আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দল তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতৃত্বাধীন জোট ত্যাগ করেছে আরও একটি দল। ইমরান খান সরকারের প্রধান মিত্র মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এম কিউ এম) বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ত্যাগের ঘোষণা দেয়। এম কিউ এম জোট ত্যাগ করায় ইমরান খানের পতন একপ্রকার নিশ্চিতই হয়ে গেল। এখন কেবল আনুষ্ঠানিকতা বাকি। বুধবার দ্য ডনের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
বুধবার ইসলামাবাদে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টের (এম কিউ এম) আহ্বায়ক খালিদ মকবুল সিদ্দিকী এক সংবাদ সম্মেলনে জোট থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের বিষয়টি জানিয়ে বলেন, তাঁরা প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের আগে বিরোধী শিবিরে যোগ দিচ্ছেন। জোট সরকারে এম কিউ এমের প্রাধান্য থাকায় দলটি জোট ত্যাগের ফলে প্রধানমন্ত্রী ইমরান দেশটির জাতীয় পরিষদে সরকার গঠনের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবেন।
খালিদ মকবুল সিদ্দিকী বলেন, `আমরা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে একত্র হয়েছি। আমি আশা করি এবার আমরা এমন একটি গণতন্ত্রের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে পারি যার প্রভাব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। এই প্রত্যাশা নিয়েই আমরা আপনাদের (বিরোধীদের) এই যাত্রায় যোগ দিয়েছি। আমাদের কোনো ব্যক্তি বা দলীয় সুবিধা নেই। আমাদের চুক্তির প্রতিটি ধারা পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের জন্য এবং বিশেষ করে সেই সব এলাকার জন্য যাদের আমরা গত ৩৫ বছর ধরে প্রতিনিধিত্ব করে আসছি।'
খালিদ মকবুল সিদ্দিকী আরও বলেন, `আমরা ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে পাকিস্তানের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছি।'
মকবুল সিদ্দিকীর ঘোষণার পর জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলের নেতা শাহবাজ শরীফ বলেছেন, `আজ পাকিস্তানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কারণ আজ বিরোধী দলগুলো একত্র হতে পেরেছে এবং জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রচেষ্টা করা হয়েছে।'
শাহবাজ শরীফ আরও বলেন, `আমি এম কিউ এম এবং দলটির নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা পাকিস্তানের ২২ কোটি মানুষের ইচ্ছা হৃদয়ে রেখে এবং এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি আসিফ আলী জারদারি ও বিলাওয়ালের কাছে কৃতজ্ঞ যে—তারা আলোচনার এই পুরো প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে ইতিহাসকে একপাশে রেখে পাকিস্তানের সমৃদ্ধি এবং সুখের জন্য এই যাত্রা শুরু করেছে।'
পিপিপি নেতা বিলাওয়ালও এম কিউ এম-কে ধন্যবাদ জানিয়ে এম কিউ এমের সিদ্ধান্তকে `ঐতিহাসিক' বলে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, `আমি বলতে চাই, পিপিপি ও এম কিউ এম সম্পর্ক অনাস্থা প্রস্তাবের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়। যদি আমরা করাচি ও পাকিস্তানের সমৃদ্ধির জন্য কাজ করতে চাই তবে পিপিপি ও এম কিউ এমকে যেকোনো শর্তে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।'
বিলাওয়াল আরো বলেন, ‘ইমরান খান জাতীয় পরিষদে তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন, তিনি আর প্রধানমন্ত্রী নন। আগামীকাল সংসদ অধিবেশন। আসুন আগামীকাল ভোট দেই করি এবং বিষয়টির নিষ্পত্তি করি। তার পর আমরা একটি স্বচ্ছ নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথে যাত্রা শুরু করে তা শেষ করতে পারি।’
জমিয়তে উলেমা-ই-ইসলাম-ফজলের প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমানও এম কিউ এমের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘সিদ্ধান্তটি শুধু করাচি কিংবা সিন্ধু নয় পুরো পাকিস্তানের জন্য জাতীয় ঐক্যের অভিব্যক্তি। এই সিদ্ধান্তের ফলে (সরকারের মিত্ররা বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ায়) জাতীয় পরিষদে আমাদের পক্ষের আসনসংখ্যা এখন ১৭৬ অথচ আমাদের দরকার মাত্র ১৭২টি আসন।’
এনটি