আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: আওয়ামী যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষ্যে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ লাখ লোক জমায়েতের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সংগঠনটি।
সমাবেশে অন্তত ১ লাখ নেতাকর্মী নিয়ে উপস্থিত থেকে প্রকাশ্যে ফের রাজনৈতিক তৎপরতার জানান দিতে চান ক্যাসিনোকাণ্ডে ব্যাপক আলোচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। নিজেদের আলাদা উপস্থিতি জানান দিতে লাল টি-শার্ট পরবেন তারা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মণির নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের এই দিনে (১১ নভেম্বর) সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী পালন উপলক্ষ্যে দিনটিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব মহাসমাবেশ করবে সংগঠনটি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি থাকবেন। ১০ লাখ লোকের জমায়েতের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচিতে বড় শোডাউন দিতে চায় সংগঠনটি। সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা বলছেন-এ সমাবেশ হবে তারুণ্যের, সাহসের। সমাবেশ হবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।
এদিকে যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংগঠনের সব নেতাকর্মীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তিনি আশা করছেন, যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তীর মধ্য দিয়ে যুব সমাজের সংগ্রামী চেতনার ধারা আরও শানিত ও বেগবান হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেশের যুবদের বুকে অদম্য শক্তির বহ্নিশিখা প্রজ্বলিত করে গেছেন। যে প্রেরণা তিনি জুগিয়ে গিয়েছেন, সেই প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে যুবলীগ যুবসমাজকে সঙ্গে নিয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম আর হাজারো নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশের বৃহৎ যুব সংগঠনে পরিণত হয়েছে যুবলীগ। তবে গত কয়েক বছরে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি, চাঁদা ও টেন্ডারবাজি, কমিটি বাণিজ্য, অনুপ্রবেশসহ নানা অপকর্মে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছিল সংগঠনটি। সেই কলঙ্ক ঘুচিয়ে সংগঠনে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২০১৯ সালের সপ্তম কংগ্রেসে আসে নতুন নেতৃত্বে। চেয়ারম্যান পদে আসেন শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসেন মাইনুল হোসেন খান নিখিল। তাদের নেতৃত্বে গত প্রায় তিন বছরে কলঙ্ক ঘুচিয়ে শুদ্ধ পথে যাত্রা করেছে সংগঠনটি। করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে হয়েছে প্রসংশিত।
এবার সংগঠনটির সামনে চ্যালেঞ্জ হলো-শৃঙ্খলা ধরে রেখে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনকে ঢেলে সাজানো। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই সংগঠনকে নতুনরূপে সাজানোর কাজ শুরু করেন তারা। তবে করোনার কারণে সাংগঠনিক কাজে ভাটা পড়েছিল। ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এদিকে নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব নেওয়ার পরে উদ্যোগ থাকলেও কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এখনও সংগঠনটিকে ঢেলে সাজাতে পারেননি তারা। তিন বছরের কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে হলেও তৃণমূল পর্যায়ের অনেক সম্মেলন এখনো বাকি। বেশিরভাগ জেলা, মহানগর, উপজেলা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এমনকি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ।
এদিকে যুবলীগের মহাসমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা কাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে। সারা দেশের বিভিন্ন শাখা থেকে সমাবেশে যোগ দেবেন নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সমাবেশে যোগ দেবেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টার লাগানো হয়েছে। মহাসমাবেশ সফল করতে দশটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রস্তুত করা হয়েছে মঞ্চ। সমাবেশস্থল ঘিরে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উদ্যানে প্রবেশের জন্য রাখা হয়েছে পাঁচটি গেট।
যুবলীগের প্রেসডিয়াম সদস্য তাজউদ্দিন আহমেদ জানান, বেলা ১১টায় মূল মঞ্চের সামনের ছোট মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে। চলবে জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঞ্চে উপস্থিত হওয়ার পরে শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান। সেখানে থিম সংগীতসহ প্রায় ২৫ মিনিট দেশবরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনা করা হবে। থিম সংগীত লিখেছেন ছড়াকার শিশু সাহিত্যিক ইমরান পরশ।
ফের সক্রিয় সম্রাট-খালেদ : ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের আলোচিত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে সমাবেশে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফেস্টুন টানিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে কর্মী-সমর্থক ও যুবলীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের আবারও সক্রিয় করতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন সম্রাট। আজকের সমাবেশে এক লাখ লাল গেঞ্জি ও যুবলীগের দলীয় পতাকা নিজেদের অনুসারীদের মধ্যে বিতরণ করেছেন তারা। সকাল ১০টায় যুগলীগের লোগো সংবলিত লাল গেঞ্জি পরে সম্রাট ও খালেদের অনুসারীরা মন্দির গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকে নির্ধারিত জায়গায় অবস্থান নেবেন। সোম ও মঙ্গলবার সম্রাট ও খালেদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে তাদের বসার জায়গাও ঠিক করে আসেন। সম্রাটের ঘনিষ্ঠ একজন সহকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়েই আলোচিত যুবলীগ নেতা সম্রাট ও খালেদ সমাবেশে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে ফের রাজনীতিতে প্রকাশ্যে সক্রিয় হবেন।
-এটি