আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দোনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর কয়েক সদস্যরাষ্ট্র।
কিন্তু এই জোটেরই অপর সদস্য তুরস্ক এসব নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। পাশাপাশি, রাশিয়ার বিরুদ্ধে এইসব শাস্তিমূলক পদক্ষেপ সমস্যার সমাধানে কোনো কাজে আসবে না বলেও মনে করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান।
মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন জার্মানির জাতীয় দৈনিক ডাই ওয়েল্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কে বলেন, ‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি অর্থহীন। এর মাধ্যমে সংকটের কোনো সমাধান হবে না, উপরন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হবে। কারণ, রাশিয়া ন্যাটোকে হুমকি মনে করে।’
ইউক্রেন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তুরস্কের অবস্থান বেশ স্বতন্ত্র। কারণ, এই দেশটি একই সঙ্গে ইউক্রেন ও রাশিয়া— উভয়েরই ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর অন্যতম সদস্য তুরস্ক।
জ্বালানী সম্পদের জন্য রাশিয়ার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল তুরস্ক। ২০১৯ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি কেনে তুরস্ক, যা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্কে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।
তবে সম্প্রতি তুরস্কের ওপর কিছুটা ক্ষুব্ধ মস্কো। কারণ জ্বালানি সম্পদ, বিশেষ করে গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল এই দেশটি ইউক্রেনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ধরে রাখতে আগ্রহী।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর তুরস্কে মোট ব্যবহৃত জ্বালানি গ্যাসের ৪৬ শতাংশই এসেছে রাশিয়া থেকে। অন্যদিকে, একই বছর ইউক্রেনের কাছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কিছু সামরিক ড্রোন বিক্রি করেছে তুরস্ক ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রয়োজনে আরও ড্রোন সরবরাহ করা হবে। এই ব্যাপারটিই ক্ষুব্ধ করেছে মস্কোকে।
গত ডিসেম্বর থেকে ইউক্রেন সীমান্তে যখন সেনা মোতায়েন শুরু করে রাশিয়া, ন্যাটোর অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রের মতো তুরস্কও তার সমালোচনা করেছিল, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ন্যাটোর অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দেওয়া শুরু করার পর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ হয়ে যায় তুরস্ক।
দেশটির ইস্তাম্বুলভিত্তিক সাময়িকী গ্লোবালসোর্স পার্টনারের রাষ্ট্রীয় নীতি বিশ্লেষক আতিলা ইয়েসিলাদা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির কারণে এমনিতেই গত কয়েক মাস ধরে তুরস্কের অর্থনীতি কিছুটা নড়বড়ে অবস্থায় আছে। এই পরিস্থিতিতে যদি তুরস্ক রাশিয়ার কাছ থেকে গ্যাস কেনা বন্ধ করে দেয়, তাহলে জাতীয় অর্থনীতি বিশাল এক খাদে পড়বে।’
এনটি