেউ যদি সূর্যাস্তের পরবর্তী কোন এক সময়ে মনে মনে এই ইচ্ছা করে যে, আমি আগামী কাল রমজানেররোজা রাখব, তাহলে তার নিয়ত সংঘটিত হয়ে যাবে। নিয়ত সহীহ হওয়ার জন্য মুখে উচ্চারণ করা শর্ত নয়। তবে তা উত্তম। ফাতাওয়া আলমগীরী-১/১৯৫
২.রোজার নিয়ত কখন করবে?
সূর্যাস্তের পর থেকে পূর্ব (অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়ের আগ) পর্যন্ত রমজানের রোজার নিয়ত করার অবকাশ আছে। তবে সুবহে সাদিকের পূর্বেই নিয়ত করে নেওয়া উত্তম। বাদায়েউস সানায়ে- ২/২২৯; আল বাহরুর রায়েক-২/২৫৯
উম্মুল মুমিনীন হাফসা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
من لم يجمع الصيام قبل الفجر فلا صيام له.
যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না।-সুনানে আবু দাউদ ১/৩৩৩
সালামা ইবনুল আকওয়া রা. বলেন, (আশুরার রোজা যখন ফরয ছিল তখন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আসলাম’ গোত্রের একজন ব্যক্তিকে ঘোষণা করতে বললেন, ‘যে সকাল থেকে কিছু খায়নি সে বাকি দিন রোযা রাখবে। আর যে খেয়েছে সেও বাকি দিন রোজা রাখবে। কারণ আজ আশুরা-দিবস।’-সহীহ বুখারী ২০০৭
৩. পুরো রমজানের জন্য একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয়; বরং প্রত্যেক রোজার নিয়ত পৃথক পৃথক ভাবে করতে হবে। কারণ প্রতিটি রোযা ভিন্ন ভিন্ন আমল (ইবাদত)। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি। হাদীস শরীফে আছে, ‘সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।’-সহীহ বুখারী ১/২; আরো দেখুন : আল মুহাল্লা ৪/২৮৫
৪.রাতে রোজার নিয়ত করলেও সুবহে সাদিক পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-মিলনের অবকাশ থাকে। এতে নিয়তের কোনো ক্ষতি হবে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, احل لكم ليلة الصيام الرفث إلى نسائكم তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে রমজানের রাতে স্বীয় স্ত্রীর সাথে প্রবৃত্ত হওয়া।-সূরা বাকারা : ১৮৭
৫. নিয়তের সময় শুরু হয় পূর্বের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে। যেমন-মঙ্গলবারের রোজার নিয়ত সোমবার দিবাগত রাত তথা সূর্যাস্তের পর থেকে করা যায় সোমবার সূর্যাস্তের পূর্বে সঙ্গলবারের রোযার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। কেননা, হাদীস শরীফে রাতে নিয়ত করার কথা বলা হয়েছে।
৬. সাহরি খাওয়ার দ্বারাই নিয়ত হয়ে যায়? হ্যাঁ, রোজার জন্য সাহরি খেলেও রোজার নিয়ত হয়ে যায়। আল বাহরুর রায়েক-২/২৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ১/১৯
-এটি