নাঈম উদ্দীন জামী।।
আমাদের জীবন একটি চক্রের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। আনন্দ থেকে বেদনা, ধনী থেকে দরিদ্রতার আবর্তনে জীবনচক্র চলতে থাকে। কখনো একটি অবস্থার উপর স্থির থাকে না, আবার কখনো একই অবস্থার উপর চলতে থাকে না। জীবনে পরিবর্তন হবেই। সুখ-দুঃখ আসবেই।
কিন্তু আমরা সবসময় সুখ চাই, সবসময় সচ্ছলতা চাই। আমরা চাই দরিদ্রতা আমাদের স্পর্শ না করুক, আমাদের জীবনে দুঃখ না আসুক। আসলে ইহকালীন জীবনে তা সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা এজন্য আলাদা একটা স্থান রেখেছেন। সেখানে শুধু শান্তি আর শান্তি। কষ্টের লেশমাত্র থাকবে না। সে স্থানের নাম হলো জান্নাত।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমরা সেই জান্নাত লাভের জন্য সচেষ্ট না। আমরা শুধু দুনিয়া নিয়ে ভাবি। দুনিয়াতে কীভাবে সুখী হওয়া যায়, অঢেল ধন-সম্পত্তির মালিক হওয়া যায়। আমরা এসব নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সেই মহামানব রাসূল (সা.) এর জীবনযাপন কেমন ছিল তা জানার চেষ্টা করি না। অথচ মুমিন-মুসলমান হিসেবে এ জানাটা বেশি দরকার।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন— হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিবার-পরিজন পরপর দুই বেলা জবের রুটি দ্বারা পরিতৃপ্ত হননি। এ অবস্থায়ই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকাল হয়েছে। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
অর্থাৎ একবেলা খেয়েছেন তো আরেক বেলা না খেয়ে থেকেছেন। এই ছিল বিশ্বনবীর ঘরের অবস্থা। আর আমরা! পাঁচ তলা বাড়িকে দশ তলা বানাতে পারলাম না এটা নিয়ে দুঃখিত হই, ১ টা গাড়ি আছে আরো ২ টা কিনতে পারলাম না এটা নিয়ে দুঃখিত হই!!
মহান আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরকে দুনিয়ার ধন সম্পদ এবং পার্থিব সমৃদ্ধির দিকে কামনার দৃষ্টি দিতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন— وَ لَا تَمُدَّنَّ عَیۡنَیۡکَ اِلٰی مَا مَتَّعۡنَا بِہٖۤ اَزۡوَاجًا مِّنۡہُمۡ زَہۡرَۃَ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۬ۙ لِنَفۡتِنَہُمۡ فِیۡہِ ؕ
অর্থাৎ, আমি তাদের বিভিন্ন প্রকার লোককে পরীক্ষা করার জন্যে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ ভোগ বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, আপনি সেই সব বস্তুর প্রতি তাকাবেন না। (সূরা ত্বহাঃ ১৩১)
আপাততঃ দৃষ্টিতে একথা রাসূল (সা.) কে বলা হলেও এর দ্বারা মূল উদ্দেশ্য আমরাই।
মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট এই দুনিয়ার কোনো মূল্য নেই। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন— “যদি আল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমান দুনিয়ার মূল্য থাকত, তাহলে তিনি কোন কাফিরকে তার (দুনিয়ার) এক ঢোক পানিও পান করাতেন না।” [তিরমিযি ২৩২০, ইবন মাজাহ ৪১১০]
হাদিস শরীফে আরো এসেছে— একদা রাসূল (সা.) একটি কানকাটা মৃত বকরির বাচ্চার পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছো, যে এটাকে এক দিরহামের বিনিময়ে গ্রহন করবে? তাঁরা বললেন, আমরা এটাকে কোনো কিছুর বিনিময়েই নিতে পছন্দ করবো না। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এটা তোমাদের কাছে যতটুকু নিকৃষ্ট, আল্লাহর কাছে দুনিয়া [এবং তার সম্পদ] এর চেয়েও অধিক নিকৃষ্ট। (মিশকাতুল মাসাবীহঃ ৪৯৩০)
দুনিয়ার ধন সম্পদ এবং সন্তানাদি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক পরিক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন—
وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّمَاۤ اَمۡوَالُکُمۡ وَ اَوۡلَادُکُمۡ فِتۡنَۃٌ ۙ وَّ اَنَّ اللّٰہَ عِنۡدَہٗۤ اَجۡرٌ عَظِیۡمٌ-
অর্থাৎ, “এবং তোমরা জেনে রাখো, তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের সন্তান শুধু এক পরিক্ষা এবং নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট রয়েছে মহাপুরুস্কার” (আল আনফালঃ ২৮)
মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে বিভিন্নভাবে পরিক্ষা করে থাকেন। আল্লাহ তাআলা বলেন— “নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা, ধন-সম্পদের ক্ষতি ও প্রাণহানি এবং ফল-ফসলের ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করব। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।” (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৫৫)
এজন্য দুনিয়ার জীবনে দুঃখ কষ্ট আসাটা স্বাভাবিক। ধরেই নিতে হবে যে, জীবনে দুঃখ কষ্ট আসবেই। এক্ষেত্রে অবশ্যই ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তে রাজি খুশি থাকতে হবে। কেননা, এসব দুঃখ কষ্টের পরেই রয়েছে স্বস্তি। অপেক্ষা করছে জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামত।
রাসূল (সা.) বলেন— الدنيا سجن المؤمن وجنة الكافر
অর্থাৎ, দুনিয়া মু’মিনের জন্য জেলখানা আর কাফেরের জন্য জান্নাত। (মিশকাতুল মাসাবীহঃ ৪৯৩১)
সুতরাং মু’মিনদের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারন নেই।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।