নাহিদ হাসান।। রোজা ফারসি শব্দ যার আরবী প্রতিশব্দ হলো সাওম।তার শাব্দিক অর্থ সংযম।সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও যাবতীয় ভোগবিলাস থেকে বিরত থাকাকে রোজা বলে। রোজা ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম একটি।
ঈমান,সালাত ও যাকাতের পরেই রোজার অবস্থান। রোজা হলো শারিরীক ইবাদত। মুসলমান, বোধশক্তি সম্পন্ন ও প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেক নর-নারীর উপর রমজানের রোজা ফরজ। যা ফরজ করা হয় দ্বিতীয় হিজরীর শাবান মাসে।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, হয়তো তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করবে।(সূরা বাকারা আয়াত-১৮৩) হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন তোমাদের জন্য বরকতময় মাস রমজান এসেছে।
এ মাসে সাওম পালন করা আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য ফরজ করে দিয়েছেন। এ মাসে আসমানের দরজাগুলা খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবং চির অভিশপ্ত শয়তানকে শিকল বন্ধি করে রাখা হয়।
এ মাসে একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে অবশ্যই প্রত্যেক কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত রইলো। (নাসায়ী-২১০৬)
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে অপর এক হাদিসে বর্ণিত আছে,রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াব লাভের আশায় সিয়াম পালন করবে, তাঁর পিছনের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখারি-১৮০২)।
হযরত সাহল ইবনু সাদ রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে তার মধ্যে একটি দরজা আছে যার নাম 'রাইয়্যান' রোজাদারগণ এই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।(সহীহুল বুখারী- ৩২৫৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী- ৮৫২২) অপর এক হাদিসে বর্ণিত আছে নবী করিম (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ আদম সন্তানের প্রত্যেকটি নেক আমলের সওয়াব দশ থেকে সত্তর গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। কেননা রোজা আমার জন্য রাখা হয় আর আমিই এর প্রতিদান দিবো (বুখারী-১৯০৪) রোজাদারের মুখের দূর্গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মেশকে আম্বরের চেয়েও সুগন্ধিযুক্ত।
রোজা মুমিনের জন্য ঢাল স্বরূপ। যুদ্ধের ময়দানে ঢাল যেভাবে প্রতিপক্ষের হামলা থেকে রক্ষা করে,তেমনিভাবে রোজা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রোজা দারের জন্য রোজা অবস্থায় যে কাজগুলো করণীয় ও বর্জনীয়ঃ এক. দৃষ্টির হেফাজত করতে হবে। চক্ষুদৃষ্টির মাধ্যমে যত ধরনের পাপ আছে তা বর্জন করতে হবে। কু-দৃষ্টি শয়তানের বিষাক্ত তীরের একটি তীর।( কানযুল উম্মাল-১৩০৬৮)
দুই. যবানের হেফাজত করতে হবে। যবানের মাধ্যমে যত ধরনের পাপ হয় সব বর্জন করতে হবে। যেমন-মিথ্যা বলা,গীবত করা, চোগলখুরী করা ইত্যাদি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি রোজাঅবস্থায় মিথ্যা বললো ও গালাগালি করলো তার রোজার ব্যাপারে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (সুনানে নাসায়ী-৩২৪৭)।
তিন. সকল অঙ্গের হেফাজত করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, চক্ষু ও ত্বক তাদের কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ দিবে।( সূরা হা-মীম সেজদা-২০)।
যারা রোজা অবস্থায় উপরোক্ত কাজগুলো করবে রোজা তাদের জন্য ঢাল স্বরূপ নয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন এমন অনেক রোজাদার আছে যাদের রোজা কেবল উপবাস ছাড়া আর কিছুই নয়। অর্থাৎ রোজা অবস্থায় মিথ্যা বলে ও পরনিন্দা করে। রোজা অবস্থায় বেশি বেশি নফল ইবাদত,জিকির আযকার ও কুরআন তেলাওয়াত করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পরিশুদ্ধ নিয়তে সঠিকভাবে রোজা পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন
লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক।
-এটি