মুযযাম্মিল হক উমায়ের
প্রিয় ভাইয়েরা! হায়! হায়! আমরা কীসের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি? এই ক্রিকেট খেলায় হেরে যাওয়ার কারণে আমরা আফসোস করছি? আমি তো কয়েকদিন আগে এই কথা মনে করে অনেক কান্না করেছি যে, আমাদের প্রজন্মরা আমাদের রেখে যাওয়া নিয়ে যখন ইতিহাস রচনা করার জন্য কলম হাতে নিবে, তখন তারা আমাদের শিক্ষণীয় এমন কোন দিকটি নিয়ে ইতিহাস রচনা শুরু করবে? যখন আমাদের থেকে শিক্ষণীয় এমন কিছু পাবে না যার দ্বারা ইতিহাস রচনা করতে পারবে, তখন তো তাদের কলম, কলম থাকবে না। প্রতিটি কলম তাদের হাতে তরবারির মতো হয়ে যাবে।
প্রিয় ভাইয়েরা! যখন স্পেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলো, তখন সেখানে বাদশা দেশকে রক্ষা করার চিন্তা করার পরিবর্তে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় মত্ত ছিলো। ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় মত্ত ছিলো। উট প্রতিযোগিতায় মত্ত ছিলো।
পরিণামে যা হওয়ার তাই হয়েছে। স্পেন মুসলমানদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। মুসলমানদের ঐতিহ্য ইসলামী লাইব্রেরী, মসজিদ, মাদরাসাসমূহকে আগুন দ্বারা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে।
তুর্কিস্তানে যুদ্ধ চলছে। এইদিকে তুর্কিস্তানের বাদশা চেঙ্গিসখান দেশ রক্ষা করার চিন্তা না করে হুলি খেলায় মত্ত ছিলো। এবং স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করায় মত্ত ছিলো। পরিণামে যা হওয়ার তাই হয়েছে। তুর্কিস্তান মুসলমানদের হাতছাড়া হয়ে গেছে।
বগাদাদে তাতারিদের হামলা চলছে। এইদিকে বাগদাদের বাদশার ছেলে কবুতর ওড়ানো খেলায় মত্ত ছিলো। পালোয়ানদের মধ্যে শক্তির প্রতিযোগিতা নিয়ে মত্ত ছিলো। ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা নিয়ে মত্ত ছিলো। নৌকা বাইচ প্রতিযোগি নিয়ে মত্ত ছিলো। বাগদাদ রক্ষা করার জন্য কোন কৌশল অবলম্বন করেনি।
পরিণামে যা হওয়ার তাই হয়েছে। তাতারিরা বাগদাদ দখল করে নিয়েছে। ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ইসলামী কিতাবের সংগ্রহশালাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেখানের কিতাবগুলি দ্বারা বাগদাদের নদিতে পুল নির্মাণ করেছিলো। দীর্ঘ মাসব্যাপি সেই নদির পানি কিতাবের কালির কারণে কালো পানি হয়ে প্রবাহিত হয়েছিলো। অথচ, তখনও সে খেলাধুলার মধ্যে মত্ত ছিলো।
প্রিয় ভাইয়েরা! আপনার বলুন! বর্তমানে ক্রিকেট খেলায় হেরে যাওয়া ও জিতে যাওয়ার কারণে যে আনন্দ ও দুঃখ বেদনায় লোকজনকে মত্ত হতে দেখা যাচ্ছে— এই পরিস্থিতে আমি চোখের পানি কোথা থেকে নিয়ে আসবো? কোথা থেকে ফরিয়াদ নিয়ে আসবো?
যে উম্মাত বা জাতি তুচ্ছ এই ক্রিকেট খেলায় হেরে যাওয়ার কারণে এতোটা ভারাক্রান্ত হতে দেখা যায়, অথচ, আল্লাহ তায়ালার বড় বড় নাফরমানকে দেখে তাদের অন্তর থেকে ব্যথার শব্দ আহ বের হতে দেখা যায় না। তাদেরকে চিন্তিত হতে দেখা যায় না। কাউকে কান্না করতে দেখা যায় না।
যদি লোকদেরকে নাফরমানি করতে দেখেও তাদের চোখ থেকে অশ্রম্ন বের না হয়। মসজিদ খালি অথচ বাইরে গল্পের জমজমাট আড্ডা। কিন্তু এই নিয়ে তাদের মাথায় কোন ব্যথা না থাকে।
মসজিদ খালি অথচ বাইরে জমজমাট জুয়ার আড্ডা। কিন্তু এই নিয়ে কারো পরওয়া নেই। মা আর্তনাত করতেছে অথচ তার সন্তান নাচ—গানে মত্ত।
পিতা বিছানায় পাশ পরিবর্তন করতেছে অথচ তার সন্তান টেলিভিশন দেখায় ব্যস্ত। নাচ—গানে মত্ত। অন্যদিকে পিতা এই আশা করে বসে আছে যে, আমার সন্তান আমার খেদমত করবে। তাহলে তো এই জাতির ধ্বংস হওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।
সূত্র: মাওলানা তারিক জামিল সাহেবের বয়ানের অনুবাদ
-এটি