মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সৌদির সেবা কোম্পানির সঙ্গে হজ এজেন্সির চুক্তির নির্দেশনা মহেশখালী থানার বিশেষ অভিযানে পরোয়ানাভুক্ত ১১ জন আসামি গ্রেফতার বৃষ্টির সময় কাবা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় ওমরা পালনকারীদের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট গ্রাহকদের মূলধন ফেরত পাওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন মাওলানা আতহার আলীকে বাদ দিয়ে জাতীয় ইতিহাস রচিত হতে পারে না: ধর্ম উপদেষ্টা জরুরি সভা ডাকল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কক্সবাজারে উৎসবমুখর পরিবেশে রোপা আমন ধান কাটা শুরু চাঁদপুর হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহর সাফল্য বগুড়ায় আন্দোলনে নিহত রিপনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত

তীব্র গ্যাস সংকটে ২০ মিনিটের রান্নায় লাগছে ২-৩ ঘণ্টা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: রাজধানীর বাসিন্দা আমীন আল রাশিদ তার ফেসবুকে পোস্টে আক্ষেপ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘সকাল ৮টার সময়েও রুটি ভাজার মতো গ্যাস থাকে না। ফলে আমাদের সকালের নাশতা কিনে আনতে হয়। অথচ মাস শেষে দুই চুলার গ্যাসের বিল ঠিকই ১০৮০ টাকা নিয়ে নেবেন। রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস পাওয়া যাবে না। উপরন্তু খাবার কিনে আনতে হবে রেস্টুরেন্ট থেকে। মানে ওখানেও বাড়তি খরচ।’

বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে মধ্যেই গ্যাস সংকটে আমীনের মতোই অতিষ্ঠ রাজধানীর বাসিন্দারা। দিনে চুলা জ্বলছে কুপিবাতির মতো টিম টিম করে। ২০ মিনিটের রান্নায় সময় লাগছে দুই-তিন ঘণ্টা।

গ্যাস সংকটে নাজেহাল বনশ্রীর বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম তার এক দিনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে কে বলছিলেন, ‘সকাল ৯টায় চুলায় ভাত তুলে দিয়ে বিপাকে পড়েছিলাম।

বেলা ১১টায় বাসা থেকে বের হওয়ার কথা, কিন্তু চাল আর ফুটতে চায় না, আধা সেদ্ধ চাল নামিয়েও রাখতে পারছিলাম না। প্রায় আড়াই ঘণ্টা লেগেছে সেই চাল ফুটতে।’ তিনি বলেন, ‘দিনের বেলায় প্রায় প্রতিদিনই গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে। যে পরিমাণে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে, তা না পাওয়ার মতোই।’

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে রাজধানীর মুগদা, বাসাবো, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, পুরান ঢাকার বংশাল, সূত্রাপুর, ওয়ারীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়ও গ্যাসের এমন সংকটের কথা জানা গেছে।

ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষজন মাটির চুলা বা কেরোসিন স্টোভ ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। দোকানিরা জানান, গ্যাস সংকটে অলিগলির খাবারের দোকানেও ভিড় বেড়ে গেছে। মুগদা এলাকার বাসিন্দা শাবানা রহমান পেশায় গৃহিণী।

তিনি বলেন, ‘গ্যাসের সমস্যার জন্য ঠিকমতো রান্না করতে পারছি না। রাতে গ্যাস আসে, আবার রাতেই চলে যায়। দুপুরের দিকে মাঝেমধ্যে গ্যাস থাকলেও সে গ্যাস দিয়ে ভালোভাবে রান্না করা যায় না। দুপুর ১২টার দিকে চুলায় এক পদের রান্না বসালে শেষ হতে বিকেল ৪টা হয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় দুই বেলার রান্না কষ্ট করে হলেও ভোররাতে করে ফেলতে হয়। যদিও ভোররাতে রান্না করতে অনেক সমস্যা হয়। কিন্তু কিছু তো করার নেই। পরিবারের লোকজনকে তো আর না খাইয়ে রাখা যায় না।’

পুরান ঢাকার ইসলামপুরের একরাম উদ্দীন প্লাজার কাপড়ের ব্যবসায়ী ওয়ালিদ হোসেন ফাহিম কে বলেন, ‘বাসাবাড়ি থেকে এনে আগের মতো ঠিক সময়ে খাবার খাওয়া যায় না। দোকানে আগে দুপুরে বাসার খাবার নিয়মিত খেতে পারলেও এখন মাঝেমধ্যে বাসায় রান্না হচ্ছে না। অনেক সময় দুপুরের খাবার এর আগের দিন রাতে রান্না করে রাখা হয়। কিন্তু গরম করতে না পারায় অনেক খাবার নষ্ট হয়ে যায়।’

কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে কিছুই বলা হচ্ছে না। জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন ব্যাপক আকারে হ্রাস পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

বর্তমানে গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে দৈনিক কমবেশি ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশের অন্যতম বৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা থেকেই আসছে ১ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি উৎপাদন হচ্ছে ওই একটি গ্যাস ফিল্ডেই। শঙ্কার কথা হচ্ছে, গ্যাসক্ষেত্রটির মজুত শেষ হয়ে আসছে।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) তথ্য অনুযায়ী (২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর), গ্যাসক্ষেত্রটিতে অবশিষ্ট মজুত (প্রমাণিত ৪ হাজার ৪১৫ বিলিয়ন ঘনফুট, প্রমাণিত ও সম্ভাব্য মিলে ৫ হাজার ৭৫৫ বিলিয়ন ঘনফুট এবং প্রমাণিত সম্ভাব্য ও সম্ভাবনাময় মিলে ৭ হাজার ৮৪ বিলিয়ন ঘনফুট) রয়েছে মাত্র ৭৬৩ বিসিএফ (বিলিয়ন ঘনফুট), অন্যদিকে দৈনিক ১ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে, বছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪৫৬ বিসিএফ। অর্থাৎ দুই বছরও গ্যাস উত্তোলন করার মতো অবস্থায় নেই বিবিয়ানা। পেট্রোবাংলার হিসাব প্রকাশের পর ইতিমধ্যেই ১০ মাস গত হয়েছে, সে হিসাবে বড়জোর আর এক বছর গ্যাস পাওয়া যাবে বিবিয়ানায়। সেটুকুও অনেক ‘যদি’র ওপর নির্ভরশীল।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত স্থবিরতা দেশকে চরম সংকটের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। ১৯৯৫ সালের জাতীয় জ¦ালানি নীতিমালা অনুসরণ করা হলে আজকে এ সংকট হতো না। ওই নীতিমালায় প্রতি বছরে চারটি করে অনুসন্ধান কূপ খনন করার কথা থাকলে কোনো সরকারেই তা মেনে চলেনি। তেল-গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা, সফলতা ও অনুসন্ধান স্তর বিবেচনায় বলা যায়, ব্যাপক ভিত্তিতে অনুসন্ধান করা হলে তেল-গ্যাস প্রাপ্তির আরও যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশে গ্যাস উৎপাদনের পাশাপাশি বিদেশে থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে ঘাটতি সামাল দেওয়া হতো। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ওমান থেকে ১ মিলিয়ন টন ও কাতার থেকে ২.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। কাতার থেকে আরও ২ মিলিয়ন টন আমদানি বাড়ানোর আলোচনা চলছে। এর বাইরে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হতো। দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে আমদানি বন্ধ, যে কারণে কিছুটা সংকট হচ্ছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তারা একটি বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছেন। এতে করে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের গ্যাসক্ষেত্রে দৈনিক উৎপাদন ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, গত ২১ অক্টোবর সকাল ৮ থেকে ২২ অক্টোবর সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে ২২৬১ এমএমসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। একই সময়ে এলএনজি আমদানি করা হয়েছে ৩৮১ মিলিয়ন ঘনফুট। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২ হাজার ২৫২ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ৯৫১ মিলিয়ন, সার উৎপাদনে ৩৩৬ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ১৩৩ মিলিয়ন এবং শিল্প, বাণিজ্য ও আবাসিকসহ অন্যান্য খাতে সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৯৩ মিলিয়ন ঘনফুট।

রান্নার পাশাপাশি সিএনজি করা গাড়ি চলাচলেও সংকট তৈরি হয়েছে। কারণ সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে ঠিকমতো গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে না। গ্যাসের চাপও থাকছে কম।

বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভারশন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর কে বলেন, ‘লাইনে গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআই (চাপ প্রতি ইঞ্চি) থাকার কথা, সর্বোচ্চ চাপ উঠছে ৬ পিএসআই পর্যন্ত। দিনের বেলায় ২-৪ পিএসআইয়ের মধ্যে ওঠানামা করছে। ঢাকা শহরের মূল সরবরাহ লাইনের পাশে দিনের সর্বোচ্চ ৪ পিএসআই পাওয়া যাচ্ছে। সকাল ৭টার পর থেকে চাপ কমতে কমতে ২-এ নেমে আসছে। এতে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে গ্যাস নিতে পারছে না যানবাহন। গ্যাস ভরতেও সময় লাগছে অনেক বেশি। রাত ১২টার পর চাপ কিছুটা বাড়ছে, তারপরও কাঙ্ক্ষিত নয়।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ