আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আকাশপথে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
মঙ্গলবার (১২ জুলাই) বিমানবন্দরে অভিবাসন কর্মকর্তাদের বাধায় পণ্ড হয়ে যায় বিদেশযাত্রা।
বিমানে ব্যর্থ হয়ে নৌবাহিনীর জাহাজে শ্রীলঙ্কা ছাড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। এএফপির বরাতে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে এ কথা বলা হয়েছে।
একইভাবে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টাকালে শ্রীলঙ্কার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের ছোট ভাই বাসিল রাজাপাকসেকে আটক করা হয়েছে। সোমবার (১১ জুলাই) কলম্বোর বন্দরনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে। যদিও পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ভারত মহাসাগরীয় দেশটির বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য রাজাপাকসে পরিবারকে দায়ী করে আসছে লঙ্কান জনগণ। কয়েক মাসের আন্দোলন ও সংগ্রামের পর চলতি সপ্তাহে গণঅভ্যুত্থানের মুখে সরকারি বাসভবন থেকে পালিয়ে যান গোতাবায়া। খবরে বলা হয়েছে, রাজাপাকসে পরিবার দুবাই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
শ্রীলঙ্কার ডেইলি মিরর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দুবাই যাওয়ার জন্য সোমবার রাত ১২টায় কলম্বোর বন্দরনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান বাসিল। তার ফ্লাইট ছাড়ার কথা ছিল রাত সোয় ৩টায়।
কিন্তু যাত্রীরা তাকে চিনে ফেললে হইচই শুরু হয়। এরপর প্যাসেঞ্জার ক্লিয়ারেন্স টার্মিনালে দায়িত্বরত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা সাবেক এই অর্থমন্ত্রীর দেশত্যাগের চেষ্টা ভেস্তে দেয়।
‘চেক ইন’ করতে না পেরে বাসিল রাজাপাকসে পরে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যমগুলো। বিমানবন্দরে বাসিলকে দেখার পর যাত্রীদের বিক্ষোভের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে নিউজ ওয়্যার লংকা।
চলমান নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে শ্রীলঙ্কা। এ কারণে চলতি বছরের শুরু থেকেই বিক্ষোভ চলছে। কয়েক মাস টানা বিক্ষোভের মধ্যে গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন মাহিন্দা রাজাপাকসে।
কিন্তু বিক্ষোভকারীরা এতে সন্তুষ্ট হননি। তারা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। শনিবার রাজধানী কলম্বোয় রীতিমত লঙ্কাকাণ্ড ঘটে যায়। রীতিমতো গণঅভ্যুত্থান ঘটে। এদিন দুপুরে হাজারো মানুষ গোতাবায়ার বাসভবনে ঢুকে পড়ে। আগুন ধরিয়ে দেয় প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহের বাড়িতে।
বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখল করে নেয়ার আগেই বিপদ বুঝে সটকে পড়েন গোতাবায়। তিনি কোথায় আছেন, সে বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের বরাতে বিবিসি জানায়, শ্রীলঙ্কার উপকূলে নৌবাহিনীর একটি জাহাজে অবস্থান করছেন গোতাবায়া। তিনি এখনও শ্রীলঙ্কায় আছেন এবং মঙ্গলবার (১২ জুলাই) সকালে তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে ডেইলি মিররের খবরে বলা হয়েছে।
পত্রিকাটি লিখেছে, গোতাবায়া রাজাপাকসে ইতোমধ্যে তার পদত্যাগপত্রে সই করেছেন এবং সেখানে ১৩ জুলাইয়ের তারিখ দেয়া আছে। নিয়ম অনুযায়ী সেটা স্পিকারের কাছে জমা দেয়া হবে এবং তিনিই বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগপত্র পাওয়ার কথা ঘোষণা করবেন।
দ্বীপরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তা নিয়ে ইতোমধ্যেই সর্বদলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ২০ জুলাই সংবিধান মেনেই শ্রীলঙ্কায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেওয়ার্দেনা।
-এএ