আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার জন্য বিখ্যাত ২৫ টি শহরের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদের শহর বাগেরহাট। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড মোনুমেন্টস ফান্ড (ডাব্লিইউএমএফ) এই তালিকা প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি প্রতি দুই বছর পরপর এই তালিকা প্রকাশ করে।
ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ যেসব স্থান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ভারসাম্যহীন পর্যটন ও কম প্রচারণার কারণে পিছিয়ে পড়ছে, এমন স্থান ও স্থাপনার সংরক্ষণে তহবিল জোগানো ও এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছে ডাব্লিইউএমএফ।
২২৫টিরও বেশি স্থানের তালিকা থেকে যাচাই-বাছাই করে ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ওয়াচ এবারের তালিকা তৈরি করেছে বলে তাদের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।
পনেরোশ শতকে মুসলিম দাঈ খান জাহান আলীর হাত ধরে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভৈরব নদীর তীরে বাগেরহাট শহরের গোড়াপত্তন। শহরটির ঐতিহ্যবাহী ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ষাট গম্বুজ মসজিদ, সিংরা মসজিদ, খান জাহান আলীর সমাধিসৌধ, নয় গম্বুজ মসজিদ, জিন্দাপীর মসজিদ, বিবি বেগনি মসজিদ, চুনাখোলা মসজিদ, রনবিজয়পুর মসজিদ। দিল্লীর তুঘলকি স্থাপত্যরীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্থাপনায় সমৃদ্ধ এই শহরের প্রাচীন নাম ছিল খলিফাতাবাদ।
এ বিষয়ে ডাব্লিউএমএফের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী বেনেদিক্তে দে মঁৎলাউ বলেন, “এ বছরের ওয়াচে দেখানো হয়েছে যে ঐতিহ্য সংরক্ষণ একইসঙ্গে চলমান বিশ্বের সংকটগুলো মোকাবেলারও উদ্ভাবনী সমাধান দিতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “এসব অনন্য সাংস্কৃতিক গুরুত্ব সমৃদ্ধ স্থানগুলো সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর পাশে দাড়াতে আমরা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এসব স্থান সমাজের বৃহত্তর সংকটগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর স্বীকৃতির চাহিদা, প্রবেশাধিকার, অংশগ্রহণ ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির বিষয়গুলোর সমাধানের পথ দেখাতে পারে।”
ওয়ার্ল্ড মনুমেন্টস ফান্ড-এর এ বছরের মনোনয়নের জন্য গবেষণার কাজে নিযুক্ত তরুণ গবেষক ও স্থপতি ইমামুর হোসেন বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। গাঙ্গেয় বদ্বীপে অবস্থিত বাগেরহাটের এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দীর্ঘ সময় বন্যা ও দুর্যোগ মোকাবেলা করে আসছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে এই এলাকার স্থাপনাগুলো সবসময়ই ঝুঁকিতে আছে।”
স্থপতি ইমামুর হোসেনের সঙ্গে গবেষণার কাজে যৌথভাবে নিযুক্ত স্থপতি নিশান্ত উপাধ্যায় বলেন, “দিনে দিনে ভূগর্ভস্থ পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। লাভজনক হওয়ার কারণে স্থানীয় কৃষক ধান চাষের চেয়ে চিংড়ি ঘেরে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, যার পরিণতিতে কৃষি জমিতেও দিনে দিনে লবণাক্ততা বেড়েছে।”
ওয়েবসাইটে ওয়ার্ল্ড মনুমেন্টস ফান্ড জানিয়েছে, এ বছর যে ২৫টি ঐতিহ্যবাহী স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো ২৪টি দেশ এবং ১২ হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রতিনিধিত্ব করে।
এ বছরের তালিকায় বাগেরহাটের সঙ্গে স্থান পেয়েছে-
১. কলকাতার “চায়না টাউন” খ্যাত টেরিবাজার
২. পাকিস্তানের লাহোরে জাহাঙ্গীরের সমাধি
৩. লিবিয়ার ঐতিহাসিক বেনগাজি শহর
৪. যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামার আফ্রিকা টাউন
৫. টেক্সাসের গার্সিয়া চারণভূমি
৬. যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পশায়েরর হার্স্ট কাসেল
৭. লেবাননের বৈরুতের ঐতিহ্যবাহী ভবন
৮. অস্ট্রেলিয়ার কিনচেলার কিনচেলা অ্যাবোরিজিনাল বয়েজ ট্রেনিং হোম
৯. কম্বোডিয়ার মোনদুলকিরি প্রদেশের বুনোং জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপ
১০. চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের ইয়াংতাইয়ের দুর্গ-প্রসাদ
১১. ইন্দোনেশিয়ার সুম্বা দ্বীপ
১২. নেপালের কাঠমান্ডু উপত্যকার হিতিস (ঝরনা)
১৩. সুদানের নুরি
১৪. বেলিজের ভারতীয় গির্জা গ্রাম- লামানাই
১৫. ব্রাজিলের মন্তে আলেগ্রে স্টেট পার্ক
১৬. বার্কিনা ফাসোর উয়াগাদুগুর লা মাইসন দু পিউপিল
১৭. মিসরের আবিদোস
১৮. ঘানার আসান্তে ঐতিহ্যবাহী ভবন
১৯. মালদ্বীপের কোয়াগানু মসজিদ ও সমাধিক্ষেত্র
২০. মেক্সিকোর সান হুয়ান তিওতিহুয়াকানের তিওতিহুয়াকান
২১. পেরুর মিরাফ্লোরেস জেলার ইয়ানাকানচা-হুয়াকিস সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপ
২২ পর্তুগালের লিসবনের মেরিন স্টেশনের (আলমাদা নেগরেইরোস মুরাল), আলকানতারা অ্যান্ড রোচা দো কোন্দে দে ওবিদোস
২৩. রোমানিয়ার তিমিসোয়ারার ফেব্রিক সিনাগগ ও তিমিসোয়ারার ইহুদি ঐতিহ্য
২৪. ইয়েমেনের সোকোত্রা দ্বীপপুঞ্জ
১৯৯৬ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ওয়াচ এ তালিকা প্রকাশ করে আসছে৷ ডাব্লিইউএমএফ এর সদরদপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে৷ ভারত, যুক্তরাজ্য, পেরু, স্পেন, পর্তুগাল ও কম্বোডিয়ায় তাদের শাখা রয়েছে।
এনটি