কাউসার লাবীব: স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মাদরাসামুখী করার প্রয়াস নিয়ে ইলমের নগরী চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে ভিন্নধর্মী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল হাসানাইন। ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে বেশ সুনাম ছড়াচ্ছে মাদানি নেসাব ও কেম্ব্রিজের সিলেবাসে পরিচালিত ইংলিশ মিডিয়াম মাদরাসাটি।
২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ভিন্নধর্মী এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠানটির সুনাম-সুখ্যাতি বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ শিক্ষার মান ও পরিবেশের মান রক্ষার্থে সবসময়ই সচেতন। যার ফলে আল হাসানাইন মুগ্ধ করছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগী সবাইকে।
মূলত, নিরাপদ ও উন্নত পরিবেশের অভাবে সমাজের এক শ্রেনির মানুষ তাদের সন্তানকে মাদ্রাসায় পাঠাতে পারছেন না, তাদেরকে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ তৈরি করার জন্যই গড়ে উঠেছে আল হাসানাইন। ভালমানের আলেম হওয়ার পাশাপাশি ও/এ লেভেল, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, ছাত্রদের চাপমুক্ত রেখে আনন্দদায়ক পরিবেশে প্র্যাক্টিকাল পদ্ধতিতে পাঠদান আল হাসানাইনের অন্যতম বৈশিষ্ট। পড়াশোনাকে আনন্দদায়ক করতে তারা প্রতি সপ্তাহে তাদের শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে ভ্রমনে বের হয়।
জানা যায়, লেখাপড়াসহ শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিষয়ে আল হাসানাইন-এর ব্যবস্থাপনা প্রশংসনীয়। নিরাপদ ও উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করতে তাদের রয়েছে একদল নিবেদিত শিক্ষক ও সাপোর্টিং স্টাফ । এক্ষেত্রে তারা প্রতি বিশ জন ছাত্রের জন্য দুইজন শিক্ষক ও একজন সাপোর্টিং স্টাফের ব্যবস্থা রেখেছে। দরসে নেজামির ক্ষেত্রে তারা মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ সাহেবের প্রনয়ণকৃত মাদানী নেসাব এবং জেনারেল সিলেবাসের ক্ষেত্রে ক্যামব্রিজ কারিকুলাম অনুসরণ করছে।
তাছাড়া শিক্ষা ও আবাসনের পরিবেশ এবং নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস-রুম, কম্পিউটার ল্যাব, সিসি টিভি, এয়ার কন্ডিশনার, গিজার, ভ্যাকুয়াম ক্লিনারসহ যাবতীয় উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে প্রযুক্তি গ্রহনের ক্ষেত্রে শরিয়াহ বহির্ভূত বিষয় পরহেয করা হচ্ছে কঠোরভাবে। ছাত্র পরিবহনের জন্য রয়েছে নিজস্ব আরামদায়ক পরিবহন ব্যবস্থা। ছাত্র পরিবহনেও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ড্রাইভারের সাথে রাখা হয় সাপোর্টিং স্টাফ।
একটি প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মান বজায় রাখতে হলে প্রয়োজন যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক। তাই কোন মানের শিক্ষক নিয়ে এগিয়ে চলছে আল হাসানাইন পরিবার? এ সম্পর্কে জানতে চাইলে আল হাসানাইন কর্তৃপক্ষ জানায়, উস্তাদগনের সবাই বিভিন্ন স্বনামধন্য মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস ও তাখাসসুসের পাশাপাশি ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন ও পোষ্ট গ্রাজুয়েশন করেছেন। ছাত্র-শিক্ষকদের রুহানি ও ইলমি উন্নতির লক্ষ্যে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ইসলাহী মজলিস ও বিভিন্ন ট্রেনিং এর আয়োজন করে যাচ্ছে। তাছাড়া অভিভাবকদের সাথেও নিয়মিত মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয় বলেও জানান আল হাসানাইন কর্তৃপক্ষ।
আল হাসানাইন-এর সার্বিক বিষয়ে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই চান তাদের প্রাণাধিক সন্তানকে এখানে ভর্তি করাতে। তাই ভর্তি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় আল হাসানাইন কর্তৃপক্ষের কাছে। তারা জানান, কোয়ালিটি ধরে রাখার লক্ষ্যে সীমিত সংখ্যক আসনে এডমিশন টেস্টের মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি করা হচ্ছে। শুধুমাত্র উত্তীর্ণ হলেই ভর্তি হতে পারে। বর্তমানে শুধু ছেলেদের পড়ার ব্যবস্থা আছে। আগামী জুলাই-২০২২ থেকে মেয়েদের জন্য আলাদা ক্যাম্পাস চালু হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে রাওদাহ ১, ২, ৩, ও তামহিদ ১, ২, ৩ (প্লে, নার্সারি, কেজি, গ্রেড-ওয়ান গ্রেড-টু ও গ্রেড -থ্রী) পর্যন্ত রয়েছে। প্রতি বছর এক/দুইটি ক্লাস বৃদ্ধি করা হচ্ছে যা পর্যায়ক্রমে দাওরায়ে হাদিস এবং এ লেভেল পর্যন্ত উন্নিত করা হবে বলে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জানান । পাশাপাশি ছেলেদের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হিফজুল কোরআন বিভাগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সামনে কোন কোন বিভাগ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ জানায়, আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য প্রতিষ্ঠানকে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত উন্নিত করা। পরবর্তীতে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর দেশের ও দেশের বাইরের স্কলারদের মাধ্যমে পরিচালিত বিশেষায়িত কোর্স (তাখাসসুস বিভাগ) চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অনন্য এ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও উপদেষ্টাদের মধ্যে রয়েছেন, মুফতি ফরিদ উদ্দিন শাহেদ, প্রফেসর মোহাম্মদ হোসেন, ড. জি এম নিজামুদ্দিন।
জানা যায়, মূলত আল হাসানাইন একটি অলাভজনক চ্যারিটিবল প্রতিষ্ঠান; যার প্রতিটি স্তরে সুন্নাহ ও তাক্বওয়াকে অবলম্বন করা হয়। তাক্বওয়াকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বিভিন্ন সময় আর্থিক ভর্তুকি দিতেও প্রতিষ্ঠান পিছপা হয় না। উদহারন দিতে গিয়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বলেন, কেম্ব্রিজের বই হতে শরিয়ত পরিপন্থি বিষয় বাদ দিতে বিশাল অংকের ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে।
আগ্রহী অনেক অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগীগণ আল হাসানাইন সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জানার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন। সেসব আগ্রহীগণ এখনই যোগাযোগ করতে পারেন 880 1847-422750, 880 1620-112112 নাম্বারে। তাছাড়া সরাসরি ক্যাম্পাস পরিদর্শনের সুব্যবস্থাও রেখেছে আল হাসানাইন পরিবার। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে চলে আসতে যেতে পারেন: রোড নং ৬, কসমোপলিটন আবাসিক এলাকা, পূর্ব নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম।
-কেএল