এনায়েতুল্লাহ ফাহাদ ।।
দীর্ঘ দুই বছর পর আবারও শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমা। করোনার ভয়াবহ প্রকোপে বন্ধ ছিল গত দু'বছর এ গণজমায়েত। দেখা যায়নি তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লির ঢল। বছরদুয়েক পরে পুনরায় উপচে পড়া ভিড়। লোকারণ্য বিশ্ব ইজতেমার ময়দান। এ যেন জান্নাতের পুস্প বাগিচা। ঝাঁকে ঝাঁকে ফুলকলি ফুটেছে। এক আনন্দমুখর বৈচিত্র্যময় দৃশ্য। আর এটা যদি হয় লাল সবুজ সমারোহের কোন প্রান্তে— তবে তো আনন্দের সীমা নেই!
বাংলাদেশ আমাদের অহংকার। এদেশের মাটি আমাদের ঘাটি। এদেশের ভাষা আমাদের প্রাণ। এ দেশের প্রকৃতি আমাদের প্রেম। ঠিক তেমনি এদেশের বিশ্ব ইজতেমা আমাদের গৌরব। যাকে ঘিরে আমাদের আনন্য আয়োজন। লাখো লাখো মানুষের আগমন। বিশ্বব্যাপী মহাসম্মেলন। যার প্রশংসায় পঞ্চমুখ সর্বত্র। যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম মহা সমাবেশ হিসেবে পরিচিত। মুসলমানদের গণজাগরণের দিক থেকে হজ্বের পরেই যার স্থান। যেখানে উপস্থিত হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার বিদেশি মেহমান। যাদের পদধূলিতে ধন্য বাংলার ভূমি। যাদের অতিথি পরায়নতায় পুলকিত তাবলীগ জামাত। এত গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য যেই স্বাধীন ভূমির— নিশ্চয়ই এ সৌন্দর্য আমাদের গৌরবের কারণ।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে শিল্পনগরী টঙ্গীর কিংবদন্তি ও ইতিহাসখ্যাত “কহর দরিয়া” বর্তমান তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব ইজতেমা। যা আমাদের গৌরব ও অহংকার। এ ইতিহাস ও গৌরব আজকের নয়। আজ থেকে সত্তর বছরেরও আগে কথা— ফিরে দেখা ১৯৪৬ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিভিন্ন জায়গায় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এভাবে তাবলিগের প্রচার-প্রচারণা দিন দিন প্রসারিত হতে থাকে। বাড়তে থাকে তাবলিগের সাথী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সংখ্যা। বর্তমানে তার পরিধি আকাশচুম্বী। এ কারণে বৃহৎ জায়গা নিয়ে ১৯৬৬ সালে টঙ্গী খোলা মাঠে ইজতিমা আয়োজন করা হয়। সে বছর স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তাবলিগের এ ইজতেমায় ধর্মপাণ মুসলমান ও তাবলিগের সাথীরা অংশ গ্রহণ করে। আর সে বছর থেকেই এ ইজতেমাকে বিশ্ব ইজতেমা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
তবলীগ। দাওয়াতের কাজ। চিল্লা, ছাল কিংবা তিন দিন। এগুলো কোন একক গোষ্ঠীর কাজ নয়। এতো সকল নবীদের কাজ। দাওয়াতের বানী নিয়ে উম্মাহর সংশোধনের আশায় নবীদের দাওয়াতের প্রতিধ্বনি। আমাদের মাঝে নবী নেই। তাই নবীর ওয়ারিসরাই এ কাজ আন্জাম দেবে। ওটাই স্বাভাবিক। এটাই রবের আদেশ। এমনকি ইতিহাস তা-ই বলে। তাই দাওয়াত ও তাবলীগের এক মহা মিশন নিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ৫৬ তম বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়েছে ১৩ ই জানুয়ারী থেকে। এ ইজতেমা ঘিরে যিনি মধ্যমণি— দারুল উলুম দেওবন্দের এক আলোকিত রুহানী পুরুষ, প্রিয় নবীর স্বার্থক উত্তরসূরী মাওলানা ইলিয়াস রহ. । যার সুচিন্তিত ও প্রবর্তিত এই মেহনতের আলো জ্বলছে পৃথিবীর সর্বত্র। এতে জাতির ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ নিহিত। এ দ্বীনি আন্দোল চলছে, চলবেই। যতদিন মানুষ কল্যান ও মুক্তি কামনা করবে।
ধারাবাহিকতার ছাপান্ন বছরে বিশ্ব ইজতেমায় বসেছে দেশী-বিদেশী মেহমান ও সাধারণ মানুষের মিলনমেলা। হয়েছে ধনী, গরীব, আশরাফ, আতরাফ, আমির, ফকির, ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, প্রকৌশলী, আলেম, উলামা সহ সর্ব স্থরের মানুষের উপস্থিতি। এ যেনো বর্তমান অশ্বান্ত বিশ্বের ঝঞ্জাবিক্ষুদ্ধ ও প্রতিহিংসার অনলে সৌর্হাদ্য। ভ্রাতৃত্ব, প্রেম-প্রীতি ও মায়া মমতার এক অতুলনীয় তীর্থস্থান। নজির বিহীন ভালো-বাসা ও নিজেকে মিটিয়ে দেয়ার মানুষিকতা অর্জনের কেন্দ্রস্থল। এ যেনো এক জীবন বদলে দেয়ার বিপ্লবী পথ। নীরব বিপ্লব, মানুষ গড়ার বিপ্লব, জীবন গঠন করার বিপ্লব, দেশে-বিদেশে সর্বত্র চলছে এই বিপ্লব। কোথাও কোনো বাঁধা নেই। নেই কোনো প্রতিপক্ষ এই বিপ্লবের। সামান্য হাতে গুনা কয়েক চুনোপুটি বা চামচিকা ব্যতীত। এ যেনো এক মকবুল ও মাশহুর দ্বীনি আন্দোলন। পৃথিবীর সর্বত্র একই আওয়াজ।
লেখক, কবি, গীতিকার ও প্রাবন্ধিক
-এটি