।।কাউসার লাবীব।।
চলতি মাসের প্রথম জুমায় (৬ মে) ভারতের কেরালার মালাপুরমে প্রায় ২০টি মসজিদে একটি অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেছে। স্থানীয় অমুসলিম অটোরিকশা চালক রাগেশকে বাঁচাতে মসজিদ কমিটির সহায়তায় মুসলিম কমিউনিটি গড়ে তুলেছে ‘রাগেশ বাবু ট্রিটমেন্ট এইড ফান্ড’। এ ফান্ডে জুমার দিন অনুদান উঠেছে প্রায় ১.৩৪ লাখ রুপি।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির নানা রুগে ভোগ ছিলেন রাগেশ বাবু। তার দুটো কিডনি বিকল হয়ে গেলে প্রায় ১২ বছর আগে তার মা তাকে কিডনি দান করেছিলেন। তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে প্রতিস্থাপিত কিডনিও নষ্ট হয়ে যাওয়া। জরুরি ভিত্তিতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের হিসেবে অনুযায়ী তার প্রতিস্থাপন করতে প্রায়োজন ছিল প্রায় ১.৫ মিলিয়ন রুপির। মসজিদ থেকে উঠানো বিশাল অনুদানে রাগেশ বাবু এখন সুস্থ। তবে এখনো কোঝিকোড়ের এমএমআইএম হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরিক্ষণে রয়েছে।
‘রাগেশ বাবু ট্রিটমেন্ট এইড কমিটি’র সেক্রেটারি ওয়াসিম পরী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা যখন তার চিকিৎসার জন্য তহবিল সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিই, তখন তার ধর্মের কথা ভাবিনি। আমরা তহবিলের সম্ভাব্য সব উৎস খুঁজছিলাম। তখন ভাবলাম মসজিদই হতে পারে এর একমাত্র উৎস।
‘গত ১২ বছর ধরে কিডনির চিকিৎসা নিচ্ছেন রাগেশ বাবু। চিকিৎসার জন্য বাড়ি বিক্রি করে এখন অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। দুই বছর আগে তার জন্ডিস এবং চিকেন পক্স হয়, যার কারণে তার প্রতিস্থাপিত কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ঈদুল ফিতরের দিন রাগেশের জরুরি প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রতিস্থাপনের খরচ প্রায় ১.৫ মিলিয়ন রুপি। মসজিদ থেকে তোলা তহবিল হাসপাতালে জমা করা হয়েছে। আশা করছি আমরা শীঘ্রই ১.৫ মিলিয়ন রুপি সংগ্রহ করতে পারবো।’-বলেন, ওয়াসিম
‘রাগেশ বাবু ট্রিটমেন্ট এইড কমিটি’র সেক্রেটারি জানান, সকল মসজিদ কমিটির সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং তারা রাগেশ বাবুর জীবন বাঁচাতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন।
এদিকে স্থানীয় শওকত উপোদন একজন সমাজকর্মী। তিনি বলছেন, যখন কোনও ব্যক্তিকে বাঁচানোর বা সাহায্য করার কথা আসে, তখন আমরা কখনই মুসলমান এবং হিন্দুদের মধ্যে পার্থক্য করি না। শান্তি ও সহযোগিতায় বসবাসের আমাদের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে।
অপরদিকে স্থানীয়রা জানান, জুমার নামাজের পর রাগীশ বাবুর সুস্থতার জন্য তারা মসজিদে দোয়া চেয়েছিলেন। স্থানীয় সংবাদপত্র এবং পোর্টালগুলিও এটি নিয়ে নিউজ করেছে এবং রাগীশ বাবুর ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারির খরচ মেটাতে সাহায্য করার জন্য জনগণের কাছ থেকে অনুদান চেয়েছে। সংবাদপত্র এবং ওয়েব পোর্টালগুলি রাগীশ বাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণও প্রকাশ করেছে যাতে লোকেরা তাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে পারে।
-কেএল