মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ: টুপি মুসলিম উম্মাহর ‘শিআর’ বা জাতীয় নিদর্শন। টুপি নবী করিম (সা.) নিজে পরেছেন, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন ও পরবর্তী সময়ে সব যুগে মুসলিমদের টুপি পরিধানের ব্যাপক আমলের ধারাবাহিকতা চলে আসছে।
টুপি পরিধান করা শুধু নামাজের সুন্নত নয়; বরং সর্বাবস্থায় টুপি পরিধান করা মহানবী (সা.) থেকে প্রমাণিত। বুখারি শরিফে হাসান বসরি (রহ.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, সাহাবায়ে কেরাম (রা.) গরমের দিনে নামাজে পাগড়ি বা টুপির ওপর সিজদা করতেন। (সহিহ বুখারি : ১/৮৬)
হাদিস ও আসারে নবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে বিভিন্ন ধরনের টুপি পরিধানের প্রমাণ পাওয়া যায়। এর আলোকে জানা যায়, নির্দিষ্ট কোনো ধরনের টুপি পরিধানকে সুন্নত বলা উচিত নয়। ইসলামী শরিয়তের উসুল ও মূলনীতি অনুসারে যে টুপি হবে, তা সুন্নত হিসেবে গণ্য হবে। তাই শুধু পাঁচ কল্লি টুপিতে সুন্নত বলার সুযোগ নেই।
তবে হ্যাঁ, আকাবেরে দেওবন্দের মধ্যে হাকিমুল উম্মত থানভি (রহ.) পাঁচ কল্লি টুপি ব্যবহার করতেন বিধায় অনেকে এ জাতীয় টুপি পরিধান করে থাকে। এ ধরনের টুপি পরিধান করলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। পাঁচ কল্লি টুপির তাৎপর্য হলো, এটি মাথার সঙ্গে লেগে থাকে। পরিধানে সহজ ও আরামদায়ক। আবার ইসলামের মূল স্তম্ভ পাঁচটি। তাই এসব দিকে চিন্তা করে অনেকে পাঁচ কল্লি টুপির ব্যবহার করেন।
টুপির ক্ষেত্রে শরিয়তের মূলনীতি হলো, টুপি রেশম, স্বর্ণ, রুপার তৈরি হতে পারবে না; কাফির ও নারীদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হতে পারবে না; অহংকার ও দাম্ভিকতাপূর্ণ হতে পারবে না। তবে সবচেয়ে উত্তম টুপি হলো, যা পরিধান করার মাধ্যমে বিনয় প্রকাশ পায়।
টুপির জন্য হাদিস শরিফে তিন ধরনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
এক. ‘কিমাম’। এর অর্থ গোল টুপি। (মেরকাত ও ত্বিবি শরহে মেশকাত)
হাদিস শরিফে এসেছে : রাসুল (সা.)-এর টুপি এ ধরনের ছিল যে তা মাথার সঙ্গে লেগে থাকত। (তিরমিজি শরিফ)
দুই. ‘বুরনুস’। এর অর্থ এমন কাপড়, যার অংশবিশেষ মাথার সঙ্গে লেগে থাকে। (আর রায়েদ)
আল্লামা জাওহারির মতে, ‘বুরনুস’ বলা হয় লম্বা টুপিকে। মুতামের (রহ.) বলেন, ‘আমি আনাস (রা.)-এর মাথায় লম্বা টুপি দেখেছি।’ (বুখারি শরিফ)
তিন. ‘কলানসুওয়া’। এর শাব্দিক অর্থ লুক্কায়িত ও ঢেকে দেওয়া বস্তু। পরিভাষায় ‘কলানসুওয়া’ বলা হয়, যা মাথার ওপর পরিধান করা হয় এবং তার ওপর পাগড়ি পরিধান করা হয়। (রদ্দুল মুহতার)
মূলকথা হলো, হাদিস শরিফে মহানবী (সা.) বিভিন্ন ধরনের টুপি ব্যবহার করার কথা এসেছে। যেমন—ইয়েমেনি টুপি, শাম দেশের টুপি, কানটুপি, যুদ্ধটুপি, নকশা করা সাদা টুপি ইত্যাদি। তাই টুপি পরিধান বিষয়ে মানুষের যার যার অভিরুচি অনুযায়ী স্বাধীনতা দেওয়া প্রয়োজন। তবে তা যেন কিছুতেই শরিয়তের সীমারেখার বাইরে না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
-কেএল