আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: আলতাফ হোসাইন নামে একজন জানতে চেয়েছেন, সন্তান গর্ভে থাকাকালীন সময়ে পিতামাতার চলাফেরার (পর্দার খেলাপ) উপর কি সন্তান ভালমন্দ হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
আর বর্তমানে সন্তান প্রসব করার সময় সিজার করা একটা আধুনিকতা হয়ে গেছে এ ব্যাপারে শরিয়তের বিধান কি? আর সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার সময় মায়েদের যে কষ্ট হয় তার ফজিলত কি?
উত্তর-
গর্ভকালীন কর্মের প্রভাব সন্তানের উপর; চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে- ‘গর্ভকালীন বয়স ৪-৫ মাস হলেই মায়ের কার্যক্রম সন্তানের উপর প্রভাব ফেলে’। তাই ডাক্তাররা বলেন, সন্তান গর্ভে নিয়ে কখনো দুশ্চিন্তা করবেন না, পারতপক্ষে ভয়ংকর পরিবেশের সম্মুখিন হবেন না, সব সময় খোশ মেজাজে থাকার চেষ্টা করবেন ইত্যাদি।
সুতরাং গর্ভকালীন অবস্থায় মা বাবার সতর্ক থাকা উচিত। বেশি বেশি ইবাদত ও দুআর প্রভাব সন্তানের উপর পড়বে। তাই গোনাহ ত্যাগ করা, পাপাচারে নিমগ্ন হওয়া থেকে বিরত থাকা সন্তানের জন্য কল্যাণকামী হয়ে থাকে।
সিজার করার বিধান; সন্তান বা মায়ের প্রাণনাশের আশংকা থাকলে যদি কোন বিজ্ঞ ডাক্তার সিজার ছাড়া আর কোন গত্যান্তর নেই বলে, তাহলেই কেবল সিজার করা জায়েজ আছে।
প্রসবকালীন স্বাভাবিক যে কষ্ট হয়, শুধু সেটাকে রোখার জন্য, বা বাচ্চা ও মায়ের কোন সমস্যা না থাকার পরও অহেতুক সিজার করা জায়েজ নেই।
ولو ماتت امرأة حامل والولد حيى يتحرك، قد تجاوز ستة أشهر، فانه يشق بطنها طولا ويخرج الولد، لقوله تعالى: ومن أحياها فكأنما أحيا الناس جميعا” ومن تركه عمدا حتى يموت فهو قاتل نفس (المحلى لابن حزم، مسئلة حمل الغش-3/396، دار الفكر بيروت)
عن الامم أبى حنيفة أنه أمر بشق بطن الحامل (الأشباه والنظائر لابن نجيم-88)
يشق بطنها ويخرج الولد لا يسع الا ذلك (الفتاوى الهندية-5/157)
و لا بأس بشق المثانة إذا كانت فيها حصاة، و في الكيسانيات: في الجراحات المخوفة و القروح العظيمة و الحصاة الواقعة في المثانة و نحوها إن قيل: قد ينجو و قد يموت، أو ينجو و لايموت يعالج، و إن قيل: لاينجو أصلًا لايداوى بل يترك، كذا في الظهيرية (الفتاوى الهندية-5/360)
সন্তান জন্মদানের সময়কার কষ্টের ফযীলত; মুমিনের প্রতিটি কষ্টের বিনিময় রব্বে কারীম দান করে থাকেন। ঐ ব্যক্তির গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
সেই হিসেবে যেহেতু গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন সময়ে মায়েদের সীমাহীন কষ্ট হয়ে থাকে। তাই উত্তমরূপে ধৈর্যধারণ করতে পারলে ও আল্লাহর উপর ভরসা থাকলে অবশ্যই উক্ত কষ্টের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে উত্তম বিনিময় পাওয়া যাবে। গোনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا يُصِيبُ المُسْلِمَ، مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ، وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ، حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا، إِلَّا كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ
আবূ সা‘ঈদ খুদরী ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৬৪১]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَرَضِهِ، وَهُوَ يُوعَكُ وَعْكًا شَدِيدًا، وَقُلْتُ: إِنَّكَ لَتُوعَكُ وَعْكًا شَدِيدًا، قُلْتُ: إِنَّ ذَاكَ بِأَنَّ لَكَ أَجْرَيْنِ؟ قَالَ: «أَجَلْ، مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى إِلَّا حَاتَّ اللَّهُ عَنْهُ خَطَايَاهُ، كَمَا تَحَاتُّ وَرَقُ الشَّجَرِ
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসুস্থ অবস্থায় তাঁর কাছে গেলাম। এ সময় তিনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমি বললামঃ নিশ্চয়ই আপনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত। আমি এও বললাম যে, এটা এজন্য যে, আপনার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব। তিনি বললেনঃ হাঁ। যে কেউ রোগাক্রান্ত হয়, তাত্থেকে গুনাহসমূহ এভাবে ঝরে যায়, যেভাবে গাছ হতে তার পাতাগুলো ঝরে যায়। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৬৪৭] সূত্র- আহলে হক মিডিয়া।
-কেএল