মুযযাম্মিল হক উমায়ের।।
প্রিয় ভাইয়েরা! হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের চোখ মোবারকের দিকে দেখুন। তিনি উম্মাতের জন্য কতো বেশি কান্না করেছেন। উম্মাতের জন্য কতো বেশি পেরেশানী পোহায়েছেন। মদীনার পরিবেশে দশ বছরের কান্না সংরক্ষিত আছে। তায়েফের উপত্যকায় পাথর খাওয়ার ইতিহাস সংরক্ষিত আছে। মক্কার অলিতে—গলিতে দীনের দাওয়াত নিয়ে ঘুরাফেরা করা।
কাফেরদের পক্ষ থেকে গালি—গালাজ শুনার ইতিহাসও সংরক্ষিত আছে। এতো ঝড়—ঝাপ্টার পরও তিনি উম্মতি উম্মতি বলে কান্না করেছেন। উম্মতকে কী পরিমান মহব্বত করতেন, তা নীচের হাদিসটি দ্বারা সহজেই বুঝা যায়।
উম্মতের মধ্যে মর্যাদার দিক দিয়ে সাহাবাগণ সবার উপরে— এই কথা সর্বস্বীকৃত। আর সাহাবাগণের ইসলামের জন্য ত্যাগ তীতিক্ষা এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি তাঁদের ভালোবাসার নজির পৃথিবীর কোন ইতিহাসে কাউকে দেখানো যাবে না।
এতদাসত্ত্বেও হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই উম্মতকে সুসংবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি আমার ভাইদের সাথে মিলিত হতে চাই। সাহাবাগণ বরলেন, আমরা কী আপনার ভাই নই? উত্তরে তিনি বললেন, না। তোমরা আমার সাহাবী। আমার ভাই হলেন তাঁরা যারা আমাকে না দেখেও আমার প্রতি ঈমান এনেছে’।
হুজুর সাল্লস্নাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিাকলের এক সপ্তাহ আগে হজরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও তাঁর সাথীরা হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসেন। তখন তিনি তাঁদেরকে দেখে কান্না শুরু করে দেন।
তারপর বলেন, তোমাদেরকে আমার সালাম। যারা আমার পর আসবে তাঁদেরকেও আমার পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছে দিয়ো। এবং কেয়ামত পর্যন্ত যারা আসবে তাঁদেরকেও তোমরা বলে দিয়ো যে, তোমাদের নবি তোমাদেরকে সালাম পেশ করেছেন।
প্রিয় ভাইয়েরা! ভাবুন! এমন দয়ালু ও মহব্বতের নবির জন্য আমরা কী করেছি। হাশরের ময়দানে যখন এমন দয়ালু ও মহব্বতের নবির মুখোমুখি হতে হবে, তখন তাঁর সামনে কীভাবে দাঁড়াবো? পলানোর মতো কোথাও জাগা পাওয়া যাবে? এমন মহান দয়ালু ও মহব্বতের নবির ডানে—বামে কোথায় পালিয়ে কি পরিত্রাণ পাওয়া যাবে?
হাশরের ময়দানে কি বলতে পারবো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নিজের মনকে মানাতে পারিনি। আমি এই এই কারণে আপনার সুন্নতের বিপরিত করেছি। এই কথা কি বলতে পারবো যে, আমি সন্তানদেরকে বরণ পোষণ করতে গিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলাম। সুদ গ্রহণ করেছিলাম।
হজরত হুসাইন রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর কর্তিত মাথা দেখে কি এমন অযোক্তিক কথা বলতে পারবো? হজরত জায়নাব রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার ফাঁটা আঁচল দেখার পরও কি এমন খোড়া যুক্তি দেখাতে সাহস পাবো?
হজরত আব্দুল্লাহ বিন হুসাইন রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর কর্তিত মাথা ও মাথা থেকে কর্তিত দেহ দেখার পরও কি আমরা এমন নড়ভড়ে যুক্তি দেখিয়ে বলতে পারবো যে, আমরা সন্তানাদী লালন—পালনের চাপে মিথ্যা বলেছিলাম। সুদ গ্রহণ করেছিলাম। আপনার সুন্নতের বিপরিত করেছিলাম? কি মনে হয়? আমরা কী এমন কথা বলার সাহস হাশরের ময়দানে মহান দয়ালু ও উম্মতের দরদী নবি হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে বলতে পারবো?
যদি বলতে না পারি, তাহলে আজ থেকেই নিজেদের অতিতকে শুধরাতে হবে। নিজেদের ভুলগুলিকে খুঁজে খুঁজে বের করে সংশোধন করতে হবে। অতিতে করে ফেলা গুনাহসমূহের জন্য আজই তওবা করতে হবে। অন্যদেরকেও তওবা করার দাওয়াত দিতে হবে। ভবিষ্যৎ এ করবো না এই প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
সূত্র: মাওলানা তারিক জামিলের বয়ানের অনুবাদ
-এটি