আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ইসলাম বিরোধী শিক্ষা সিলেবাস বাতিল, দূর্নীতির মূলোৎপাটন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও দেশে ইসলামী হুকুমত কায়েমের দাবিতে ইসলামী ইসলামী ঐক্যজোটের উদ্যোগে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ শনিবার (২১ জানুয়ারি) বাদ যোহর রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে এই সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ও মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ। বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
মিছিল পূর্ব সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী বলেন, বিতর্কিত শিক্ষা সিলেবাসের মাধ্যমে দেশের নতুন প্রজন্মকে নাস্তিক ও পৌত্তলিক বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে। পাঠ্য বইয়ে নগ্ন ছবি, পর্দা, দাড়ির বিরোধিতা, মুর্তিসহ ডারউইনের বিবর্তনবাদ ও হিন্দুত্ববাদ সংযোজন করে মুসলিম শিক্ষার্থীদের ঈমান হারা করার পাঁয়তারা চলছে। স্পষ্ট বলছি, ৯২ ভাগ মুসলমান দেশের পাঠ্য পুস্তকে ডারউইনের মতবাদ দেখতে চায়না, তারা দেশীয় ও ধর্মীয় সংস্কৃতি, সভ্যতা ও ইতিহাসের সঠিক উপস্থাপন দেখতে চায়।
তিনি বলেন, অবিলম্বে ইসলামবিরোধী বিতর্কিত শিক্ষা সিলেবাস অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। বিরানব্বই ভাগ মুসলমানের চিন্তা চেতনা অনুযায়ি আলেমদের তত্বাবধানে নতুন শিক্ষা সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে ইসলাম বিরোধী এই সিলেবাস প্রণয়নে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, অন্যথায় ইসলামী ঐক্যজোট বৃহত্তর কর্মসূচীর মাধ্যমে নাস্তিক-মুরতাদদের দেশ থেকে বিতারিত করে ছাড়বে ইনশাল্লাহ।
তিনি ইসলামী দলগুলোর নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ওমুক সরকার, তমুক সরকারের আমাদের প্রয়োজন নেই। সব সরকার আমরা দেখেছি। এখন প্রয়োজন ইসলামী সরকার। প্রয়োজনে নেতৃত্ব ছেড়ে দেবো, নেতৃত্ব নেন। ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য যা যা প্রয়োজন আপনারা পদক্ষেপ নিন। কর্মী হিসেবে মাঠে থাকবো ইনশাল্লাহ।
মাওলানা হাসানাত আমিনী বলেন, সরকার মডেল মসজিদ নির্মাণ করছে ‘সাধুবাদ’। তবে মডেল মসজিদে কওমী মাদরাসা পড়–য়া ও হক্কানী উলামায়ে কেরামকে নিয়োগ দিতে হবে। কোনভাবেই ভ্রান্ত আকিদা পোষণকারীদের নিয়োগ দেয়া যাবে না। এতে মডেল মসজিদের সুনাম ক্ষুন্ন হবে। ইসলামের ক্ষতি হবে।
সমাবেশে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ বলেন, ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধানের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য। বর্তমান শিক্ষা সিলেবাসে এই বিধি-বিধানের উপর চূড়ান্তভাবে আঘাত করা হয়েছে। বিবর্তনবাদের মত কুফুরি আকীদাকে শিক্ষা কারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত করে আগামী প্রজন্মকে নাস্তিক্যবাদি রূপে গড়ে তুলতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতবর্ষের মুসলিম শাসকদের নিচু, হীন এবং নিপীড়নকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে অন্যদিকে মুসলিম শাসকদের হাত থেকে যারা ক্ষমতা চরি করেছিল তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। যারা এই ধরনের নোংরা চিন্তা-ধারণা লালন করে, তারা সরকার ও জনগণের বন্ধু হতে পারে না। আমরা এ সকল ঘৃণ্য কর্মের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মুফতী ফয়জুল্লাহ বলেন, সিলেবাসে ইসলামের ফরজ বিধান পর্দাকে অবমাননা করা হয়েছে। দাঁড়ির বিরুদ্ধে বিদ্রুপ করে মহানবী (সা.)-এর সুন্নতের প্রতি চরম দৃষ্টতা প্রদর্শন করা হয়েছে। সমকামিতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে ইসলাম বিরোধী শক্তির এহেন অপকর্মে পৃথিবীর দুইশত কোটি মুসলমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
তিনি বলেন, পাঠ্য বইয়ের পাতায় পাতায় ইসলাম বিদ্বেষ ও ইসলামী নিদর্শনের অবমাননা করে নাস্তিক্যবাদী অপশক্তি আল্লাহর বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে মোকাবেলার ঘোষনা দিয়েছে। আমরা মনে করি, মুসলমানের ট্যাক্সের টাকায় ছাপা নৈতিকতা ও আদর্শ বিবর্জিত এসব বই সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানের দেশে চলতে পারে না। দ্রুত এসকল বই বাজেয়াপ্ত করতে হবে। যারা এই ধরনের ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে নাস্তিক্যবাদী প্রজন্ম তৈরি ষড়যন্ত্র করছে এবং ধর্ম অবমাননা করেছে অবলিম্বে তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় দেশে আন্দোলনের দাবালন জ¦লে উঠবে।
তিনি দেশের উলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর বেঈমানদের নজর পড়েছে। মুসলমানদের ঈমান এবং আকিদাহকে হেফাজত করতে এগিয়ে আসতে হবে। যারা কোমলমতি মুসলিম শিশুদের বেঈমান বানাতে চায় তাদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দেশের মসজিদ, মাদরাসা, খানকাসহ প্রতিটি অঞ্চলে উলামায়ে কেরামকে এই বিতর্কিত সিলেবাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে, জনগণকে সচেতন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারকে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং প্রতিটি থানায় থানায় যে সব মডেল মসজিদ হচ্ছে সেখানে দেশের হক্কানী আলেমদের ইমাম ও খতিব নিয়োগ দিতে হবে। যারা ভিন্ন চিন্তা লালন করে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের পরিপন্থী কোনভাবেই তাদের নিয়োগ দেয়া যাবেনা।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মুফতী তৈয়্যব হোসাইন, মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা শেখ লোকমান হোসাইন, মুফতী আব্দুল কাইয়্যুম, মাওলানা আলতাফ হোসাইন, মাওলানা ফারুক আহমদ, মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ গাজী, মাওলানা আবুল খায়ের বিক্রমপুরী, মুফতী নাসির উদ্দিন কাসেমী, মাওলানা আনোয়ারুল হক, মুফতী যোবায়ের আহমদ কাসেমী, মুফতী আব্দুল কাইয়্যুম, মুফতী রহমতুল্লাহ বুখারী, মাওলানা শহিদুল আনোয়ার, মুফতী খোরশেদ আলম, মাওলানা নুরুজ্জামান, ছাত্রনেতা আবুল হাসিমসহ আরও অনেকে। সমাবেশ শেষে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল পল্টন মোড় হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পূণরায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে এসে দোয়ার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।
কেএল/