আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীন চলমান এসএসসির গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, কৃষি ও রসায়ন বিষয়ের পরীক্ষা ‘অনিবার্য কারণবশত’ স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নোটিশের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
তবে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার একটি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে চলমান এসএসসি পরীক্ষার ছয় বিষয়ের প্রশ্ন উদ্ধার হয়। এর প্রেক্ষিতে এ চার বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিতে সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা বোর্ড।
প্রশ্ন ফাঁসের জড়িত থাকার অভিযোগে ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমানসহ তিন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্ন ফাঁসের ‘গুজব’ ওঠায় নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ট্যাগ কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আদম মালিক চৌধুরী বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপক কুমার দেব শর্মার নজরে আনেন।
এরপর পরীক্ষা শেষে তারা কেন্দ্র সচিব ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের কক্ষে গিয়ে এ নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। প্রথমে তিনি (প্রধান শিক্ষক) সদুত্তর দিতে না পারলেও পরে অধিকতর জিজ্ঞাসায় তিনি স্বীকার করেন যে তার কাছে পরবর্তী পরীক্ষার প্রশ্ন রয়েছে। পরে তিনি সবার উপস্থিতিতে তার রুমের বুক শেলফের নিচের তাকে রাখা একটি কাপড়ের ব্যাগের ভেতর থেকে কয়েকটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বের করে দেন।
মামলার বাদী ও ওই কেন্দ্রের ট্যাগ কর্মকর্তা এজাহারে উল্লেখ করেন, ব্যাগের ভেতর থেকে গণিত (আবশ্যিক), উচ্চতর গণিত, রসায়ন, কৃষি, জীববিজ্ঞান ও পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের প্রশ্নপত্রের প্যাকেট বের করা হয়। এর মধ্যে একটি প্যাকেট ছাড়া বাকি সবগুলোর মুখ খোলা ছিল। তখন ট্যাগ কর্মকর্তার নির্দেশে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সাঈদ মো. আতিক নুর উল্লেখিত বিষয়ের প্রশ্নপত্র জব্দ করেন এবং কেন্দ্র সচিব ও প্রধান শিক্ষককে হেফাজতে নেন।
পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে প্রধান শিক্ষক জানান, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক আবু হানিফের সহায়তায় কৌশলে আগের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের প্যাকেটে জব্দকৃত প্রশ্নপত্রগুলো নিয়ে আসেন। এরপর ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের খণ্ডকালীন সহকারী শিক্ষক জোবায়ের হোসেন ও অফিস সহকারী আবু হানিফসহ অজ্ঞাত ১০/১৫ জনের সহযোগিতায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন।
প্রশ্ন ফাঁসের খবর পেয়ে ভূরুঙ্গামারী ছুটে যান দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. কামরুল ইসলাম, সচিব প্রফেসর মো. জহির উদ্দিনসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রশ্ন ফাঁসের সত্যতা পান।
তবে ছয় বিষয়ের প্রশ্নপত্র উদ্ধার এবং তার মধ্যে পাঁচ বিষয়ের প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের মুখ খোলা থাকলেও বুধবার সকালে চার বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করে শিক্ষা বোর্ড।
এ ব্যাপারে জানতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুরের সচিব প্রফেসর মো. জহির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয় দেখছেন। এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আপনি চেয়ারম্যান স্যারের সঙ্গে কথা বলুন।’
এজাহারে উল্লেখিত বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. কামরুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমরা চারটি পরিবর্তন করেছি। এগুলো সবই আমরা দেখছি। আমরা সবকিছু বিবেচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও কেন্দ্রের ট্যাগ কর্মকর্তা প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াতে পারেন কিনা, এমন প্রশ্নে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, ‘ মামলার তদন্তে যার জড়িত থাকার প্রমাণ মিলবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে মামলার বাদী হলেও ট্যাগ কর্মকর্তাও রেহাই পাবেন না’।
-এটি